রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ অপরাহ্ন

লক্ষ্মীপুরে ধসে পড়েছে ব্রিজ, দুর্ভোগে ৬ গ্রামের মানুষ

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪
লক্ষ্মীপুরে ধসে পড়েছে ব্রিজ, দুর্ভোগে ৬ গ্রামের মানুষ

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি : 

লক্ষ্মীপুরে চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সামনে রহমতখালি খালের ওপর অবস্থিত সেতুটি দ্বিখন্ডিত হয়ে ভেঙে পড়েছে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রম। লে কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত এবং ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচলকৃত ছয় গ্রামের প্রায় লাখো মানুষের চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সড়ক চলাচলকারী লক্ষাধিক মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকার কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগও নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এদিকে বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে শিশু শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষদেরকে ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা সেতু দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যে চলাচলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বেইলি সেতু স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন কলেজ শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। এর আগে রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেলে হঠাৎ দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়ে চন্দ্রগঞ্জ-চরশাহী সড়কে কলেজ গেটের সামনের সেতুটি।

জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় ওই স্থানে ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তবনা পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকরামুল হক।

স্থানীয় বাসিন্দা জাকির আলম, মো. জুয়েল ও শাহ আলম জানান, সেতুটি প্রায় ১৯ মিটার লম্বা। প্রায় ৪০ বছর আগে নির্মিত সেতুটি অনেকটাই নড়বড়ে ছিল। কয়েক বছর আগেই এর উত্তরাংশের মাটিতে ধস দেখা দেয়। তবে চলাচল করা যেত। সাম্প্রতিক বন্যায় খালে প্রচণ্ড স্রোত ছিল। তীব্র স্রোতে সেতুর পিলারের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। এতে দক্ষিণাংশেও মাটি সরে সেতুটি দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়েছে। এতে দক্ষিণাংশ সড়কের কিছু অংশসহ একটি দোকানঘর ও একটি গাছও ভেঙে পড়েছে। এখন যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ হয়ে আছে। সেতুটির উত্তর পাশে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, দক্ষিণ পাশে কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ও চন্দ্রগঞ্জ-চরশাহী সড়ক। এ সেতু দিয়ে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের শেখপুর, রাজাপুর, রামকৃষ্ণপুর এবং চরশাহী ইউনিয়ন হয়ে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী সড়কের সঙ্গে এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত ছিল। চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে শিশু শিক্ষার্থীরা ভাঙা সেতুর ওপর দিয়েই স্কুলে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন বয়সী মানুষও বাধ্য হয়ে চলাচল করে আসছে। যেকোনো সময় পুরো সেতু পানিতে পড়ে যেতে পারে। তখন সেতুর ওপর কেউ থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় রান্নাবান্না নিয়ে বিপাকে পড়েছে শতাধিক পরিবার।

কলেজ শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেন বলেন, সেতুটি ভেঙে খালে পড়ে আছে। এখন যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কলেজও বন্ধ করে দিয়েছে। কলেজে আসার জন্য নতুন একটি সেতু দরকার।

কলেজ শিক্ষক কামাল উদ্দিন ও আলতাফ হোসেন জানায়, কলেজের প্রবেশের জন্য সেতুটি একমাত্র মাধ্যম ছিল। চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৩টি গ্রামসহ চরশাহী ও দিঘলী ইউনিয়নের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। সেতুটির নিয়ে বারবার বলার পরও সংশ্লিষ্ট বিভাগ আমলে নেননি। সাধারণ শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে যেন দ্রুত সময়ে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আপাতত একটি বেইলি সেতু স্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ প্রিয়ব্রত চৌধুরী বলেন, পানির স্রোতে সেতুটি ভেঙে পড়েছে। ১১ নভেম্বর উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা ছিল। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় পরীক্ষার কার্যক্রম স্থগিত করতে হয়েছে। আমাদের কলেজে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। সেতুর কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। এতে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি বেইলি সেতু স্থাপনে দাবি জানাচ্ছি।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের লক্ষ্মীপুর শাখার ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) এস এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, সেতু ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকি এড়াতে আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্যাস সংযোগ আপাতত বিচ্ছিন্ন রেখেছি। এটি ঠিক করতে ১০-১৫ দিন সময় লাগতে পারে। অফিসের খরচেই তা ঠিক করে দেওয়া হবে। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কতজন গ্রাহক রয়েছেন তা বলতে পারেননি তিনি।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোস্তফা মিনহাজ বলেন, সেতুটি ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছি। একটি নতুন সেতু নির্মাণের জন্য আমরা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। এছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কোনো বরাদ্দ আমাদের নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া