নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খুনি শেখ হাসিনার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবাই মায়াকান্না করছে। ভারত তাদের নিজস্ব স্বার্থ শেখ হাসিনাকে দিয়ে রক্ষা করতে চায়। এজন্য তারা কুমিরের কান্না, কাঁদছে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের দেখতে গিয়ে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ওরা এতোদূর গেছে যে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির পতাকা ছিঁড়েছে। এটা ভয়ংকর রকমের আন্তর্জাতিক গুরুতর অপরাধ। কিন্তু তারা একবারও চিন্তা করেনি যে শেখ হাসিনা কি নিষ্ঠুরতা করেছে, কি নির্দয়তা করেছে। কি হিংসাশ্রয়ী আচরণ করেছে তার নিজ দেশের মানুষের উপর।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে বলে পার্শ্ববর্তী দেশের মিডিয়া থেকে শুরু করে সবাই অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভারতের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, হিংস্র ঘাতক ও রক্ত পিপাসুরা ওই দেশে বাস করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়িঘর পোড়ানো হচ্ছে মিথ্যার বেড়াজালে। তারা হিংসা-প্রতিহিংসার জ্বালায় প্রতিনিয়ত পুড়ছে। তাদের কাছে বাংলাদেশের মানুষের কোনো মূল্য নেই। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় তারা শেখ হাসিনাকে দিয়ে নানারকম ষড়যন্ত্র করছে। হাইকমিশনে হামলা করে তারা শেখ হাসিনার জ্বালা মেটাচ্ছেন।
শেখ হাসিনাকে আগলে রাখতে গিয়ে ভারত রক্তপাত করেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, হাসপাতালে না আসলে এটা বোঝা যায় না। যারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে, তাদের এসব দেখা উচিত।
শেখ হাসিনার বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। তাকে যে রক্ষা করতে চাইবে, তাদেরও ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হবে। কোনো হুমকি-ধমকি দিয়ে এই বিচার থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটা রক্ত পিপাসু নীতির ওপর ভিত্তি করে ক্ষমতাকে আঁকড়ে রেখেছিলেন। আজকে যারা সেই পলাতক প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয় দিয়েছেন এবং সেখান থেকে নানান উস্কানিমূলক কথা, অপপ্রচার, অপতথ্য বিতরণ করছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, একবার বাংলাদেশে দেখেন, আন্দোলনের চারমাস অতিক্রমের পরেও এই আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার কি করুন ভয়াবহ এবং নৃশংস অবস্থা। আতদের ওপর কী পাশবিকতা চালানো হয়েছে তার দৃষ্টান্ত আপনারা দেখতে পাবেন। কারো মুখ ছিড়ে গেছে। কারো দুই হাত অদৃশ্য হয়ে গেছে। কারো চোখের কর্নিয়া বিদ্ধ হয়েছে শর্টগানের গুলিতে। কারো আবার পা চলে গেছে। জীবন যেনো তাদের কাছে একটা অভিশাপ হয়ে নেমে এসেছে। আমাদের চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা করে পৃথিবীতে বসবাসের উপযোগী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। শেখ হাসিনা তাদের চেহারার মধ্যে যে চিত্র একে দিয়েছে এই পাপের পরিনতি কি হতে পারে? কি বিচার হতে পারে সেটা যারা প্রত্যক্ষ করেছেন তারা বুঝতে পারবেন।
রিজভী আরও বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার যে পতাকা, সেই পতাকা তারা ছিড়ে ফেলেছে। কূটনৈতিক নেতাদের গায়ে হাত তুলেছে, যা ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক গুরুতর অপরাধ, সেই অপরাধ তারা করেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে বার্ন ইউনিটে যে দৃশ্য দেখলাম এই দৃশ্য বর্ণনা করা যায় না। আন্দোলনের সময় আমি কারাগারে ছিলাম। বের হয়ে অনেক হাসপাতালে গিয়েছি, কিন্তু এত বর্বরতা এত মর্মান্তিক বুকফাটা কান্না বেরিয়ে আসে এই দৃশ্য দেখলে।
তিনি বলেন, শুধু শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার অপকর্মের কারণে ইসকন থেকে বিতাড়িত চিন্ময়কে সরকার গ্রেপ্তার করলে ভারতের দিল্লি থেকে শুরু করে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে পর্যন্ত কান্নার রোল পড়ে গেছে। এভাবে চলতে পারে না। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র, সার্বভৌম রাষ্ট্র। রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশ এই বাংলাদেশকে কেউ মাথা নত করাতে পারবে না। এই বাংলাদেশকে ভয় দেখিয়ে চোখ রাঙিয়ে নতজানু করানো যাবে না। এই বাংলাদেশে অপরাধীদের বিচার হবে যারা আমাদের ভাইদেরকে পঙ্গু করেছে, যারা অপরাধ করেছে মন্ত্রী থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের অপরাধীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুন, আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা আশরাফ উদ্দীন বকুল, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদল নেতা ডা. আওয়াল প্রমুখ।