নিজস্ব প্রতিবেদক :
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে এতিম ও পথশিশুদের নিয়ে মেট্রোরেলে ও ছাদখোলা বাসে আনন্দভ্রমণের আয়োজন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এ দিন একঝাঁক এতিম-সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে মেট্রোরেলে আগারগাঁও-উত্তরা উত্তর-আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণ করে। এর মধ্যে উত্তরা উত্তর স্টেশনে একটি কেকও কাটা হয়। পরে তারা ছাদখোলা বাসে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখে।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকাল ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশন থেকে শিশুদের নিয়ে এই যাত্রা শুরু। তেজগাঁও ও মিরপুরের দুটি এতিমখানা থেকে ৭০ জন শিশু এই আনন্দভ্রমণে অংশগ্রহণ করে।
মেট্রোরেলের ভেতরে শিশুরা ছিল আনন্দিত আর উত্তেজিত। তাদের পরনে ছিল লাল পোশাকের উপরে বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত সাদা টি-শার্ট ও মাথায় ছিল ক্যাপ। ট্রেনে বসে তারা জানালা দিয়ে অপার বিস্ময় নিয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করে।
দিয়াবাড়ী স্টেশনে পৌঁছার পর মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রের ভিডিও রুমে কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করে শিশুরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার এবং বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।
অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মারুফা বলেছে, টিভিতে মেট্রোরেলের উদ্বোধন দেখছি। মেট্রোতে ওঠার খুব ইচ্ছা ছিল। তখন সুযোগ হয়নি। আজ মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পেরে আমি ভীষণ খুশি।
আরেক শিক্ষার্থী সোহেল বলে, আজকে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। আমি মেট্রোরেলে উঠতে পেরেছি। এর পর আমরা অন্য জায়গায় ঘুরব। আমরা এখানে কেক কেটেছি।
মেট্রোরেলে ওঠার পর শিশুদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ দেখা গেছে। তারা গান গেয়ে, হৈ-হুল্লোড় করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। এ সময় তারা সংবাদকর্মীদের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করে শোনায়। তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
পুনরায় আগারগাঁও স্টেশনে আসার পর এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে বিআরটিসির ছাদখোলা দোতলা বাসে জাতীয় সংসদ ভবন, শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানস্থ স্বাধীনতা চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ভ্রমণ করানো হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আক্তার বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আমাদের এ আনন্দ আয়োজন। আপনারা জানেন যে, গত ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনে ছাদখোলা বাসে পথশিশুদের নিয়ে পদ্মা সেতু ভ্রমণে যাওয়া হয়েছিল। আজ এদেরকে নিয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণে এসেছি। তাদের কাছে বার্তা দিতে চাই, কীভাবে বাংলাদেশ দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে। সব স্বপ্নের বাস্তবায়ন হচ্ছে।
বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, সাফজয়ী মেয়েদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য আমরা একটি দ্বিতল বাসকে ছাদখোলা করেছিলাম। পরে আরেকটি বাসকেও ছাদখোলা করেছি। এখন দুটি বাসের একটি পদ্মা সেতু ভ্রমণের জন্য এবং আরেকটি ঢাকা শহরের ভেতরে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিশুদের জন্য আজ দুটি গাড়িই এখানে আনা হয়েছে।
মেট্রোরেলের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (উপ-সচিব) মৌসুমী হামিদ বলেন, আপনারা শুনেছেন, এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কেউ আগে মেট্রোরেলে ওঠার সুযোগ পায়নি। আজ তারা প্রথমবারের মতো মেট্রোতে উঠল। তারা ভীষণ খুশি। মেট্রোরেলের কর্মকর্তা হিসেবে তাদের সাথে থাকতে পেরে আমারও খুব ভালো লাগছে।
পরে মেট্রোরেলে করে আগারগাঁও স্টেশনে ফিরে শিশুদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে নেওয়া হয়। সেখানে শিশুরা বসে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খায়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, মেট্রোরেলে ভ্রমণের স্মৃতি শিশুদের মনে স্থায়ী হবে দীর্ঘ সময়। এ স্মৃতিকে ধারণ করেই তারাও একদিন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।