বিমানের টিকিট নিয়ে চরম ভোগান্তিতে বিদেশগামী যাত্রীরা। অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থাটির কার্যালয়ের সামনে এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছেন তারা।
তবে টিকিট সংকটের সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় সময়মতো কর্মস্থলে না ফিরতে পারলে চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন অনেকে।
চট্টগ্রাম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অফিসের সামনে রোববারও বিক্ষোভ করেছেন শত শত প্রবাসী। করোনা মহামারির শুরুর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে দেশে এসে আটকা পড়েছেন তারা। আমিরাত সরকার ভিসা উন্মুক্ত করার পরও কাঙ্খিত টিকিট পাচ্ছেন না তারা।
আমিরাতের রাজ্য আল-আইন প্রবাসী আবু বকর গতকাল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, আমার ২০ আগস্টের মধ্যে কর্মস্থলে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। চার দিন ধরে আমি বিমান অফিসে ঢুকতেই পারিনি। গত মঙ্গলবার বিকেলে বিমান ওয়েবসাইটে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি দেখানো হচ্ছিল।
আরও পড়ুন : কাতার এয়ারওয়েজে ভ্রমণের জন্য করোনা সনদ বাধ্যতামূলক
আর ২৬ আগস্টের টিকিট বিক্রি হয় এক লাখ ছয় হাজার টাকায়। রাতে সেটি দেখানো হয় এক লাখ ৩৯ হাজার টাকা। এই ভাড়া দিয়েও যেতে রাজি; কিন্তু আগস্টে কোনো টিকিটই নেই। এখন চাকরি যাওয়ার উপক্রম।
তিনি বলেন, ছবিসহ সার্বিক বিষয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তিনি সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন। এখন সেই সময়ের মধ্যে যেতে না পারলে চাকরি হারানোর ঝুঁকি আছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিমান অফিসে কেউ টিকিট কিনতে বা তারিখ পরিবর্তন করতে না পারলেও রাজনৈতিক লবিং ব্যবহার করে ঢাকা অফিস থেকে কেউ কেউ টিকিট কিনতে পারছেন। অথচ বিমানের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট মাসের পুরোটাই দুবাই-আবুধাবি রুটের কোনো টিকিট নেই।
আবুধাবিপ্রবাসী রাহিদুল কবির বলেন, আমার ফিরতি টিকিট কেনা আছে; কিন্তু তারিখ পরিবর্তন করতে হচ্ছে। বুঝলাম ফ্লাইট অনুযায়ী টিকিট কম; কিন্তু আমি তো নিশ্চিত হতে পারছি না, সেপ্টেম্বরেও কর্মস্থলে ফিরতে পারব কি না। শুধু বাংলাদেশ বিমান নয়, বিদেশি বিমান সংস্থার অবস্থা আরো বেশি নাজুক। তাদের টিকিটের তারিখ অনুযায়ী যেতে না পারলে তো পুরো টাকা ফেরত নেই।
জানা গেছে, করোনা মহামারিতে বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের জন্য প্রথম ফ্লাইট চালু করে বাংলাদেশ বিমান। গত জুলাই থেকে অনিয়মিতভাবে ফ্লাইট চালু হয়। পরে নিয়মিত করা হয়। আবুধাবি ও দুবাইয়ে এখন সপ্তাহে চারটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশ বিমান।
তবে কোনো ফ্লাইট চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি যাচ্ছে না, সব ফ্লাইট ঢাকা থেকে যাচ্ছে; যদিও চট্টগ্রামের যাত্রীদের চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে ৩০ থেকে ৪০ হাজার আমিরাতপ্রবাসী দেশে আটকা পড়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাত্রী বাংলাদেশ বিমানের। সপ্তাহে আটটি ফ্লাইট খুবই সামান্য; যদিও গত মঙ্গলবার থেকে ফ্লাই দুবাই ঢাকা থেকে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
আর আমিরাতপ্রবাসীদের বড় অংশ চট্টগ্রামের হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে পৃথক ফ্লাইট চালু করা দরকার, মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, করোনার কারণে অন্তত ৪০ হাজার আরব আমিরাত প্রবাসী দেশে আটকা পড়েছেন। তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই তারা দ্রুত প্রবাসে কর্মস্থলে ফিরে চাকরি বাঁচাতে চাইছেন; কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন প্রতিদিন। জরুরি ভিত্তিতে এই রুটে বাড়তি ফ্লাইট এবং চট্টগ্রাম থেকে পৃথক ফ্লাইট চালু না করলে এই রেমিট্যান্সযোদ্ধারা পথে বসবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ বিমানের আবুধাবি ও দুবাই টিকিট না পাওয়ার বিষয়ে জানতে বিমানের চট্টগ্রাম জেলা ব্যবস্থাপক আখতারুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। গত চার দিনে যখনই ফোন করা হয়েছে, তার মোবাইল ফোন ‘ব্যস্ত’ দেখাচ্ছে। অফিসের ল্যান্ডফোন নম্বরে ফোন দিয়েও তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরিচয় জানার পর ফোন রেখে দেওয়া হচ্ছে।
বিমান প্রতিমন্ত্রীকে চসিক প্রশাসকের চিঠি : চট্টগ্রাম-দুবাই রুটে সপ্তাহে অন্তত একটি ফ্লাইট চালুর জন্য বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। সেটি সম্ভব না হলে ঢাকা থেকে দুবাইগামী ফ্লাইট বাড়িয়ে চট্টগ্রামের প্রবাসীদের জন্য কোটা সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে।
রোববার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে এ চিঠি পাঠিয়েছেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
এদিকে বিকেলে করপোরেশন থেকে জানানো হয়, চসিক প্রশাসক সুজন বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তিনি সপ্তাহে এক দিন চট্টগ্রামে বসবাসরত প্রবাসীদের জন্য সরাসরি চট্টগ্রাম-আবুধাবি ফ্লাইট চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রশাসককে আশ্বস্ত করেন।
কী বলছে মন্ত্রণালয় : রোববার বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কভিড-১৯-এর কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
দুবাই ও আবুধাবিগামী কোনো ফ্লাইটে ২৪০ জনের বেশি যাত্রী পরিবহন না করার ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে। এ কারণে বিমানের বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজে ৪১৯ জন ও বোয়িং-৭৮৭-৮-এ ২৭১ জন যাত্রী পরিবহনের সুযোগ থাকলেও তা করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া আবুধাবিতে বিমান পরিচালনার জন্য আবুধাবি কর্তৃপক্ষ সেপ্টেম্বর মাসের শিডিউল এখনো দেয়নি।
ফলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-আবুধাবি-ঢাকা রুটে পরিচালিত ফ্লাইটের সেপ্টেম্বরের টিকিট বিক্রি করা যাচ্ছে না। এ কারণে ঢাকা-দুবাই ও ঢাকা-আবুধাবি রুটে টিকিটের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এ পরিস্থিতিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঢাকা-দুবাই ও ঢাকা-আবুধাবি রুটে যেসব যাত্রী আগে ফিরতি টিকিট করার পরও কভিড-১৯-এর কারণে যেতে পারেননি, আগে তাদের টিকিট দেওয়া হবে। ফিরতি টিকিট রি-ইস্যু করার জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না।