মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

শাহজাদপুর-যশোর মহাসড়কে ১০৮ টি বাঁক যেন মৃত্যুফাঁদ!

শামছুর রহমান শিশির, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০
শাহজাদপুর-যশোর মহাসড়কে ১০৮ টি বাঁক যেন মৃত্যুফাঁদ!
মহাসড়কের বাঁক

সিরাজগঞ্জ-পাবনা-যশোর মহাসড়কের ১০৮টি বাঁক যাত্রীদের জন্য পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে! এ মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত শত শত পার্শ্ব সড়কগুলোতে নেই গতিরোধক বা সতর্ককরণ ব্যবস্থা! আবার অনেক স্থানে মহাসড়কের দুইপাশে ও মাঝখানে সাদা বর্ডার উঠে যাওয়ায় রাতের বেলায় যানবাহন চালাতে চালকদের পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়।

এ কারণে অদক্ষ চালকেরা রাতের বেলায় দ্রুতগতিতে যানবাহন চালাতে গিয়ে হরহামেশাই সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। এতে ওই মহাসড়কে চলাচলকারী উত্তরাঞ্চলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অসংখ্য যাত্রীর তরতাজা প্রাণ ঝরে পড়ছে অকালে। সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পঙ্গুত্ববরণ করে মানবেতর দিনযাপন করছেন অনেকেই।

এছাড়া এ মহাসড়কে অহরহ সগর্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেস বিহীন শতশত নছিমন-করিমন ও সিএনজি টেম্পু। দেখার কেউ নেই। ফলে এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী লাখ লাখ যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল ও মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। ওই মহাসড়কের অনেক স্থানে দুইপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে মাছবাজার, খড়, ইটসহ বিভিন্ন পন্যের রমরমা ব্যবসা।

এ মহাসড়কের কিছু স্থানে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘন্টায় ৫০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বাস্তবে ঘন্টায় ৬০, ৬৫, ৭০, ৮০ কিলোমিটার এমনকি ১১০-১২০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচল করায় হরহামেশাই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।

বিজ্ঞমহলের মতে, সিরাজগঞ্জ-পাবনা-যশোর মহাসড়কের ১০৮ টি বাঁকের আগে সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, মহাসড়কে ওঠার আগে পাশর্^ সড়কগুলোতে স্পীডবেকার বা গতিরোধক স্থাপন বাধ্যতামূলক করা, যেসব স্থানে সাদা ডিভাইডার (বর্ডার) নেই অবিলম্বে সেসব স্থানে ডিভাইডার দেওয়া, ফিটনেস বিহীন অবৈধ নসিমন-করিমন ও সিএনজি টেম্পু ও যান চলাচলের গতিবিধির ওপর নিয়মিত তদারকি করা হলে সড়ক দুর্ঘটনার হার রেকর্ড পরিমানে হৃাস পাবে, কমে যাবে প্রাণহাণী ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা।

সিরাজগঞ্জ-পাবনা-যশোর মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালক ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ জোড়া বীজ পার হবার পর ১টি, গাড়াদহ পুরান বাজার পাবার আগে পরে ২টি, আলিফ সিএনজি ষ্টেশান সংলগ্ন কালিমন্দিরের সামনে তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ ১টি, বিসিক বাসষ্ট্যান্ড ও পাড়কোলা বাজারের মাঝামাঝি এলাকায় ১টি, বিসিক বাসষ্ট্যান্ড পাবার একটু পরে ১টি বাঁক রয়েছে।

 

নুকালী ব্রিজটি মহাসড়কের তুলনায় অপেক্ষাকৃত অনেক উঁচু ও সরু হওয়ায় এখানে মাঝে মাঝেই ঘটে নানা দুর্ঘটনা। সাঁথিয়া উপজেলার সরিষা সেতু পাবার একটু আগে তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ ১টি, বেড়া থেকে প্রায় ৫’শ মিটার পরে ১টি, চাকলা নামক স্থানে বড় সেতুর আগে ও পরে তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ ২টি, বেঙ্গলমিট পার হবার ৫’শ মিটার সামনে ১টি, পাবনার কাশিনাথপুর পাবার একটু আগে ও পরে ২টি, কাশিনাথপুর সেতু পার হবার পরে ১টি, এর আরেকটু সামনে রয়েছে ১টি তীব্র ও ২টি মাঝারি ধরনের বাঁক, চব্বিশ মাইল পাবার আগে আঁকাবাঁকা ২টি ও পরে রয়েছে তীব্র ঝূঁকিপূর্ণ ১টি বাঁক। চরগোবিন্দ বাজার পাবার আগে তীব্র ১টি ও পরে রয়েছে তীব্র ঝূঁকিপূর্ণ ২টি বাঁক।

হাজী আবুল কালাম পার্শ্ব সড়ক সংলগ্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ১টি, ইএম কলেজ পার হবার পর ১টি, চিনাখরা বাজার পার হবার পর তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ আরও ১টি, ‘রাজশাহী ১৩৬ কি.মি.’ ফলকের আগে ও পরে রয়েছে ২টি, বনগ্রাম বাজার এলাকায় রয়েছে ২টি, হাটখোলা বাজার পাবার আগে ও পরে তীব্র ২টি, ‘পাবনা ২৫ কি.মি. ফলকের আগে ও পরে ২টি, মাধপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় ১টি মাধপুর বাজার পার হবার পর রয়েছে আরও ১টি বাঁক। তেলকুপি এলাকার আগে ও পরে রয়েছে ২টি বাঁক। সিংগা বাজার জামে মসজিদ এলাকায় রয়েছে ১টি বাঁক।

 

এর ৭/৮’শ মিটার সামনে আঁকাবাঁকা ২টি বাঁক রয়েছে। কাছারপুর এলাকায় ১টি, ‘চাপাইনবাবগঞ্জ ১৭২ কি.মি.’ ফলক সংলগ্ন এলাকায় ২টি, আরেকটু সামনে ব্রাক সিরিজ এন্টারপ্রাইজের সামনে আরও ১টি পুষ্পপাড়া বাজার এলাকার পরে পরপর ২টি, পাবনার জালালপুর এলাকা পাবার আগে ১টি, রাজাপুর এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ১টি। পাবনা পৌরসভা এলাকায় প্রবেশ স্থানের একটু পরে রয়েছে ১টি বাঁক। এখানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্ব সড়ক ও যত্রতত্র যানবাহন মহাসড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে যাত্রী ও মালামাল উঠা-নামা করানোয় যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ‘চাপাই ১৫৮কি.মি.’ ফলকের আগে রয়েছে আরও ১টি বাঁক।

সিংগা বাজার জামে মসজিদ এলাকায় রয়েছে আরও ১টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। গাছপাড়া এলাকার অনেক স্থানে সাদা ডিভাইডার মুছে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে ঝূঁকি ক্রমশঃ বাড়ছে। এ এলাকায় রয়েছে বেশ কটি পার্শ্ব সড়ক। এ স্থান দিয়ে চলছে ইজিবাইক। মাঝে মধ্যে মুছে গেছে ওই সড়ক-মহাসড়কের সাদা ডিভইডার চিহ্ন। ‘নাটোর ৫৫ কি.মি.’ ফলকের আগে ও পড়ে রয়েছে ২টি বাঁক। মালিগাছা বাজার এলাকায় ১টি ও মজিদপুর দাখিল মাদরাসা পাবার আগে রয়েছে ১টি বাঁক। টেবুনিয়া বাজার এলাকায় যত্রতত্র যানবাহন পার্কিং করায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। টেবুনিয়া হাটিকালচার সেন্টার পাড় হয়ে আঁকাবাঁকা ঝুঁকিপূর্ণ ৩টি বাঁক রয়েছে। ইছামতী ফিলিং স্টেশনের আগে ১টি ও ফিসারিজ প্রজেক্ট পাবার আগে ঝুঁকিপূর্ণ ১টি ও ‘নাটোর ৫১ কি.মিঃ.’ ফলকের আগে তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ আরও ১টি বাঁক রয়েছে।

 

আরও পড়ুন : বেহাল হালুয়াঘাট ধারা বাজার-বাবুর বাজার সড়ক

 

ঈশ্বরদী কাইলক্যাপুর এলাকায় ১টি, মেসার্স আনোয়ারা স’মিল এলাকায় ১টি, গ্রামীণ শক্তি দাশুরিয়া পাবার আগে রয়েছে বিপদজনক ৩টি বাঁক। দাশুরিয়া মোড়ে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নাটোরগামী সড়ক। ‘যশোর ১২৬ কি.মি.’ ফলকের আগে ও পরে রয়েছে ২টি বাঁক। পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত লালন শাহ সেতু পার হয়ে ‘কুষ্টিয়া ২৩ মিটারফলক’ পাড় হবার পর ১টি, ভেড়ামারা পাওয়ার হাউজ স্ট্যান্ড পাবার আগে দীর্ঘ ১টি, বারোমাইল এলাকায় ১টি, ‘কুষ্টিয়া ১৫ কি.মি.’ ফলকের আগে রয়েছে আরও ১টি বাঁক।

ওই এলাকায় নির্মিত সড়কটি নির্মাণের ১ বছর পরই অসংখ্য খানাখন্দ ও পিচপাথর উঠে ছোটবড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় ১৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে লাগছে ৩০-৪০ মিনিট! ‘কুষ্টিয়া ১৪ কি.মি.’ ফলকের আগে রয়েছে তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ আরও ১টি বাঁক। বোয়ালমারী সেন্টার এলাকায় ১টি, কদমতলা পাবার আগে একটি ফিলিং স্টেশান এলাকায় ১টি, ‘যশোর ৯৯ কি.মি.’ ফলক এলাকায় অত্যন্ত বিপদজনক ১টি বাঁক রয়েছে। এসব বাঁকে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি অনেক বেশী। এসব স্থানে সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৫০ কি.মি. সতর্কবাণী দেওয়া থাকলেও চালকেরা তাদের ইচ্ছেমতো গতিতে যানবাহন চালনা করছে। চৌড়হাস মোড় থেকে রাজবাড়ী অভিমূখে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে।

 

এখানে প্রায়শই যানজটের কবলে পড়ছে যাত্রীসাধারণ। বটতৈল বাজার এলাকায় ১টি, অরচার্ড কোচিং সেন্টারের সামনে রয়েছে তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ ১টি বাঁক। এ স্থান থেকে ভাদালিয়া বাজার পাবার আগে ৩টি ও পরে রয়েছে ১টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ ফটক সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১টি সরু সেতু। ওই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কের একটু পরে রয়েছে ১টি বাঁক, মধুপুর এলাকায় ১টি, শেখপাড়া এলাকায় ১টি তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, এর কিছুদুর পর রয়েছে ১টি বাঁক, গাড়াগঞ্জ এলাকায় বিদ্যুতের সাব- স্টেশনের আগে রয়েছে ১টি ঝুঁকিপূর্ণ সরু সেতু। ‘ঝিনাইদহ ২ কি.মি.’ ফলক এলাকায় রয়েছে ১টি সরু সেতু।

আরাপপুর এলাকা পার হয়ে ভূটিয়ারগাতী এলাকায় রয়েছে ১টি, হামদাহ এলাকার পর রয়েছে ২টি বিপদজনক বাঁক, বিষয়খালী বাজার পাবার আগে ২টি, একতা রাইস মিল এলাকায় রয়েছে ১টি, ‘যশোর ৩৫ কিঃমিঃ ফলক’ এলাকায় ১টি,কালিগঞ্জ বাজার পাবার প্রায় তিন কিলোমিটার আগে ১টি, কিছুদুর পর আরও ১টি এবং ভাইভাই চিড়ামিল পাবার আগে রয়েছে ১টি তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। কালীগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড সেতুর পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে ১টি বাঁক। কালীগঞ্জ থেকে যশোর সেনানিবাস স্টেশন এলাকা পর্যন্ত সড়কটি অপেক্ষাকৃত বেশ চাপা।

সড়কের দুইপার্শ্বে পুরাতন বহু বড় বড় গাছ থাকায় সড়ক-মহাসড়কের এ অংশ বর্ধিত করা সম্ভবপর হচ্ছে না। এতে ওই স্থান দিয়ে দ্রুতগামী যানবাহন দ্রুত গতিতে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পতিত হচ্ছে। আলহাজ্ব আমজাদ আলী ফিলিং স্টেশান পাবার আগে রয়েছে ১টি,বারোবাজার পার হয়ে ২ কিলোমিটার পর ১টি, বারীনগর বাজার পাবার আগে রয়েছে ১টি, চুড়ামনকাঠি বাজার পাবার আগে ও পরে রয়েছে ২টি, সানতলা এলাকায় ১টি এবং যশোর ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশানের সামনে রয়েছে আরও ১টি তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক।

 

সিরাজগঞ্জ-পাবনা-যশোর মহাসড়কের এসব মৃত্যুফাঁদ ছাড়াও বড়বড় বাসষ্ট্যান্ড ছাড়াও মিনি বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় যেখানে সেখানে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস,ট্রাক, কাটা মাইক্রো, সিএনজি টেম্পু, অবৈধ ফিটনেস বিহীন নছিমন-করিমন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এছাড়া এসব বাসষ্ট্যান্ড ছাড়াও যেখানে সেখানে হঠাৎ করেই মহাসড়কের সাথে সংযোগ সড়ক থেকে মহাসড়কে দ্রুতগতিতে যানবাহন ওঠানামা করায় মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনা আশংকাজন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ওই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দ্রুতগামী কোচসহ সকল বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল ব্যহত হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রী সাধারণকে।

 

জানা গেছে, এ মহাসড়কের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ মহাসড়কের চলাচলকারী শতশত অবৈধ লছিমন-করিমন, ভটভটি, হিউম্যান হলার, কাটা-মাইক্রো, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের কোনরূপ বিআরটিএ’র রেজিষ্ট্রেশান, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ইনস্যুরেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই নিয়মিত চলাচল করছে। এ সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে গায়ের জোরে ইচ্ছেমতো যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখায় ঝুঁকি নিয়ে নিত্যদিন লাখ লাখ যাত্রীদের চলাচল ও মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: