Dhaka সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্যের নৈরাজ্য চলছিল, এখন অপঘাত ঘটছে: ড. দেবপ্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এতদিন তথ্যের নৈরাজ্য চলছিল। এখন অপঘাত ঘটছে। সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তার মানে সেখানে ‘ডাল মে কুচ কালা হে। ওখানে এমন কিছু ঘটছে তা যদি জনসম্মুখে আসে তাহলে বড় ধরনের নাশকতা হয়ে যাবে।

মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের স্মরণে ‘মোয়াজ্জেম হোসেন স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার বর্তমান পরিস্থিতি তথ্য উপাত্তের ক্ষেত্রে আমি আগে বলেছিলাম বাংলাদেশে এখন তথ্য উপাত্তের নৈরাজ্য চলছে। তথ্য উপাত্তের অন্ধত্ব এসেছে। এখন আমি বলব তথ্য উপাত্তের অপঘাত হয়েছে। এটার সর্বশেষ প্রমাণ হলো বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো আরও বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। অনেকেই বলেন বাংলাদেশের অনেক বড় গর্বের জায়গা আমরা কোনোদিন ঋণ খেলাপি হইনি। তাহলে পাঁচ বিলিয়ন তো দিতে পারছেন না দীর্ঘদিন হচ্ছে। তেল আমদানি করেছেন তার টাকা দিতে পারছেন না, বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন তাদের মুনাফার টাকা দিতে পারছেন না।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আপনার সেই গর্বের জায়গা ফাটল ধরিয়ে দিয়েছেন। অথচ এই তথ্য-উপাত্তগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আসত, অথচ সেখানে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। এখন ডালটা মশুরের না মুগ, বুটের নাকি সব ডালেই সমস্যা হয়েছে সেটা বুঝতে হবে। আপনারা ডিজিটাল বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন তার থেকে এটা সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

দেবপ্রিয় বলেন, এবারের সরকারের শক্তি জায়গা হলো ফসল ভালো হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এবারের আউস-আমন-বোরোর উৎপাদন বেড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রথম কাজ হবে সরকারি গোডাউনগুলো ভর্তি করা। স্টক বাড়ান। বাজারকে প্রভাবিত করার জন্য স্টক হলো প্রথম কাজ।

তিনি বলেন, কার্ডের মাধ্যমে যে খাদ্য সরবরাহ করা হয়, সেই তালিকা আপডেট ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য স্থানীয় পর্যায়ে তালিকা যাচাইয়ের জন্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তালিকা প্রকাশ করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ প্রকাশের ক্ষেত্রে এটা একটি স্তর হতে পারে। তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে মিলিয়ে দেখবে, খাদ্য সহায়তা দেওয়ার তালিকা করা হয়েছে। যাদের সহযোগিতার দেওয়া হচ্ছে, এটা উপযুক্ত কিনা দেখা দরকার।

তিনি বলেন, খোলা বাজারের মাধ্যমে বিভাগীয় ও জেলা শহরে খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে। এটা উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নিম্নবিত্তরাও এই খাদ্যের প্রয়োজন অনুভব করছে। এমন একটি সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

দেবপ্রিয় আরও বলেন, প্রবাসী আয় হুন্ডির মাধ্যমে আসছে। এর ফলে দেশে প্রবাসীদের স্বজনরা টাকা পেলেও ডলার থেকে বিদেশে। প্রবাসী আয় দেশে আসার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আনতে ২ বা ৩ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিয়ে হুন্ডি বন্ধ করা যাবে না। এটা নমনীয় হারে যেতে হবে। একইভাবে সুদের হার নমনীয় করতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো সুদের হার নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই মুহূর্তে মুদ্রা নীতি ও আর্থিক নীতি সমন্বয় বিকল অবস্থায় আছে। একটি বেশি চলে যায়, আরেকটি পিছিয়ে যায়। এটার সমন্বয় দরকার।

বাংলাদেশ সরকারের এখন বড় দুর্ভাগ্য হলো নীতি নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে গেছে। সরকারের নীতি ব্যাখ্যা করার জন্য কোন মানুষ দেখছি না এই মুহূর্তে। যাদের এ দায়িত্ব তারা সে দায়িত্ব পালন করেন বলে মনে হয় না। যা বাজারকে সংকেত দেয়। বাজার যদি সংকেত না পায় তাহলে সরকারের উপর ভরসা আসে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে স্মারক বক্তৃতায় উপস্থিত ছিলেন ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আবুল কাশেম।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্যের নৈরাজ্য চলছিল, এখন অপঘাত ঘটছে: ড. দেবপ্রিয়

প্রকাশের সময় : ০৪:০৬:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এতদিন তথ্যের নৈরাজ্য চলছিল। এখন অপঘাত ঘটছে। সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তার মানে সেখানে ‘ডাল মে কুচ কালা হে। ওখানে এমন কিছু ঘটছে তা যদি জনসম্মুখে আসে তাহলে বড় ধরনের নাশকতা হয়ে যাবে।

মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের স্মরণে ‘মোয়াজ্জেম হোসেন স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার বর্তমান পরিস্থিতি তথ্য উপাত্তের ক্ষেত্রে আমি আগে বলেছিলাম বাংলাদেশে এখন তথ্য উপাত্তের নৈরাজ্য চলছে। তথ্য উপাত্তের অন্ধত্ব এসেছে। এখন আমি বলব তথ্য উপাত্তের অপঘাত হয়েছে। এটার সর্বশেষ প্রমাণ হলো বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো আরও বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। অনেকেই বলেন বাংলাদেশের অনেক বড় গর্বের জায়গা আমরা কোনোদিন ঋণ খেলাপি হইনি। তাহলে পাঁচ বিলিয়ন তো দিতে পারছেন না দীর্ঘদিন হচ্ছে। তেল আমদানি করেছেন তার টাকা দিতে পারছেন না, বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন তাদের মুনাফার টাকা দিতে পারছেন না।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আপনার সেই গর্বের জায়গা ফাটল ধরিয়ে দিয়েছেন। অথচ এই তথ্য-উপাত্তগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আসত, অথচ সেখানে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। এখন ডালটা মশুরের না মুগ, বুটের নাকি সব ডালেই সমস্যা হয়েছে সেটা বুঝতে হবে। আপনারা ডিজিটাল বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন তার থেকে এটা সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

দেবপ্রিয় বলেন, এবারের সরকারের শক্তি জায়গা হলো ফসল ভালো হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এবারের আউস-আমন-বোরোর উৎপাদন বেড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রথম কাজ হবে সরকারি গোডাউনগুলো ভর্তি করা। স্টক বাড়ান। বাজারকে প্রভাবিত করার জন্য স্টক হলো প্রথম কাজ।

তিনি বলেন, কার্ডের মাধ্যমে যে খাদ্য সরবরাহ করা হয়, সেই তালিকা আপডেট ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য স্থানীয় পর্যায়ে তালিকা যাচাইয়ের জন্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তালিকা প্রকাশ করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ প্রকাশের ক্ষেত্রে এটা একটি স্তর হতে পারে। তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে মিলিয়ে দেখবে, খাদ্য সহায়তা দেওয়ার তালিকা করা হয়েছে। যাদের সহযোগিতার দেওয়া হচ্ছে, এটা উপযুক্ত কিনা দেখা দরকার।

তিনি বলেন, খোলা বাজারের মাধ্যমে বিভাগীয় ও জেলা শহরে খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে। এটা উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নিম্নবিত্তরাও এই খাদ্যের প্রয়োজন অনুভব করছে। এমন একটি সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

দেবপ্রিয় আরও বলেন, প্রবাসী আয় হুন্ডির মাধ্যমে আসছে। এর ফলে দেশে প্রবাসীদের স্বজনরা টাকা পেলেও ডলার থেকে বিদেশে। প্রবাসী আয় দেশে আসার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আনতে ২ বা ৩ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিয়ে হুন্ডি বন্ধ করা যাবে না। এটা নমনীয় হারে যেতে হবে। একইভাবে সুদের হার নমনীয় করতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো সুদের হার নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই মুহূর্তে মুদ্রা নীতি ও আর্থিক নীতি সমন্বয় বিকল অবস্থায় আছে। একটি বেশি চলে যায়, আরেকটি পিছিয়ে যায়। এটার সমন্বয় দরকার।

বাংলাদেশ সরকারের এখন বড় দুর্ভাগ্য হলো নীতি নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে গেছে। সরকারের নীতি ব্যাখ্যা করার জন্য কোন মানুষ দেখছি না এই মুহূর্তে। যাদের এ দায়িত্ব তারা সে দায়িত্ব পালন করেন বলে মনে হয় না। যা বাজারকে সংকেত দেয়। বাজার যদি সংকেত না পায় তাহলে সরকারের উপর ভরসা আসে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে স্মারক বক্তৃতায় উপস্থিত ছিলেন ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আবুল কাশেম।