রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৯ অপরাহ্ন

ভারতে ইলিশ গেলেই পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয় কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
ভারতে ইলিশ গেলেই পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয় কেন?
রাজধানীর পাইকারী বাজারের মঙ্গলবারের ছবি : যোগাযোগ

ঠিক একবছর আগে দুর্গাপূজার উপহার হিসাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল ইলিশ। ইলিশ ভারতে যাওয়ার পরপরই বন্ধ করে দেয়া হয় পেঁয়াজ। এবারও ইলিশ গেল ভারতে। আর সাথে সাথে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিল ভারত। গত বছরও ঠিক এই সময়ে এমনই সংকটে পড়েছিল বাংলাদেশ। ওই সময় সরবরাহ ঠিক রাখতে যে পথে হেঁটেছিল সরকার, এবারও হাঁটছে একই পথে। অর্থাৎ দেশীয় আমদানিকারকদের ওপর নির্ভর করে ভারতের বিকল্প আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পেঁয়াজ আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এ বছর সেই উদ্যোগে আন্তরিকতা ও গতি দেখতে চান ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, গত বছর (২০১৯) দেশের শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের বাইরে বিভিন্ন দেশ থেকে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র নিয়েছিল, তার এক-তৃতীয়াংশ পেঁয়াজও দেশে আসেনি। এর ফলে প্রায় তিন মাস পেঁয়াজের সংকট ছিল দেশে। এছাড়া গত বছর সংকটের সময় মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশে ঢুকেছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে মিয়ানমার পণ্য রফতানি বন্ধ রেখেছে। দেশীয় বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তরিক না হলে এবং জরুরি ভিত্তিতে মিয়ানমার রফতানি চালু না করলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের বড় ধরনের সংকট এড়ানো যাবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

 

এদিকে, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণার পর এক রাতের ব্যবধানে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে কমপক্ষে ২০ টাকা। আর খুচরায় বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। বিক্রেতারাই বলেছেন, এভাবে প্রতিদিনই ১০-২০ টাকা করে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকবে।

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বিভিন্ন আড়ত ও পাইকারি দোকানে ঘুরে ভারতের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। দেশীয় পেঁয়াজ খুব একটা দেখা যায়নি। যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে দেশি পেঁয়াজ দেখা গেছে, সেখানে প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গতকাল (সোমবার) একই বাজারে ভারতের পেঁয়াজ ৪০ টাকায় এবং দেশীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

 

বিক্রেতারা স্বীকার করেছেন, খাতুনগঞ্জের আড়তে এখন যেসব ভারতীয় পেঁয়াজ আছে সেগুলো আগের দামে কমপক্ষে দুই মাস আগে আমদানি করা। এরপরও হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তারা চাহিদা বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন।

আরও পড়ুন : পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের দিন ভারতে গেল ১২ টন ইলিশ

চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজের আড়তদার মেসার্স বাচা মিয়া ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা এবং দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম একদিনের ব্যবধানে পাইকারিতে ২০ টাকার মতো বেড়েছে। আমরা আগে ৩৮-৪০ টাকায় যেসব পেঁয়াজ বিক্রি করেছি, সেগুলো কিনতে হয়েছিল ৪২-৪৪ টাকা দরে। লস দিয়ে বিক্রি করেছিলাম। এখন ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় হঠাৎ চাহিদাও বেড়েছে। আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের ভিড় ছিল। ১০-২০ বস্তা করে পেঁয়াজ নিয়ে গেছে একেকজন। স্বাভাবিকভাবেই দাম কিছুটা বেড়েছে।

 

চট্টগ্রাম নগরীর মোমিন রোডে হক স্টোর নামে একটি মুদির দোকানে ভারতের পেঁয়াজ প্রতিকেজি মানভেদে ৬০ টাকা ও ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এর পাশেই শরীফ স্টোর নামে একটি দোকানে প্রতিকেজি ৭৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

হক স্টোরের ম্যানেজার মোহাম্মদ আলম বলেন, আমরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করি না। ভারতের পেঁয়াজ গতকালও আমরা ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি করেছি। গত (সোমবার) রাতে টেলিভিশনে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে খবর দেখার পর খুচরা দোকনদাররা সবাই আজ বাড়তি দাম নিচ্ছে। যে কাস্টমার এক কেজি পেঁয়াজ কিনতেন, তিনি আজ এসে পাঁচ কেজি কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। সারাদিন শুধু পেঁয়াজই বিক্রি করছি।

সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদফতর পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার পর সীমান্তে বাংলাদেশ অভিমুখী পেঁয়াজের ট্রাক আটকে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, প্রতি মেট্রিক টন ২৫০ ডলারের এলসির এই পেঁয়াজ এখন বর্ধিত মূল্য ৭৫০ ডলারে এলসি করলে তবেই সেগুলো ছাড়া হবে।

এর আগে গত বছরের (২০১৯) ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল। এর প্রভাবে ২০১৯ সালে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল।

দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা আছে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ মাসে ২ লাখ টন ও দিনে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশের কৃষকরাই উৎপাদন করেন। আরও তিন থেকে চার লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করে বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা হয়। বাংলাদেশে আমদানি করা পেঁয়াজের সিংহভাগই আসে ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলসীমান্ত দিয়ে। এর বাইরে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আসে মিয়ানমারের পেঁয়াজ, তবে পরিমাণে খুবই কম। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজের মাধ্যমে আসে পেঁয়াজ, যা খুবই নগণ্য পরিমাণে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া