নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি :
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন না করার ঘোষণা দিয়েছেন নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) একরামুল করিম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সূবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শিউলী একরাম বাজারে এক পথসভায় স্থানীয় ভোটাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এমন ঘোষণা দেন এমপি।
ওই বক্তব্য স্থানীয় অনেকেই মোবাইল ফোনে ধারণ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। সংসদ সদস্যের এ ঘোষণা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর একমাত্র ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা তিনবারের ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম।
জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের জের ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম সেলিমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করিয়েছেন বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন।
মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শিউলী একরাম বাজারে গতকাল বিকেলে পথসভায় বক্তব্য দেন একরামুল করিম চৌধুরী। স্থানীয় লোকজনের অনেকে মুঠোফোনে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘যে এলাকা থেকে ভোট কম দেবেন, সে এলাকায় আমি কোনো উন্নয়নে হাত দিব না। স্ব স্ব এলাকা। গিভ অ্যান্ড টেক। আমাকে দিবেন, আমি আপনাদের দিব। আমারে এমপি বানাইছেন, আমি তো বলছি, পাঁচ বছর ক্ষমতায় আছি, এখন আমার মনমতো উপজেলা চেয়ারম্যান যদি বানান, আমার মিডলম্যান (মাঝের ব্যক্তি) আমি আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম। …আমি আজ এখানে এসে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। পরে এখানের যেকোনো একটি দোকানে বসে আপনাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলব।’
সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর এমন বক্তব্য নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করেছেন তার ছেলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম।
এদিকে একরামুল করিম চৌধুরীর এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী, বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী। তিনি জানান, নির্বাচনে ভোটাররা যে প্রার্থীকে পছন্দ করবেন, তাকে ভোট দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার (একরামুল করিম চৌধুরী) মতো একজন ব্যক্তি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভোটারদের এলাকায় উন্নয়ন না করার হুমকি দেওয়া মোটেই সমীচীন নয়। তিনি এসব বক্তব্যের ভিডিওসহ নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে এ বিষয়ে খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বলেন, ‘নির্বাচনে ভোটাররা যে প্রার্থীকে পছন্দ করবেন, তাকে ভোট দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার (একরামুল করিম চৌধুরী) মতো একজন ব্যক্তি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভোটারদের এলাকায় উন্নয়ন না করার হুমকি-ধমকি দিয়েছেন, যা মোটেই সমীচীন নয়। শুধু উন্নয়ন না করার হুমকিই নয়, সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করে ভোটারদের আরও নানা হুমকি দিচ্ছেন। এসব হুমকির বক্তব্যের বিষয়ে ভিডিওসহ নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’
ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকির বিষয়ে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ভোটারদের উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কোনো বক্তব্য দেইনি। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের কোনো একটি অংশকে কাটাছেঁড়া করে এডিট করে কেউ তা উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করছে। তাছাড়া আমার ছেলেকে আমি নির্বাচনে প্রার্থী করাইনি। আমার ছেলে একজন ব্যবসায়ী। এলাকার জনগণ জোর করে তাকে প্রার্থী করিয়েছে। সে এমনিতেই জিতবে। ’
সংসদ সদস্য নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করার বিষয়ে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম জানান, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন পার হলেই কাউকে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে গণ্য করা হয়। এখনো সময় শেষ হয়নি। তার আগে সংসদ সদস্য তার পরিবারের সদস্য হিসেবে তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন। তবে সুবর্ণচরে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনের পর সংসদ সদস্যকে ছেলের পক্ষে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না।