নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, নির্বাচন ছাড়া দেশে সরকার বদল হবে না। সরকারের পরিবর্তন চাইলে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। আমরা সেটাই মনে করি। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে মার্কিন প্রতিনিধি দল আসবে কিনা আমরা জানি না। সেটা তাদের বিষয়। তবে সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে জন্য আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।
নির্বাচনে সহিংসতার কোনো আশঙ্কা রয়েছে কি না প্রতিনিধিদলের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভোটের সময় দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে, তাই সহিংসতা হবে না বলে প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এর আগে অনেক সহিংসতা দেখেছি, প্রধানমন্ত্রীকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা করেছে। এখন দেশে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সুবাতাস বইছে। সহিংসতা প্রতিরোধ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী সক্ষম। নির্বাচন কমিশন বহুদিন ধরে নির্বাচন করে আসছে। এদেশের মানুষ নির্বাচনকে উৎসব মনে করে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও চান, দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।
মার্কিন প্রতিনিধিদলকে তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের গণমাধ্যম মুক্ত, তাদের কণ্ঠ রোধ করা হয় না। কাজেই এখানে ভোট চুরি করে কেউ পার পাবে না। সবকিছু নিয়েই তারা এটা চান, দেশে একটু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক।
কোনো প্রার্থী বিশেষ করে বিরোধীদল যদি নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করে তাহলে সরকার কী করবে, এমন প্রশ্ন করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। দেশে পুলিশ প্রশাসন সক্রিয়, ৯৯৯ নম্বর সক্রিয়। নির্বাচন ছাড়া, ক্ষমতা হস্তান্তরের সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছি যে, আমাদের দেশের পুলিশ জানে কীভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমাদের এ বাহিনীর পাঁচ হাজারের বেশি নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। নির্বাচনে পুলিশের পাশাপাশি আনসার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি বিজিবি, কোস্টগার্ড এবং প্রয়োজনের তাগিদে সেনা সদস্যরাও কাজ করবেন।
বারবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন প্রতিনিধি দল আসছে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা সবাইকে স্বাগত জানাই।
সরকার সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কি না পর্যবেক্ষক দলের এ প্রশ্নে তাদের কী জানানো হয়েছে? জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা বলেছি অবশ্যই পারব। তবে কোনো অভিযোগের বিষয়ে কথা হয়নি। এমনকি তারা নিজেদের পর্যবেক্ষণের ব্যাপারেও কিছুই জানাননি। পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ফুটবলের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি এ ব্যাপারে প্রশংসা করেছে বলেও জানান তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, সেক্ষেত্রে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমি মনে করি নির্বাচনে বিএনপি আসবে। বাংলাদেশে সরকার বদল করতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে। নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে সরকার বদলের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনে তাদের আসতে হবে, আমরা সেটাই মনে করি। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো সুযোগ নাই। এমন আলোচনা সংবিধানের বাইরে গিয়ে সম্ভব নয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৯ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধি দল আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তারা জানতে চেয়েছেন, নির্বাচনে ভায়োলেন্স হবে কিনা। প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারবো কিনা। প্রার্থীরা তাদের প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন কিনা। আমরা বলেছি, নির্বাচন আমাদের দেশে একটি উৎসবের মতো। এখানে সবাই সবার মতো প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেন। আমাদের দেশের মানুষ শান্তি চায়। আমাদের যেসব বাহিনী আছে, তারা ওয়েল ট্রেইন্ড, ওয়েল ইনফরমড থাকেন। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা পাঁচ হাজার ৩০০ নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি হলো, একটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন করা। এ জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখানে কোনও ভায়োলেন্স হবে না। আমাদের গণমাধ্যম ফ্রি। তারা স্বাধীনভাবে এখানে কাজ করতে পারে। কেউ কারচুপি করে এখানে পার পাবে না।
এর আগে দুপুর ১টার ৩৫ মিনিটে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়। মার্কিন প্রাক-নির্বাচন বিষয়ক পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদলের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) প্রতিনিধি বনি গ্লিক, জামিল জাফের, জোহানা কাউ ও কার্ল রিক এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) মারিয়া চিন বিনতি আব্দুল্লাহ, মনপ্রিত সিং আনন্দ ও ক্রিগ হলস্টেড।
দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উপস্থিত হয় প্রতিনিধিদল। পাঁচ মিনিট পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সভাকক্ষে প্রবেশ করেন তারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি যাচাই করতে গত ৭ অক্টোবর ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সাত সদস্য।
আইআরআই ও এনডিআইয়ের হয়ে যৌথভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা মিশন পরিচালনা করবেন তারা। সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং তাদের সহায়তাকারীদের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করার কথা রয়েছে।
দলটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারি সংস্থা, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, নারী সমাজ, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং ঢাকার বিদেশি মিশনের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলছে।