বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

ভুল পরিকল্পনা সংশোধনে ব্যয় বাড়ছে ৪৬৯৮ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০

ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য দুটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি নেওয়া হয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে। এর আওতায় জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের নির্মাণকাজ চলছে। আর দ্বিতীয় প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। এর আওতায় এলেঙ্গা থেকে হাটিকামরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত চার লেন নির্মাণ করা হবে।

যদিও প্রথম প্রকল্পটির (জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা) মতো দ্বিতীয়তেও (এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর) রয়ে গেছে পরিকল্পনাগত ত্রুটি। এজন্য প্রকল্প গ্রহণের প্রায় পৌনে চার বছর পর তা সংশোধন করতে হচ্ছে। এতে এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর চার লেনের প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্যমতে, এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর অংশটি জাতীয় মহাসড়ক এন-৫ (ঢাকা-টাঙ্গাইল-রংপুর-বাংলাবান্ধা)-এর অন্তর্ভুক্ত। আর এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর অংশটির দৈর্ঘ্য ১৯০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। এ অংশটি চার লেনে উন্নীত করতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি এক লাখ টাকা। সব মিলে ৮টি প্যাকেজে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের মূল পূর্ত কাজ করা হবে। যদিও একটি প্যাকেজের ঠিকাদার এখনও নিয়োগ হয়নি।

প্রকল্পটির আওতায় দুই পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেন ছাড়া চার লেন নির্মাণ করা হবে মহাসড়কটি। এছাড়া দুই হাজার ৬৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৩টি ফ্লাইওভার (এলেঙ্গায় এক হাজার ৫৩৮ দশমিক ৬১ মিটারের একটি, কড্ডার মোড়ে ৩৯৫ দশমিক ৬৪ মিটারের একটি ও গোবিন্দগঞ্জে ৭০০ দশমিক ৭৫ মিটারের একটি), ৪১১ মিটার দীর্ঘ ১টি রেলওয়ে ওভারপাস, ১ হাজার ৪৬১ দশমিক ৩৯ মিটার দীর্ঘ ২৬টি ছোট-মাঝারি সেতু, ১ হাজার ১০২ মিটার দৈর্ঘ্যরে ১৬১টি কালভার্ট, ৩৯৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে ১১টি ফুটওভার ব্রিজ, ১৯৫ মিটার দীর্ঘ ৩৯টি আন্ডারপাস এবং হাটিকামরুলে দেড় কিলোমিটারের ১টি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নসহ রোড অপারেশন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হবে প্রকল্পটির আওতায়।

গত বছর প্রকল্পটির সাতটি প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগে চুক্তি সই হয়। সে সময় প্যাকেজগুলোর কাজ ৩৬ মাসে শেষ করার কথা ছিল। যদিও পৌনে চার বছরে প্রকল্পটির অগ্রগতি মাত্র ১৫ শতাংশ। আর মহাসড়কটির বিভিন্ন প্যাকেজের নির্মাণ শুরুর পর এর বিভিন্ন অংশে পরিকল্পনাগত ও নকশাগত ত্রুটি ধরা পড়ে। এজন্য সম্প্রতি প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া একটি প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় ওই অংশের ব্যয় বেড়ে গেছে।

সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের একটি প্যাকেজের (৭নং প্যাকেজ) দরপত্র এখনও অনুমোদন করা যায়নি। এ প্যাকেজের মূল্য ২০১৫ সালের দর অনুযায়ী প্রাক্কলন করা হয়েছিল। তবে সরকারের ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্যাকেজটির প্রাক্কলন হালনাগাদ করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা প্রদান করে। এতে প্যাকেজটির প্রাক্কলিত দর বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া চলমান ৭টি প্যাকেজের অনুমোদিত চুক্তিমূল্য ব্যয় ২৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বৃদ্ধি পাবে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ধীরগতির লেনের প্রস্থ তিন দশমিক ৬০ মিটার ধরা হলেও সংশোধিত প্রকল্পে তিন ধরনের প্রশস্ততা (চার দশমিক ২০ মিটার, সাড়ে পাঁচ মিটার ও সাত দশমকি ৩০ মিটার) ধরা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত আরও ৩টি ফ্লাইওভার, ২০টি কালভার্ট নির্মাণ প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি আন্ডারপাসগুলোর দৈর্ঘ্য এক হাজার ১৯৫ মিটার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এগুলোর জন্য জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে। আর রোড অপারেশন ইউনিট প্রতিষ্ঠার ব্যয়ও ১১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট খাতে ব্যয় বেড়েছে ৪১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

এর বাইরে মহাসড়কটির সিরাজগঞ্জের ভুঁইয়াগাতি এলাকার অ্যালাইনমেন্টের বাঁক প্রশস্ত করতে বিদ্যমান সাব-স্টেশন স্থানান্তরসহ অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এতে ব্যয় হবে অতিরিক্ত ৮০০ কোটি টাকা। আর চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাট ও আইটি কর্তনের হার পরিবর্তন হয়েছে। এতেও ব্যয় বাড়বে। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৯৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে চার হাজার ৬৯৮ কোটি ১২ লাখ টাকা বা ৩৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

তথ্যমতে, প্রাথমিক হিসাবে প্রকল্পটির কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ছিল ৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাব অনুমোদন হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৮৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ২৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

এদিকে প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ সহায়তা ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৩৫৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আর দুই হাজার ৫৪৪ কোটি পাঁচ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধিতে এডিবির ঋণ সহায়তা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫৫৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর সরকারি তহবিল লাগবে পাঁচ হাজার ৩৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

যদিও প্রকল্পটির জন্য ৭০ কোটি ডলার বা পাঁচ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ দিতে চুক্তি করেছে এডিবি। আরও ৫০ কোটি ডলার বা চার হাজার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে সংস্থাটি। তবে বর্ধিত ব্যয়ের জন্য আরও ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা দুই হাজার ৩৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে। এ অর্থের জন্য এডিবিকে অনুরোধ করতে বৈঠকে সুপারিশ করা হয়।

উল্লেখ্য, এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর চার লেন প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত। তবে বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে প্রকল্পটির আরও তিন বছর চার মাস বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্ধিত সময় অনুসারে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার সময়কাল ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া