পাবনা জেলা প্রতিনিধি :
চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের সমাজ গ্রামের বলচপুর ও মিয়াপাড়ার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। আর ওই খালের ওপর দুই যুগ আগে নির্মাণ করা হয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকার সেতু। অথচ সেতুটি এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। ২০০২ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হবার পরপরই বর্ষার পানির স্রোতে ভেসে যায় সেতুর দু’পাশের মাটি। ফলে দু’পাশের সড়কের সঙ্গে সেতুটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
গত ২২ বছরে সেতুটি এলাকার মানুষের কোনো কাজেই আসেনি। সেতুর রেলিং থেকে বালি, সুরকি খসে লোহার রড বেরিয়ে পড়েছে। আগে বর্ষাকালে এ এলাকার মানুষ মই লাগিয়ে কষ্টে পারাপার হলেও দু’পাশের মাটি দেবে যাওয়ায় মই বেয়েও সেতুতে ওঠানামা করা যায় না।
চাটমোহর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে ৬৫ ফিট দীর্ঘ এ সেতুটি নির্মিত হয়। তবে, কোন ঠিকাদার কত টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছেন তার কোনো তথ্য অফিসে নেই।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সেতুর নিচের খালটি এখন পানিশূন্য। সেতুর নিচ দিয়ে এবং পাশের ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে এ এলাকার মানুষ অতি কষ্টে চলাচল করছেন।
বলচপুরের জোনাব আলী সরদার জানান, আগে নৌকায় এ খাল পার হতাম আমরা। সমাজ গ্রামের আঠারো পাড়ার মানুষসহ পার্শ্ববর্তী গদাইরূপসি, বানিয়াবহু, সাতবাড়িয়া, চন্ডীপুর, ময়দানদিঘীসহ অন্তত সাত থেকে আটটি গ্রামের মানুষ এ রাস্তায় আসা-যাওয়া করে। আমাদের সুবিধার্থে প্রায় দুই যুগ পূর্বে এ সেতুটি নির্মিত হয়। নির্মাণের বছরই সেতুর দুই পাশের মাটি সরে যায়। সেই থেকে অদ্যাবধি কেউই আর সেতুর দুই পাশ মাটি দিয়ে ভরাট করেনি। আগে বর্ষাকালে সেতুর দুই পাশে মই লাগিয়ে ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ সেতুটি পারাপার হতো। কিন্তু ক্রমশই সেতু সংলগ্ন সড়কের মাটি সরে যাওয়ায় সেতু ও সড়কের দূরত্ব বেড়ে গেছে। সড়ক থেকে প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুর উপরিভাগ। ফলে এখন মই বেয়েও সেতু পারাপার হতে পারছেন না কেউই।
বলচপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস জানান, সেতুর এক পাশে গ্রাম আরেক পাশে কচুফুরী, মাগুড়া, চুঙার গাড়া, বোরামারাসহ পাঁচটি বিল রয়েছে। বিলের শেষে আবার অন্যান্য গ্রাম। আমাদের বিলপাড়ের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে সরকার প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ করে সেতুটি নির্মাণ করলেও নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর থেকেই সেতুর সুফল বঞ্চিত রয়েছি। সেতুর ওপার যেতে বর্ষাকালে আমাদের প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। শুকনো মৌসুমে সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করি। যেহেতু মানুষই এই সেতুর উপর উঠতে পারে না সেহেতু যানবাহন চলাচলের প্রশ্নই আসে না।
সেতুর পার্শ্ববর্তী বাড়ির গৃহবধূ আরজিনা খাতুন জানান, সরকারের টাকা খরচ হলেও সেতুটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। সেতুটির দিকে কারও নজর নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সুজন মাহমুদ জানান, রাস্তাটি নিচু হওয়ায় বর্ষাকালে ডুবে যায়। বিলের ঢেউয়ে বলচপুর, মিয়াপাড়ার বাড়িঘরগুলো পর্যন্ত ভেঙে যাচ্ছে। রাস্তাটি উঁচু করে দুই পাশে ব্লক দিয়ে গ্রাম দুটি রক্ষা করা প্রয়োজন। রাস্তাটি উঁচু হলে ভাঙ্গুড়া উপজেলার গদাই রুপসী থেকে এ রাস্তা দিয়ে বলচপুর, মিয়াপাড়া হয়ে সাতবাড়িয়া, ময়দানদিঘী পর্যন্ত যাতায়াত সহজ হবে। অত্র এলাকার মানুষের কল্যাণে সেতুটি অতি দ্রুত ব্যবহার উপযোগী করা প্রয়োজন।
নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরজাহান বেগম মুক্তি জানান, এলাকার মানুষের প্রয়োজন আছে বলেই সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণের পর থেকেই সেতুটি ব্যবহার উপযোগী না থাকায় মানুষ আগে যেমন কষ্ট করেছেন এখনো তেমনি কষ্ট করে খালটি পার হচ্ছেন। সেতুটি এবং সেতু সংলগ্ন রাস্তা সংস্কার করে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করলে এ এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, ২০০২ সালে প্রায় ৬৫ ফিট দীর্ঘ এবং ৮ ফিট প্রশস্ত ফুটওভার সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ ব্যয় সংক্রান্ত কোনো তথ্য অফিসে সংরক্ষিত নাই। এলাকার লোকজনের চলাচলের সুবিধার্থে তখন সড়কের শেষ প্রান্ত থেকে প্রায় ৫শ মিটার দূরে খালের উপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এখন যে রাস্তাটি দৃশ্যমান আছে তা উঁচু করে দুই পাশ ব্লক দিয়ে সংরক্ষণ করলে তবেই সেতুটি কার্যকর করা যাবে, কিন্তু এটি অনেক ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। আপাতত এ ব্যাপারে কোনো প্রস্তাবনা পাঠানো নেই।