স্পোর্টস ডেস্ক :
গত সপ্তাহে এল ক্লাসিকোতে হারের পর ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ব্যালন ডি’অর না পাওয়া। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এসি মিলানের কাছে হার। সবমিলিয়ে হতাশাগ্রস্ত রিয়াল মাদ্রিদ যেন প্রাণ ফিরে পেল। সকল হতাশা কাটিয়ে ওসাসুনার বিপক্ষে জ্বলে উঠলেন ভিনিসিয়ুস। করলেন হ্যাটট্রিক; জেতালে দলকে।
শনিবার (৯ নভেম্বর) সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ওসাসুনার বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদ ৪-০ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। দলের এমন জয়ে প্রধান নায়ক ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তিনি হ্যাটট্রিক করে রিয়ালকে দুর্দান্ত জয় এনে দেন। ম্যাচে গোল করেছেন জুড বেলিংহামও, যিনি ১৭৯ দিন পর গোলের দেখা পেলেন। তবে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে কিলিয়ান এমবাপেকে।
অবশ্য দুটি বড় দুর্ভাবনাও যোগ হয়েছে রিয়ালে; চোট পেয়ে প্রথমার্ধেই মাঠ ছেড়ে যান ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড রদ্রিগো ও ডিফেন্ডার এদের মিলিতাও।
ঘরোয়া লিগে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৪-০ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এসি মিলানের কাছে ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর, কক্ষপথে ফেরার তীব্র তাড়নায় ওসাসুনার ওপর শুরু থেকে প্রবল চাপ তৈরি করে রিয়াল।
চতুর্দশ মিনিটে গোলের সবচেয়ে কাছাকাছি যায় রিয়াল; তবে রদ্রিগোর অনেক দূর থেকে নেওয়া শট অসাধারণ নৈপুণ্যে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রুখে দেন গোলরক্ষক। এটা নিয়ে প্রথম ১৫ মিনিটেই আটটি কর্নার আদায় করে নেয় তারা। মাঠে রদ্রিগোর উপস্থিতি অবশ্য দীর্ঘ হয়নি। দলকে দুশ্চিন্তায় ফেলে চোট পেয়ে ২০তম মিনিটে মাঠ ছেড়ে যান তিনি। তার বদলি নামেন স্পেনে জন্ম নেওয়া মরক্কোর ফরোয়ার্ড ব্রাহিম দিয়াস।
কিছুক্ষণ পর আবার চোট ছোবল দেয় স্বাগতিক শিবিরে। তাদের আরেকটি কর্নারের সময়, বক্সে ওসাসুনার এক খেলোয়াড় এদের মিলিতাওকে টেনে ফেলে দেন। মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর, স্ট্রেচারে তাকে বাইরে নেওয়া হয়। ব্যথায় নাকি গুরুতর চোটের শঙ্কায়, এসময় মুখ ঢেকে রেখেছিলেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। দুই সতীর্থকে হারানোর হতাশার মাঝে ৩৪তম মিনিটে দলের মুখে হাসি ফোটান ভিনিসিউস। বেলিংহ্যামের রক্ষণচেরা থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে একজনকে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
খানিক পর আরেকবার চোটশঙ্কা জাগে; পায়ে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ মাঠে বসে থাকেন লুকাস ভাসকেস। তবে, সাইডলাইনে গিয়ে কিছুক্ষণ চিকিৎসা নিয়ে তিনি ফিরলে স্বস্তি ফেরে রিয়াল শিবিরে।
এর একটু পরই দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। মিলিতাওয়ের বদলি, ‘বি’ দল থেকে উঠে আসা রাউল ৪২তম মিনিটে মাঝমাঠের অনেক আগে থেকে হাওয়ায় ভাসিয়ে থ্রু পাস বাড়ান, বলের ওপর দৃষ্টি রেখে বক্সে ঢুকে প্রথম ছোঁয়ায় চিপ শটে ঠিকানায় পাঠান বেলিংহ্যাম।
প্রতিপক্ষের বক্সে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলা, লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেওয়া- কিলিয়ান এমবাপের হতাশাময় যাত্রা চলে থাকে এদিনও। দ্বিতীয়ার্ধের দশম মিনিটে বল পায়ে দারুণ গতিতে, প্রতিপক্ষের একাধিক খেলোয়াড়ের বাধা এড়িয়ে ছুটে যান তিনি; বক্সের বাইরে তাকে ফাউল করে আটকান ডিফেন্ডার কাতেনা। চার মিনিট পর ভিনিসিউসের পাস পেয়ে পাশের জালে মারেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।
এরপরই দুর্দান্ত এক প্রতি-আক্রমণে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন ভিনিসিউস। গোলটিতে অসামান্য অবদান রিয়াল গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিনের। প্রতিপক্ষের কর্নারে বল ধরে, সামনে একপলক দেখে ভিনিসিউসের উদ্দেশ্যে জোরাল শট নেন তিনি। মাঝমাঠ থেকে দারুণ ক্ষীপ্রতায় এগিয়ে বক্সের বাইরে প্রথম ছোঁয়ায় বল ভেতরে বাড়িয়ে, সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে আরেক টোকায় গোলরক্ষককে কাটিয়ে, তৃতীয় স্পর্শে অনায়াসে বল লক্ষ্যে পাঠান ভিনি।
৬৮তম মিনিটে ব্যবধান বাড়তে পারতো আরও; তবে ফেদেরিকো ভালভের্দের বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক। পরের মিনিটেই অবশ্য স্কোরলাইন ৪-০ করে ফেলেন ভিনিসিউস। বক্সে দিয়াসের পাস ফাঁকায় পেয়ে, এবারও গোলরক্ষককে কাটিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন এবারের ব্যালন দ’রের লড়াইয়ে দ্বিতীয় হওয়া তারকা ফরোয়ার্ড।
এবারের লিগে ভিনিসিউসের গোল হলো আটটি। তার চেয়ে ৬ গোল বেশি নিয়ে তালিকার শীর্ষে বার্সেলোনার রবের্ত লেভানদোভস্কি।
ম্যাচের ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেকটা কেটে যাওয়ায় ৭৫তম মিনিটে একসঙ্গে ভিনিসিউস ও বেলিংহ্যামকে তুলে নেন কোচ। তাদের জায়গায় নেমে দুই তরুণ ফুটবলার এন্দ্রিক ও আর্দা গিলেরও প্রতিপক্ষের রক্ষণে ক্রমাগত ভীতি ছড়াতে থাকেন। সঙ্গে এমবাপে তো ছিলেনই। জালের দেখা অবশ্য আর মেলেনি।
পুরো ম্যাচে কতটা আধিপত্য ছিল রেয়ালের, তা ফুটে উঠেছে পরিসংখ্যানেও। প্রায় ৬৮ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ১৮টি শট নিয়ে আটটি লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। ঘর সামলাতে ব্যস্ত সময় পার করা ওসাসুনা দুটি শট নিলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি একটিও।
১২ ম্যাচে ৮ জয় ও ৩ ড্রয়ে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে অবস্থান রিয়াল মাদ্রিদের। সমান ম্যাচে ১১ জয়ে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বার্সেলোনা। ১৩ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে ওসাসুনা।