শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৮ অপরাহ্ন

রংপুরে সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে ৫০ হাজার মানুষ

রংপুর জেলা প্রতিনিধি
আপডেট : বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
রংপুরে সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে ৫০ হাজার মানুষ

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা সদর থেকে আলমবিদিতর ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে ঘাঘট নদ। এ নদের ওপর কোনো সেতু না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। তাদের দাবি সেখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক। সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

পথের দূরত্ব কমাতে আলমবিদিতর ইউনিয়নের পাইকান কুটিরঘাট এলাকায় ঘাঘট নদের ওপর গ্রামবাসীর উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে একটি বাঁশের সাঁকো। সেই কুটিরঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘাঘট নদ পার হচ্ছে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। একটি স্থায়ী ও টেকসই সেতুর অভাবে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। সেতু না থাকায় আলমবিদিতর ও বেতগাড়ী ইউনিয়ন থেকে বেতগাড়ীর হাট ও বড়াইবাড়ীর হাট হয়ে উপজেলা শহরে পৌঁছতে অতিরিক্ত ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হচ্ছে।

জানা গেছে, গঙ্গাচড়া উপজেলার ডাঙ্গী পাইকান, প্রামাণিক পাড়া ও ফুলবাড়ি চওড়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঘাঘট নদের কুটির ঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন।
প্রতি বছর বর্ষাকালে নিজেদের অর্থায়নে বাঁশের সাঁকো তৈরি করলেও যাতায়াতের ক্ষেত্রে অধিক চাপের কারণে সাঁকোটি দুই থেকে তিন মাসের বেশি স্থায়ী হয় না। ফলে বছরজুড়েই থাকে এ দুর্ভোগ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাদের চলার কোনো পথ নেই। এছাড়া, শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। ফলে লেখাপড়ায় পিছিয়ে আছে এ অঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এ এলাকার সঙ্গে অনেকে আত্মীয়তাও করছে না। সম্প্রতি ঠিক হয়ে যাওয়া একটি বিয়ে ভেঙে গেছে শুধু সেতু না থাকার কারণে, এ কথা জানিয়েছেন সেখানকার এক কৃষক।

রংপুর শহর কিংবা গঙ্গাচড়া উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙ্গী পাইকান, প্রামাণিক পাড়া, তুলসীর হাট, ফুলবাড়ীর চওড়া, মেছনিকুণ্ডা, সয়রাবাড়ী, বেতগাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষকে এই পথে যাতায়াত করতে হয়।

স্থানীয় সংগঠক শফিয়ার রহমান বলেন, দোকানের ভারী মালামাল কিংবা মোটরযান আরোহীরা বাধ্য হয়ে বেতগাড়ী ইউনিয়ন হয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে চলাচল করছে।

সেতু না হওয়ার কষ্টের কথা জানান মেছনিকুণ্ডা গ্রামের ওছমান আলী। তিনি বলেন, দ্যাশ (দেশ) স্বাধীনের পর অনেক কিছুই হইচে, খালি হামার অ্যাটে একখান পুল (সেতু) কায়ও করি দেইল না। বাঁশের পুল বারে বারে ভাঙি যায়, স্কুল-কলেজ যাইতে ছাওয়াগুলা ভয় পায়। এইভাবে আর কদ্দিন কষ্ট করা নাগবে আল্লায় জানে।

স্থানীয় মাদরাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থী আব্দুল মোতাল্লিব বলেন, খুব কষ্ট করে সাঁকোর ওপর দিয়ে নদী পারাপার হতে হয়। অনেক সময় ভয়ে বুক কাঁপে, যদি দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি এখানে সেতু হবে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

আলমবিদিতর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুর রশিদ জানান, ইউনিয়নের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার অন্তত পাঁচশ শিক্ষার্থী এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে নিয়মিত পারাপার হয়। এখানে সেতু নির্মাণের জন্য ৫৪ বছর ধরে অনেক জনপ্রতিনিধি ভোটের সময় আশ্বাস দিলেও নির্বাচিত হবার পর তেমন উদ্যোগ নেয়নি।

এ বিষয়ে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আখিনুর ইসলাম বলেন, তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানি ঘাঘট নদের নিচ দিয়ে প্রবাহের জন্য একটি সাইফন নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখান দিয়ে মানুষের চলাচলের জন্য একটি ফুট ব্রিজ নির্মাণ করা যেতে পারে। ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব আগে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফান্ড না থাকার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা প্রকৌশলী মজিদুল ইসলাম বলেন, চলাচলের জন্য আমাদের তৈরি করা রাস্তাটি নদীতে ধসে গেছে। এলজিইডির পক্ষ থেকে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা-যাচাইয়ে এর মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু যে জাগয়া দিয়ে সেতু নির্মাণের কথা ভাবা হচ্ছে, সেখান থেকে রাস্তার দূরত্ব অনেকখানি। এ কারণে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে, দ্রুত সেতু নির্মাণে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা। তিনি বলেন, অসংখ্য মানুষের ভোগান্তি লাঘবে একটি সেতু নির্মাণে সব ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সেতু নির্মাণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তার সবটাই নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া