ফেনীর মুহুরী নদীর দু-পাড়ের ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার মধ্যে কয়েকশ বছরের পুরোনো ভূঞাররহাট নৌ-ঘাটে র্মিাণ করা হচ্ছে নতুন সেতু। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ ফুট দীর্ঘ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে বদলে যাবে এই অঞ্চলের চিত্র।
ওই নদীর ঘাট বন্ধ হওয়ায় তিন দশক ধরে ছিটকে পড়া দু-পাড়ের মানুষ দূরত্ব ঘুচিয়ে আত্মিক, সামাজিক ও অর্থনীতিক ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। এমনটি জানালেন নদীর দু-পাড়ের বিচ্ছিদে থাকা এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ফেনীর সীমান্তবর্তী ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, ফেনী সদর, সোনাগাজী উপজেলার বুক চিরে বয়ে চলেছে মুহুরী নদী। কালের পরিক্রমায় কয়েকশ বছর ধরে নদী কেন্দ্রিক এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা গড়ে ওঠলেও নদী পথে নেই নৌ-যোগাযোগ।
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মুহুরী নদীতে বাঁধ দিয়ে মুহুরী সেচ প্রকল্প চালু রয়েছে। এক সময় মুহুরীতে নৌকায় ফেনীর পূর্বাঞ্চলীয় মানুষের যাতায়াত হতো বেশি। রাস্তা-ঘাট ও সড়কের অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে নৌ-পথে কয়েক দশক ধরে যাত্রীর অভাবে নৌকায় চলাচল নেই। নদী পথ বন্ধ হওয়ায় জেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর মানুষের স্বাভাবিক যোগাযোগ বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
বিশেষ করে দুই উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত ভূঞারহাট খেয়াঘাট বন্ধ হওয়ায় বংশ-পরস্পরায় মুহুরী নদীর দু-পারের মানুষের মাঝে গড়ে ওঠা সামাজিক ও আর্থিক সম্পর্কে ছেদ ধরে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দু-পারের মানুষকে অর্থনীতিক, সামাজিক-ধর্মীয় সম্পর্কগুলো বজায় রাখতে ভোগান্তির শিকার হতে হতো।
মুহুরী নদীর পশ্চিম পাড়ের ফেনী সদর উপজেলার ভূঞারহাট পর্যন্ত এবং নদীর পূর্ব পাড়ে ছাগলনাইয়া উপজেলার কুহুমা-শান্তিরহাট পর্যন্ত কয়েক দশক পূর্ব থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মিত হলেও সেতুর অভাবে নদীর দু-পারের মানুষ বিচ্ছিন্ন ছিলেন।
একটি সেতুর অভাবে কার্যত মুহুরী নদীর দু-পারের দুইটি উপজেলার মানুষ ছিলেন যোজন-যোজন দুরত্বে। অর্থনীতিক ও সামাজিক গুরুত্ব, কয়েকশ বছর ধরে গড়ে ওঠা দু-পারের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের দুরত্ব ঘোচাতে বর্তমান সরকারের আমলে ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূঞারহাট ঘাটে মুহুরী নদীর ওপর ২৫০ ফুট দীর্ঘ ও ৩৩ ফুট প্রস্ত সেতু নিমার্ণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
সেতু ছাড়াও ১৮ ফুট প্রস্ত ও ১৪.১৮ কিলোমিটার সড়ক বর্ধিতকরণ ও পাকাকরণের কাজও চলছে একই সময়ে।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে নদীর পশ্চিম পাড় থেকে সেতুটির নিমার্ণ কাজ দেখতে গেলে যায়, নদীর একটি অংশে পিলার-ভীম তৈরি হয়েছে। এখনো নদীতে আরো দুইটি পিলার তৈরির জন্য নির্মাণ কাজ করছেন শ্রমিকেরা।
ওই সেতু দিয়ে ফেনী সদর উপজেলার মাষ্টারপাড়া, আলোকদিয়া, ভালুকিয়া, লস্করহাট, ভূঞারহাট এবং ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর কুহুমা, দক্ষিণ কুহুমা, শান্তিরহাট, দারেগারহাট, বল্লভপুর, ছাগলনাইয়াসহ তিন লক্ষাধিক মানুষের সরাসরি সহজেই যোগাযোগ স্থাপিত হবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ওই সেতুর মাধ্যমে দুই উপজেলা বিশেষ করে মুহুরী নদীর তীরবর্তী মানুষের অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হবে বলেও সুশীল সামজের অভিমত।
আরও পড়ুন : সাড়ে ৬ কোটি টাকার ফগলাইট নিভু নিভু জ্বলে
ইতোমধ্যে সেতু ও সড়কের ৭০ভাগ শেষ হওয়ার দাবি করে, ২০২১ সালের আগষ্ট মাসের নির্ধারিত কার্যাদেশে দেয়া সময়ের মধ্যে সেতু ও সড়কের কাজ শেষ করে সেতুটি খুলে দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঠিকার মো. নুরুন নবী ।
ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও মুহুরী সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল সেতুটি নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ছাগলনাইয়া উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে সড়ক ও যোগাযোগ, বিশেষ করে ফেনী ২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীকে নদীর দু-পারের মানুষের সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনীতিক ক্ষেত্রে উন্নতির , বিচ্ছেদ ঘুচিয়ে দুই উপজেলাবাসীকে কাছা-কাছি আসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
ফেনী-২ আসনের এমপি ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী লাখ লাখ মানুষের প্রতীক্ষিত আকাঙ্ক্ষার সেতুটির নিমার্ণ কাজ শুরু হওয়ায় তিনি আনন্দিত। তার দুই উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের চাহিদার কথা চিন্তা করে সেতুটির নির্মাণের জন্য ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ায় যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির প্রতি ফেনীবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।