নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গত ১ জুন থেকে গণপরিবহন সীমিত করার পাশাপাশি অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। রেলপথে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব হলেও সড়ক ও নৌপথে তা খুব একটা মানা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, আসন্ন ঈদুল আজহায় যাত্রীর চাপে বেসামাল হয়ে উঠতে পারে গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা। জনদুর্ভোগের পাশাপাশি যা বাড়িয়ে দেবে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি।
আসন্ন ঈদে মানুষকে কর্মস্থলে থাকতে পরামর্শ দিচ্ছে সরকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্মস্থলে অবস্থানের জন্য নির্দেশও দেয়া হয়েছে। ঈদের ছুটি তিনদিনের মধ্যেই সীমিত রাখার ঘোষণা এসেছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের মানুষ যেন ঈদে অন্য জেলায় ভ্রমণ করতে না পারে, সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে এত কিছুর পরও ঈদের সময় গণপরিবহন চালু রাখায় ঈদে মানুষের চলাচল ঠেকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৭ ট্রেন নিয়ে প্রস্তুত রেলওয়ে: স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৩৫০টির বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করত বাংলাদেশ রেলওয়ে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ট্রেনের সংখ্যা নামিয়ে আনা হয়েছে মাত্র ১৭টিতে। এসব ট্রেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হচ্ছে। রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, এখন যেভাবে ট্রেন পরিচালিত হচ্ছে, ঈদের সময়ও একই সংখ্যায় ও একইভাবে ট্রেন পরিচালিত হবে। বাড়তি কোনো ট্রেন যোগ হবে না। স্বাভাবিক সময়ে রেলওয়ে প্রতিদিন যত যাত্রী পরিবহন করত, বতর্মানে তারচেয়ে পরিবহন করা হচ্ছে কয়েক গুণ কম যাত্রী। ঈদের সময় যাত্রীর চাপ বাড়লে তা রেলপথে কোনোভাবেই সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।
যাত্রীর ‘চাহিদা অনুযায়ী’ চলবে বাস: মালিকদের দাবি, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন দেশে যত বাস চলত, বর্তমানে চলছে তার মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ। এমন অবস্থায় সামনের ঈদে কী পরিমাণ বাস চালানো যাবে, তা যাত্রীদের চাহিদার ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, তারা এবার বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করবে না। বর্তমান সময়ের মতো ঈদেও বাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হবে। যাত্রী ও চালকদের বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক মনে করেন, এবার ঈদে অন্যান্য বারের তুলনায় সব পথেই যাত্রীর সংখ্যা কম হবে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা হয়তো তুলনামূলক কম সংখ্যায় বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোয় বিপুলসংখ্যক কারখানা শ্রমিক কাজ করেন, যারা ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়ার চেষ্টা করতে পারেন। এ মানুষগুলোর একটা বড় অংশ যাবেন বাসে গাদাগাদি করে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস পরিচালনার ক্ষেত্রে এ চাপ সামাল দেয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী তোলার শঙ্কা: প্রতি বছর নৌপথে বাড়ি ফেরেন একটা বড় অংশের মানুষ। এবারো দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মূল ভরসা নৌপথ। বর্তমান করোনাকালেও লঞ্চ-স্টিমারে অতিরিক্ত যাত্রী তোলার অভিযোগ রয়েছে। আসন্ন ঈদে লঞ্চ মালিকদের এ প্রবণতা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আসন্ন ঈদে বাংলাদেশের গণপরিবহন ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীর চাপ সামাল দেয়া সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, এবার ঈদে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম থাকতে পারে। তবে যাত্রীর চাপ কম হলেও বাংলাদেশের গণপরিহন ব্যবস্থাপনায় তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াত করে দেয়ার সুযোগ হবে না। এজন্য ভ্রমণের সময় যাত্রীদেরই স্বাস্থ্য সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি মানুষ যেন সচেতন হয়, সে বিষয়ে সরকারি দপ্তরগুলোকে আরো কার্যকরী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।