অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সাহেববাজার করপোরেট শাখা থেকে চুরি যাওয়া ১৭ লাখ টাকা এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের ধারণা, টাকা জমা দিতে আসা মাহফুজুর রহমান রিপন নামের ব্যক্তিই পরিকল্পিতভাবে টাকাগুলো অন্যদের দিয়ে সরিয়ে ‘চুরির নাটক’ সাজিয়েছেন।
তবে টাকার মালিক মেসার্স সরদার পেট্রোলিয়াম এজেন্সি কর্তৃপক্ষ বলছে- রিপন তাদের বিশ্বস্ত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি তাদের প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। তিনি কোনোভাবে চুরির সাথে জড়িত নয়।
জানা যায়, সোমবার (২০ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় ব্যাংকের ভেতর থেকে খোয়া যায় ব্যাগভর্তি টাকাগুলো। ওই ব্যাগে আরও ৯৩ হাজার টাকার চেক এবং ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার পে-অর্ডার ছিল। রিপনের দাবি- তিনি যখন ভাউচার লিখছিলেন তখন পাশে থাকা ব্যাগ চুরি হয়ে যায়।
এদিকে, টাকা উদ্ধারে অভিযানে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। খোয়া যাওয়া টাকার মালিক মেসার্স সরদার পেট্রোলিয়াম এজেন্সির স্বত্বাধিকারী রবিউল ইসলামের। তিনি গত এপ্রিলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ১১ হাজার লিটার তেল চুরির মূল হোতা। তেল চুরির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছেন তিনি।
রবিউল রাজশাহী নগরীর কোর্ট এলাকার বাসিন্দা। তিনি রাজশাহী ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার ডিলার। তার রয়েছে ১৮টি ট্রাক এবং তেলবাহী ১২টি লরি।
পুলিশ বলছে- ব্যাংক থেকে খোয়া যাওয়া টাকার মালিক তেল চুরি মামলার মূল আসামি রবিউল ইসলাম। তিনি পলাতক থাকায় টাকা আত্মসাত করে চুরির নাটক সাজিয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রিপন। একই সাথে এই টাকার উৎস এবং অন্যান্য বিষয় নিয়েও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তারা এরই মধ্যে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। সেটা তদন্তের স্বার্থে এখন জানাচ্ছে না।
তবে টাকার বিষয়ে কোনো সন্দেহ করার অবকাশ নেই বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা শাখার সচিব হাবিবুর রহমান।
তিনি দাবি করেন, টাকাগুলো ছিল ডিলার রবিউল ইসলামের ইউরিয়া সারের পে-অর্ডারের টাকা। টাকা জমা হলেই তিনি সরকারের কাছ থেকে ইউরিয়া সার নিতে পারবেন। চুরি যাওয়া ব্যাগে টাকার পাশাপাশি ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার জনতা ব্যাংক মহিলা শাখার পে-অর্ডার ছিল।
হবিবুর রহমান আরও বলেন, ব্যাগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ডিলারদের দেওয়া ভর্তুকি বাবদ পাওয়া ৯৩ হাজার টাকার চেকও ছিল। নিয়মিতভাবে ম্যানেজার রিপন পে-অর্ডারের টাকাগুলো ব্যাংকে জমা দিয়ে আসতেন।
জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, কাউন্টারের সামনে দুই হাত দূরে টাকার ব্যাগ রেখে গ্রাহক ভাউচার লিখছিলেন। এমন সময় তার পাশে এসে চারজন দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে থেকে একজন নিচু হয়ে ব্যাগ নিয়ে যায়।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মন বলেন, টাকার আসল মালিক রবিউল রেলের তেল চুরির মামলায় পলাতক রয়েছেন। আমাদের কাছে মনে হয়েছে- পরিকল্পিতভাবে কয়েকজন মিলে টাকা আত্মসাত করতেই ম্যানেজার রিপন এই নাটক সাজিয়েছেন। তা না হলে দুই হাত দূরে টাকা ফেলে রাখবেন কেন?
ওসি আরও বলেন, টাকা নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। তবে মুখে মাস্ক পরে থাকার কারণে চেনা যাচ্ছে না। পুলিশ ম্যানেজার রিপন ও তার সাথে থাকা আব্দুর রাজ্জাক ট্রেডার্সের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম অপুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদের যে কোনো সময় হাজির করা যাবে বলে টাকার মালিকপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছে। আর সব রহস্য ভেঙে টাকা উদ্ধার হবে বলেও জানিয়েছেন ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন।