শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন

বিধিনিষেধে সাড়া কম : পুরনো রূপে ফেরার পথে ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১
বিধিনিষেধে সাড়া কম : পুরনো রূপে ফেরার পথে ঢাকা
পুরান ঢাকার বাদামতলীর দৃশ্য। রোববার তোলা ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। এরই মধ্যে ১০টি দিন পেরিয়ে এই বিধিনিষেধ চলছে একাদশ দিনের মতো। কিন্তু বিধিনিষেধের দিন বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন এর প্রভাব ব্যস্তানুপাতিক হারে কমছে। রাজধানীর আগারগাঁও থেকে কল্যাণপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহন না চললেও সড়কে ব্যক্তিগত পরিবহনের অভাব নেই।

সেইসঙ্গে পথচলতি মানুষের সংখ্যা সপ্তাহখানেক আগের সময়ের তুলনায় বেড়েছে কয়েকগুণ। মূল সড়কের পাশে ফুটপাতের দোকানপাটও খুলতে শুরু করেছেন ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা।

রোববার (১১ জুলাই) রাজধানীর কল্যাণপুর, শ্যামলী, শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এই এলাকার এই চিত্র স্বাভাবিক সময়ের ঢাকার অনেকটা কাছাকাছি।

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সকালে বহু মানুষকে রাস্তায় বের হতে দেখা গেছে। এদিন সড়কের প্রতিটি ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের পণ্যে নিয়ে বসতে দেখা গেছে। কেউ ফলমূল বা খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন। কেউ নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য বিক্রি করছেন।

সকালে শ্যামলী, শিশু মেলা, পঙ্গু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় অন্যান্য দিনের চেয়ে যানবাহনের পরিমাণও বেশি দেখা গেছে। গণপরিবহন না থাকলেও ছিল উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তিগত যানবাহন। আর ছিল প্রচুর রিকশা। এসব রিকশার যাত্রীদের বেশিরভাগই ছিলেন অফিসগামী। এই এলাকায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশির কারণে রীতিমতো যানবাহনের জট তৈরি হয়।

জাহাঙ্গীর নামের চল্লিশোর্ধ্ব একজন পথচারীর সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেন, শাহবাগে পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) চাকরি করি। সকালে বাসা থেকে বের হয়েছি। রাস্তায় বাস ছাড়া আর সবই আছে। প্রচুর রিকশা। কিন্তু আমাদের মতো যারা ছোট চাকরি করে, তাদের খুব অসুবিধা হচ্ছে। রিকশাচালকরা অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। প্রতিদিন অফিসে যাতায়াতেই যদি দুই-তিনশ টাকা খরচ হয়ে যায়, তাহলে সংসার চালাব কীভাবে? বড় বেকায়দায় আছি।

কল্যাণপুর এলাকায় রাস্তার পাশেই ফলের দোকান নিয়ে বসেছেন হাশেম মিয়া। বিধিনিষেধের মধ্যে দোকান দিয়ে বসেছেন কেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আর কত দিন ঘরে বসে থাকব? পেট তো চালাতে হবে। তাছাড়া এখন দেখি অনেকেই দোকান দিয়ে বসছে। পুলিশও তেমন কিছু বলে না। মাঝে মধ্যে এসে বললে ভেতরে চলে যাই।’

সকাল ১০টার দিকে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সামনে তানিয়া বেগম নামের মধ্যবয়সী আরেক পথচারী বলেন, ‘আমার ছোট ভাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি। তার কাছে যাচ্ছি।’ ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় তো হাজার হাজার মানুষ, আবার বলে লকডাউন! লকডাউনের নামে তামাশা চলছে।’

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে কথা হয় রিকশাচালক আলিফ মিয়ার সঙ্গে। এদিন ভাড়া একটু বেশিই পেয়েছেন বলে জানালেন তিনি। বলেন, ‘আজ ভালো ভাড়া পাচ্ছি। সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার যাত্রী বেশি থাকায় ভাড়া একটু বেশি চাওয়া হয়। লকডাউনে তো সবদিন সমান ভাড়া পাই না।’

সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ শ্যামলী স্কয়ারের সামনের সড়কে যানবাহনের চাপ খানিকটা কমে আসতে দেখা যায়। সেখানে ট্রাফিক বক্সে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট মোহাম্মদ আলী তুহিন। তিনি বলেন, ‘আজ রোববার হওয়ায় সকালের দিকে রাস্তায় যানবাহনের কিছুটা চাপ ছিল। তবে এখন রাস্তায় যানবাহনের উপস্থিতি কম। হয়তো বিকেলের দিকে আবার একটু বাড়তে পারে। রাস্তায় পণ্যবাহী যানচলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কিছু কিছু ব্যক্তিগত গাড়িও চলছে। আর প্রচুর পরিমাণে রিকশা চলাচল করছে।’

যারা বের হয়েছেন তাদের বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে জানিয়ে মোহাম্মদ আলী তুহিন বলেন, কোনো যানবাহনকে সন্দেহ হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এ সময় কেউ বিনা প্রয়োজনের বের হলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বের হওয়া যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হচ্ছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া