সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর পশুর হাটে হাহাকার

রিপোর্টারের নাম
আপডেট : শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০২০
রাজধানীর পশুর হাটে হাহাকার
রাজধানীর হাটগুলোতে ক্রেতা আছে গরু নেই, সঙ্কায় এখন কোরবানীর গরু ক্রেতারা । ছবিটি আজ শুক্রবার শাহজানপুর থেকে তোলা

রাজধানীর পশুর হাটের পশু নেই। চলছে ক্রেতাদের হাহাকার। একমাত্র গাবতলী হাট ছাড়া নগরীর ১৭টি পশুর হাট প্রায় শূণ্য। হাটগুলোতে মাইকিং করে ক্রেতাদের শান্তনা দেয়ার চেষ্টা চলছে। বলা হচ্ছে ট্রাকে ট্রাকে পশু আসছে। সন্ধ্যার মধ্যেই সেগুলো পৌঁছে যাবে।

এই সঙ্কটে ক্রেতাদের ভরসার স্থল অনলাইন পশুর হাট। অনলাইনে চলছে দেদারছে বেচাবিক্রি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন বিভিন্ন মাধ্যম মিলে ইতোমধ্যে প্রায় ২৭ হাজার গরু ছাগল ও অন্যান্য কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।

অনলাইন থেকে ছবি দেখে কৃষকের বাড়িতে এসে বা খামারে এসে ক্রেতারা যে পরিমাণ গরু ক্রয় করেছেন, তার সংখ্যা হবে এর তিন থেকে চারগুণ। শুক্রবার (৩১ জুলাই) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর এক যৌথ অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

রাজধানীর ১৭টি পশুর হাটে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই বিক্রি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে রাত থেকেই কোরবানির পশু কমতে শুরু করে। মধ্যরাতের পর হাটগুলো একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। যারা ভেবে রেখেছিলেন সকালে হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কিনবেন, তারা হাটে গিয়ে বিপাকে পড়েন।

সকাল ৮টার পর হু হু করে বাকি পশুগুলো চড়া মূল্যে বিক্রি হয়ে যায়। সকালে রাজধানীর শনিরআখড়া, কমলাপুর, শাজাহানপুর ও আফতাবনগর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, গরুর চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। বেপারীরা ইচ্ছেমতো দাম হাঁকছেন। ক্রেতারা নিরুপায় হয়ে চড়া দামেই পশু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

শনিরআখড়া হাটে দেখা গেছে, একটা গরুর জন্য কমপক্ষে ২০জন ক্রেতা দরদাম করছেন। এই সুযোগে বৃহস্পতিবারেও যে গরুর দাম হাঁকা হয়েছিল ৭০ হাজার একই সাইজের গরু আজ দাম হাঁকা হচ্ছে ১ লাখ বা তারও বেশি।

আরও পড়ুন : ঢাকায় কোরবানির গরু এলো ট্রেনে চড়ে

পশুর হাটের এই সঙ্কটে অনেকে অনলাইনের শরনাপন্ন হন। একটার পর একটা অর্ডার করতে থাকেন। তবে ব্যাংক বন্ধ থাকায় ক্রেতাদেরকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে টাকা পেমেন্ট করতে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। অনেক ক্রেতা আবার বুকিং দিয়েই পছন্দের পশু পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, শুক্রবার ঢাকা উত্তর কর্পোরেশন এবং ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর আয়োজনে কোরবানি পশু বিক্রির অনলাইন প্লাটফর্ম ‘ডিজিটাল হাট’ ও সারাদেশে অনলাইনে গরু ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে এই অনলাইন সংবাদ সম্মেলন এর আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তথ্য উপস্থাপন করে জানানো হয়, সারাদেশে শুক্রবার (৩১ জুলাই) পর্যন্ত ২৭ হাজার কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। ডিজিটাল হাট, ডিজিটাল হাটের সাথে সম্পৃক্ত মার্চেন্ট ও ই-ক্যাব মেম্বারদের অনলাইনে বিক্রিত গরু, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৬হাজার ৮শ।

জেলাভিত্তিক সরকারী প্লাটফরম কমপক্ষে ৫ হাজার ৫শ গরু-ছাগল বিক্রির কথা জানা গিয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদী জেলা এগিয়ে রয়েছে। এই জেলায় সরকারী অনলাইন প্লাটফর্মে পশু বিক্রি হয়েছে ৫১৭টি। বাংলাদেশ ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশন এর সদস্যভূক্ত কোম্পানীর অনলাইন ফ্লাটফর্ম থেকে বিক্রিত পশু ৯ হাজার ৫শর কাছাকাছি।

বিচ্ছিন্ন অন্যান্য প্লাটফর্ম থেকে ৫ শতাধিক গরু বিক্রির ধারণা পাওয়া গিয়েছে। সরকারী প্লাটফরম ফুড ফর ন্যাশন ৪০০০ গরু বিক্রি ট্র্যাক করতে পেরেছে। এভাবে পুরো অনলাইন বাজারে প্রত্যক্ষ বিক্রিত পশুর সংখ্যা বের হয়ে আসছে। ধারণা করা হয় আরো লাখখানেক কোরবানির পরোক্ষভাবে এবারের বিভিন্নভাবে অনলাইন শপ থেকে বিক্রি করা হয়েছে। এবং অন্তত পাঁচলাখ গরু ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রদর্শিত হয়েছে।
ডিজিটাল হাট সম্পর্কে ডিএনসিসির মেয়র জনাব আতিকুল ইসলাম বলেন, এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সফল করতে গিয়ে ডিএনসিসি, আইসিটি ডিভিশন ই-ক্যাব, আইএসএসএল, ধানসিড়ি ও সাদিক এগ্রোর সম্মিলিত টিমকে রাতদিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। নানা ধরনের জটিল ইস্যু ছিল এগুলো তারা আন্তরিকতার সাথে সমাধান করেছে। ৪শ গরু স্লটারিং করার ব্যবস্থাপনা আমি নিজে তদারক করছি। তিনি ঈদের দিন স্লটারিং হাউজে গিয়ে স্বশরীরে পুরো ব্যাপারটা দেখভাল করব।

তিনি নগরবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানান, তারা যেন যেখানে সেখানে গরু জবাই না করেন এবং গরুর বর্জ্য অপসারণে সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুরো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঈদের ছুটির মধ্যে ১১ হাজার কর্মী তৎপর থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে মেয়র বলেন, আমাদের এই উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। গরু জবাই করে মাংস ৪ কেজির প্যাকেটে করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়ার এই প্রচেষ্টাকে প্রধানমন্ত্রী সাধুবাদ জানিয়েছেন।

মেয়র ডিজিটাল হাটের সাথে সম্পৃক্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, ই-ক্যাব, ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশন, দারাজ, নগদ, মাস্টারকার্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া