ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি :
মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা শাখা সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মাইনুল হক। এতে হতাশা বিরাজ করছে ভুক্তভোগীর পরিবারে।
বাবার চাকরি ফেরত চেয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন একমাত্র মেয়ে শারমিন হক ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে বাবার চাকরি ফেরত চেয়ে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন প্রতিবন্ধী মেয়ে মোছা. শারমিন হক (১৫)।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মেয়ে শারমিন।
এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, এক নিকটাত্মীয়ের দায়ের করা মামলায় প্রায় এক বছর ধরে সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা সোনালী ব্যাংক শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মাইনুল হক। বাবার চাকরি ফিরিয়ে আনতে মেয়ের এমন অভিনব প্রতিবাদ নগরবাসীর নজর কাড়ে। প্রতিবাদী মেয়েকে একনজর দেখতে ভীড় জমান সাংবাদিকসহ অনেকে। এসময় মেয়েকে সাধুবাদ জানান আশপাশের মানুষ। প্রতিবন্ধি এই মেয়ের বাসা ময়মনসিংহ নগরীর কালীবাড়ি রোডে।
এসময় ‘বাবার চাকরি ফিরিয়ে দিন, ভয় আতঙ্ক আমাদের গ্রাস করছে’ -এমন শিরোনামে প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে প্রতিবন্ধী শারমিন হক জানান, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় আমার বাবাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত এক বছর ধরে আমার বাবা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। তা দেখে নিজেও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছি। এ অবস্থায় ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আমার বাবার চাকরি ফেরত দেওয়া হোক। আমি আমার বাবাকে সুখী দেখতে চাই।
শারমিন হকের মা নাসরিন হক নূপুর বলেন, আমার স্বামী মাইনুল হক তার পৈত্তিক সম্পত্তির মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে ৬টি ফ্ল্যাট পান। ডেভলপার কানন প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিবলাল শিল শিবু ১০তলা ভবনে ফ্ল্যাটের কাজ অসম্পন্ন রেখে গাঁ ঢাকা দেন। পরে নিরুপায় হয়ে আমাদের ভাগের তিনটি ফ্ল্যাট অন্যত্র বিক্রি করে বাকি তিনটির ডেকোরেশন কাজ সম্পন্ন করি। আমাদের ফ্ল্যাটের কাজ আগে সম্পন্ন করেছি, এ নিয়ে তাদের সাথে বিরোধ বাধে। পরে আমার স্বামীর বড় বোন জামাই আবু ছিদ্দিক খান তাকে মারধরসহ আরো কয়েকটি ধারায় একটি ফৌজদারী মামলা করলে মাইনুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে তারা বিভিন্নভাবে হুমকিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে নিয়েও নানা অপপ্রচার অব্যাহত রাখে। নিজেকে রক্ষা করতে তাদের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আমি বাদী হয়ে একটি মামলাও করি।
সাময়িক বরখাস্তকৃত সোনালী ব্যাংক শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মাইনুল হক বলেন, বিগত ২৪ বছর ধরে সততার সহিত চাকরি করে আসছি। কোনদিন কাজেও ফাঁকি দেয়নি। কিন্তু আমার বড় বোন ও তাঁ স্বামী আবু ছিদ্দিক খানসহ তাদের সন্তানেরা বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে আমাকে চাকরিচ্যুত করতে নানা পায়তারা করে যাচ্ছে। ২০২২ সালের ২৩ মে মিথ্যা মামলা দিয়ে আবু ছিদ্দিক খান হেড অফিসে প্রতিনিয়ত যোগাযোগের মাধ্যমে আমাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখান্তে বাধ্য করেন। তিনি জানান, এখন নিজের বাসা ছেড়ে প্রতিবন্ধী মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া করে থাকছি। এখন শুধু ভাতা পাচ্ছি। আশা করছি আদালতে সত্যের জয় হবে। আমি আমার চাকরিটাও ফেরত পাব। তবে সামাজিকভাবে অনেকটা হেয়-প্রতিপন্ন হয়েছি।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আবু ছিদ্দিক খান বলেন, আমি অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এজিএম ছিলাম। সেই সুবাদে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছি। কিন্তু শ্বশুরের রেখে যাওয়া ময়মনসিংহ নগরীর কালীবাড়ি রোডে ডেভলপার দিয়ে নির্মিত ভবনে মাইনুল হক ও তাঁর স্ত্রী নাসরিন হক আমাদেরকে নানাভাবে ঠকিয়ে অর্থ আত্মসাত করেছে। যে কারনে নিজের প্রাপ্য হিস্যা ফিরে পেতে মামলা করেছি। অপরাধ করলে তো চাকরি যাবে সেটাই স্বাভাবিক। এখন তারা তাদের প্রতিবন্ধী মেয়েকে সামনে রেখে মানুষের সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে মামলার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী মো. নূরুল হক বলেন, যে কয়েকটি ধারায় মামলাটি করা হয়েছে, এর বেশির ভাগ হয়রানিমূলক। আশা করছি বিবাদী ন্যায় বিচার পাবেন।