মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন

ভুল পরিকল্পনায় নির্মাণ হচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০২০

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৫ সালে। বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের পাশে ডুয়েলগেজ নতুন একটি লাইন নির্মাণ করার কথা ছিল প্রকল্পটির আওতায়। তবে প্রায় চার বছর পর প্রকল্পটিতে ভুল ধরা পড়ে।

এতে দেখা যাচ্ছে, নতুন ডুয়েলগেজ লাইনটি হবে বিদ্যমান রেললাইনের চেয়ে অনেক উঁচু। এতে বিদ্যমান স্ট্রাকচারে অসম ভার্টিকাল লেভেল দেখা দেবে। এতে স্টেশন, সেতু, প্ল্যাটফর্ম ও লেভেল ক্রসিং গেটে জটিলতা বাড়বে। ফলে ট্রেন চলাচলে জটিলতা সৃষ্টি হবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন লাইনের পাশাপাশি বিদ্যমান রেললাইনটিও ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। তবে প্রকল্পটির ত্রুটি সংশোধনের ফলে ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

কয়েক মাস আগে রাজধানীর  রেলভবনে অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, অনুমোদিত প্রকল্প অনুযায়ী বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণকাজ চলছে। তবে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনটি ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা না হলে এ লাইনটিকে স্টেশন, সেতু ও লেভেল ক্রসিং গেটে নির্মিতব্য ডুয়েলগেজ লাইনের সমান উচ্চতায় স্থাপন করতে হবে। তা না হলে বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনের ট্র্যাক স্ট্রাকচারে অসম ভার্টিকাল লেভেল দেখা দেবে।

এছাড়া আপলাইন ও ডাউন লাইনের জন্য প্ল্যাটফর্ম ও প্ল্যাটফর্মের শেডের উচ্চতা ভিন্ন করতে হবে।

এ সমস্যা পরিহারে নতুন একটি প্যাকেজের মাধ্যমে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনটিও ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পিএসসি সভায় উপস্থাপন করা হয়। ওই প্রস্তাবে কমিটি সম্মত হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রকল্পটি সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) প্রণয়ন করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন করে একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি)। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৩৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানের অনুদান রয়েছে ২৪৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বাকি ১২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সররবাহ করা হবে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি ৬২ শতাংশ। যদিও ২০১৭ সালের জুনেই প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরে তা দুই দফা বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়াতে হবে।

প্রকল্পটির পিএসসি সভায় জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে কাজ শুরুর আগে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের পাশে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হয়েছে। এতে বাস্তব কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। এছাড়া এখনও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান আছে।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ স্টেশন এলাকায় জমি ইজারাগ্রহীতারা হাইকোর্টে ১৩টি রিট মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ জারি করেছিলেন। এর মধ্যে তিনটি মামলায় রায় রেলের পক্ষে এসেছে।

এদিকে জানুয়ারি পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১০ কিলোমিটার উঁচু বাঁধ (এমব্যাঙ্কমেন্ট) ও চারটি স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ শেষ করেছে। আটটি সেতুর পাইলিং ও লোড টেস্ট শেষ করেছে। পাশাপাশি দুটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। রেল পয়েন্টস ও ক্রসিংয়ের সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে অবৈধ স্থাপনার কারণে নারায়ণগঞ্জ স্টেশন বিল্ডিং, ওয়াশপিট ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না।

 

সূত্রমতে, লেভেল ক্রসিং গেট নং টি-১ ও টি-২-এর মাঝে ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যে আরএস নকশা অনুযায়ী, রেললাইনের বাম পাশে সাত-আট ফুট জায়গা রয়েছে। সেখানে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ অসম্ভব। এক্ষেত্রে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। যদিও প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ খাতে কোনো ব্যয় ধরা হয়নি। আবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ করা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন নির্মাণে দশমিক ৫১ একর জমি দরকার। এ জন্য আনুমানিক ব্যয় হবে ৮৩ কোটি ৭৬ টাকা। আর স্থাপনা অপসারণে ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও ৪৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। সব মিলিয়ে ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

ডিপিপি সংশোধনের জটিলতা এড়াতে জমি অধিগ্রহণ ছাড়া ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণে সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক থেকে ৯০০ ফুট দৈর্ঘ্যে ও ১৮ ফুট প্রস্থ ভূমি রেললাইন নির্মাণের জন্য রেলের বরাবর হস্তান্তরের সুপারিশ করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র আইভী রহমান প্রাথমিকভাবে এ প্রস্তাবে সম্মত হলেও পরে জমি দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সরাসরি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। গত ১৮ ডিসেম্বর পুনরায় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এতে অনুরোধ করলে আইভী রহমান ৯০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ জমি জমি দিতে সম্মত হন। কিন্তু এখনও সে জমি হস্তান্তর করেনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ফলে ওই দশমিক ৫১ একর জমি অধিগ্রহণ করতেই হবে।

পিএসসি সভায় আরও জানানো হয়, গেণ্ডারিয়া থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত রেললাইনের উভয় পাশে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনার ফলে জিওটেকনিক্যাল সার্ভের সময় এলাকার মাটির বাস্তব অবস্থা নিরূপণ করা যায়নি।

এতে রেলপথ নির্মাণে মাটি ভরাট করতে গিয়ে দেখা যায়, ওপরের দিকে সামান্য মাটি ভালো থাকলেও বেশ গভীর পর্যন্ত পলিথিন ও স্পয়েল্ড সয়েল (নরম মাটি) রয়েছে। এসব পলিথিন ও আনসুইটেবল মেটারিয়াল অপসারণ করে অ্যামবেঙ্কমেন্ট (বাঁধ) নির্মাণ করতে হচ্ছে। ফলে এ খাতে ব্যয় বেড়ে যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: