বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১৮ অপরাহ্ন

বাবা হারানোর ব্যথা বোঝেন প্রধানমন্ত্রী, আমার বাবা হত্যারও বিচার করবেন : ডরিন

ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি
আপডেট : শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪
বাবা হারানোর ব্যথা বোঝেন প্রধানমন্ত্রী, আমার বাবা হত্যারও বিচার করবেন : ডরিন

ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি : 

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, হত্যার পরিকল্পনাকারীকে ধরার পরই খতিয়ে দেখা যাবে আসলে কী কারণে সে এত বড় অপকর্ম ঘটালো। এর বিচার অবশ্যই হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বাবা হত্যার বিচার করেছেন। তিনি আমার বাবা হত্যারও বিচার করবেন। কারণ, তিনি বাবা হারানোর ব্যথা ভালো করেই বোঝেন। আশা করি, তিনি এই নির্মম নিষ্ঠুরতার বিচার অবশ্যই করবেন। এজন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।

শুক্রবার (২৪ মে) কালীগঞ্জ পৌঁছেছেন ভূষণ রোডের বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। সেখানে আবারও বাবা হত্যার বিচার চেয়েছেন ডরিন। এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে ওঠা নানা প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে আমাকে ফোন দিয়েছেন। তিনি আমাকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তিনি বলছেন- ‘আমি তোমার সাথে আছি। তুমি আমাকে বলেছ তোমার বাবাকে খুঁজে দিতে, আমি ইন্ডিয়ায় পুলিশকে দিয়ে তোমার বাবাকে খুঁজে দিয়েছি। আর কি চাও আমাকে বলো। এখন পুলিশ তদন্ত করবে, রিপোর্ট আসলে আমি ব্যবস্থা নেব। আর কিছু করতে হলে আমাকে জানাও। আমি তখন বলেছি, না আপা আপনি যা ভালো মনে করেন করবেন, আপনি বিচক্ষণ, আপনিই এর বিচার করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা আছে। তিনি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার করবেন বলে আশা করি।

ডরিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের সহযোগিতায় আমি ভিসা করতে দিয়েছি। আমার ভিসাও হয়ে গেছে। আমাকে যখন প্রয়োজন হবে তখনই আমি চলে যাবো। এখন পর্যন্ত আপডেট কিছু পাইনি। তারা ইনভেস্টিগেশন করলে প্রথমে সেটা হাইড (গোপন) রাখেন তাদের কাজের স্বার্থে। পরবর্তীতে তারা সেটা জানান। সুতরাং তারা তাদের কাজ করুক, আমরা অবশ্যই জানতে পারবো।’

ডরিন বলেন, আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তারা প্রি-প্লানিং করে হত্যা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করেই আমার বাবাকে হত্যা করেছে। দুই মাস ধরে পরিকল্পনা করে সাজিয়ে গুছিয়ে তারা এই কাজটি করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে অনেকে জড়িত আছে। সুষ্ঠু তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে কারা এর সাথে জড়িত। যার নাম উঠে এসেছে প্রশাসনকেই তাকে খুঁজে বের করতে হবে। বিদেশ থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। কান টানলে মাথা আসবে। তার মাথার উপরে আরও অনেকে থাকতে পারে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তদন্তের মাধ্যমে যেটাই বেরিয়ে আসুক, সেটা রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক যেটাই হোক, তাদের শাস্তি চাই। আমার বাবা কালীগঞ্জ শহরে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রাজনীতি করেছেন, তার শত্রু থাকতেই পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে হত্যা কি না সে বিষয়টি ফেলা দেওয়া যাচ্ছে না।

এমপি কন্যা বলেন, ২০০৪ সালে বাবা যখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন, তখন বিএনপির একটি গ্রুপ তার পেছনে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তার নামে সকল মামলা মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছেন আদালত।

‘আমার বাবার নামে যদি অভিযোগ সত্যি হতো তাহলে তো আর আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হতো না। বাবা একজন নেতা হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন, এজন্য তার শত্রুও ছিল। এখন অনেক পুরনো কথা উঠে আসছে। এসব পুরনো কথা টেনে সামনে আনার কোনো দরকার নেই। সে যদি বলতেই হয় তাহলে এটাও সামনে আনেন, আমার বাবা দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে বাড়িতে আসতে পারেনি, আমাদের মুখ দেখতে পারেনি, সেই কষ্টের কথাও তুলে ধরেন আপনারা।’

সুযোগ পেলে বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান বলে জানিয়েছেন মুনতারিন ফেরদৌস ডরিন। এমপি কন্যা জানান, বাবা সবসময় তার খোঁজখবর রাখতেন। কখনো ফোন দিতে দেরি হলে বাবা ফোন করে বলতেন, কী মা এত ব্যস্ত। তিনি সবসময় আমাকে আগলে রাখতেন। বাবার হাত ধরেই আমি এতদূর এসেছি। বাবার খুব ইচ্ছে ছিল আমি পড়াশোনা করি, রাজনীতি করি।

ডরিন বলেন, ‘আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। মামলা করেছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী আমার বাবা হত্যার বিচার করবেন।’

আনার কন্যা বলেন, ‘বাবার তেমন কোনো শত্রু ছিল না। বা থাকলেও কখনোই জানাননি। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু এইভাবে কাউকে মারা হবে তা বিশ্বাস করতে পারছি না।’

এ সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘বাবাকে ছুঁয়ে দেখতে চাই। আমি আমার প্রিয় বাবার কষ্টগুলো ছুঁয়ে দেখতে চাই। তাকে মৃত্যুর সময় কোথায় কোথায় কষ্ট দেওয়া হয়। এমন মৃত্যু যেন আর কারও না হয়। মানুষ মরবেই, সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তাই বলে এত নির্মম, বীভৎস, নৃশংসতা। মানুষ এত কুৎসিত হতে পারে।’

ডরিনকে রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, বাবার হাত ধরেই তার রাজনীতিতে আসা। খুব বেশিদিন তিনি রাজনীতিতে না। তিনি গতবারের কালীগঞ্জ উপজেলা কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তবে এবারের কমিটিতে তিনি নেই। বাবা সাপোর্ট না দিলে রাজনীতিতে এগোতে পারতেন না বলে মনে করেন তিনি।

এখন তিনি আইন পড়ছেন। শেষ বর্ষের ছাত্রী। তারা দুই বোন। তার মধ্যে তিনি ছোট।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুযোগ পেলে বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চাই। বাবা উন্নত কালীগঞ্জের স্বপ্ন দেখতেন। যদি সবাই চায় তবে আমার রাজনীতি করার ইচ্ছে আছে। আমি আমার বাবার সাথে গত প্রায় পাঁচ বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছি। মানুষের উপকার তিনি কীভাবে করেছেন সেটা দেখেছি। মানুষ তাকে ভালোবাসত।’

ডরিন বলেন, ‘গতকাল রাত ২টার দিতে বাসায় আসার পর থেকে হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, স্বজন সমবেদনা জানাতে আসছেন। সবাই আমাকে আগলে রাখছেন। এখনো সবাই আমাদের সাথে আছে।’

এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র আশরাফুল আলম, সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব হোসেন খান, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদুর রহমান মন্টুসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া