গত ২০ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী থেকে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার আমাইকোলা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘মুজিব বাঁধ’ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধ ও সড়কের দু’পাশের বিভিন্ন স্থানে মাটি, ইট, খোয়া, পাথর ও সিসি ব্লক ধ্বসে বড় বড় খানা খন্দের সৃষ্টি হওয়ায় বাঁধের ওপর দিয়ে ঝূঁকি নিয়ে এলাকাবাসীকে চলাচল করতে হচ্ছে।
ফলে লাখো মানুষের চলাচলে ও মালামাল পরিবহনে নিত্যদিন সীমাহীন দুর্ভোগ-দুর্গতি পোহাতে হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। নেই জনভোগান্তি লাঘবেরও কেউ!
সোমবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শনকালে নানা আক্ষেপ প্রকাশ করে এলাকাবাসী জানান, বাঁধের ওপরের সড়কের ইট-পাথর ধ্বসে বিভিন্ন স্থান এতটাই সংকুচিত হয়েছে যে ওইসব স্থান দিয়ে ঝূঁকি নিয়ে রিকশাভ্যান চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। মাত্র ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ ও সড়কে দশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ঘন্টা পার করতে হচ্ছে।
ঝূঁকিপূর্ণ এ সড়কের ওপর দিয়ে বাঘাবাড়ী, রামখাড়ুয়া, চয়রা, বেড়া, মোয়াকোলা, আহম্মদপুর (ডোমবাড়িয়া), করশালিকা, আন্ধারমানিক, ভূলবাকুটিয়া, কুলিয়ারচর, ধুনাইল, বাগধুনাইলসহ পাশর্^বর্তী বিভিন্ন গ্রামের লাখো আমজনতার চলাচল, দুগ্ধ ও কৃষিপন্যসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন : শাহজাদপুরে ট্যাংকলরি শ্রমিককে মারপিটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ
ঝূঁকিপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে এলাকাবাসী ও শত শত স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচল, ধান, চাল, পাট, সরিষা, দুধের ক্যান, সার, জ্বালানী তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা দ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল ও কৃষিপণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। সংস্কারের অভাবে কৃষিখাতের অগ্রগতির অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ বাঁধের ওপর নির্মিত সড়কটি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাধীনতার পরে তৎকালীর সরকার পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের (আইআরডি) আওতায় এ বাঁধ নিমার্ণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে এর নির্মাণকাজ শুরু করে যা ১৯৮০ সালে দিকে শেষ হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বাঁধের নামকরণ করা হয় ‘মুজিব বাঁধ’।
এর আগে এ অঞ্চলের মানুষ বর্ষাকালে নৌকাযোগে ও শুস্ক মৌসুমে জমির ওপর দিয়ে পায়ে হেটে যাতায়াত করত। বাঁধটি নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয় । এ সড়কটি নির্মাণ করে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলাকে বন্যার আওতামূক্ত করা হয়। ফলে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার কৃষকেরা সারা বছরে বহু ফসল উৎপাদন করায় কৃষিখাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটে।
সর্বশেষ গত ২০০০ সালে এ বাঁধের সংস্কার কাজ ও পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়। এতে বাঁধটির স্থায়িত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটায় জনভোগান্তির পরিসমাপ্তি ঘটে । এরপর দীর্ঘ ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও বাঁধের সংস্কার কাজ না করায় খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় এটি চলাচলের অযোগ্য ও ঝূঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে রূপবাটি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সিকদার বলেন, দুগ্ধ, কৃষি ও শিল্পপ্রধান এ এলাকার মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহনের একমাত্র ভরসা বাঁধের এ সড়ক। জনগুরুত্বপূর্ণ বাঁধের এ সড়কটি স্বল্প সময়ে সংস্কার অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল হামিদ জানান, এ বছরেই ২১ কোটি টাকা ব্যায়ে মুজিব বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু হবে।