বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৩৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

বাংলাদেশে কাতার এয়ারওয়েজ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০২০
কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে এভাবেই যাত্রীদেরকে বসতে দেয়া হয় : ছবি সংগৃহীত

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে বাংলাদেশে কাতার এয়ারওয়েজ ফ্লাইট চালানোর অনুমতি পায়। গত ১৬ জুন কাতার এয়ারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদেরকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় বেসামরিক বিমার চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
এরপর থেকে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে তারা। কিন্তু শুরু থেকেই সামাজিক দূরত্ব, স্যানিটাইজেশন ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করছে না তারা।

ইতোমধ্যে এয়ারলাইন্সটিকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর ১৬ জুন থেকে সীমিত পরিসরে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে কাতারে বাংলাদেশিদের প্রবেশের অনুমতি না থাকায় কাতারের ট্রানজিট হয়ে ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট চালানোর অনুমতি পায় কাতার এয়ারওয়েজ। কিন্তু শুরু থেকেই তারা বিমানের কোনো আসন খালি না রেখে গাদাগাদি করেই যাত্রীদের বসিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

গত ২৪ জুন কাতার এয়ারওয়েজের অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বেবিচকের সদস্য গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী মো. জিয়াউল কবীরের স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিমানবন্দরে যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চলছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সীমিত পরিসরে চালুর প্রক্রিয়ায় মধ্যে বেবিচক কাতার এয়ারওয়েজকে সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়। কিন্তু আমাদের নজরে এসেছে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব, স্যানিটাইজেশন ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না।

উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠিতে বলা হয়, এটি বাংলাদেশে করোনভাইরাস সংক্রমণের আরও বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। আন্তর্জাতিক মানের এবং নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জীবাণুমুক্তকরণ, স্যানিটাইজেশন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয় চিঠিতে।

গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে রোমে যাওয়া একটি ফ্লাইটের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা করে ইতালি। এই ঘোষণার পরও ৮ জুন বাংলাদেশ থেকে কাতার হয়ে ইতালিতে বাংলাদেশি যাত্রীদের নিয়ে যায় কাতার এয়াররওয়েজ।

তবে বাংলাদেশি কোনও যাত্রীকে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি ইতালি। বাধ্য হয়ে এসব যাত্রীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে কাতার এয়ারওয়েজ। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কাতার এয়ারওয়েজ ইতালিতে যাত্রী নেওয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি যাত্রীদেরও দুর্ভোগে পড়তে হয়। ইতালিতে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে আসা ১৪৭ জন বাংলাদেশিকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।

কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে ভ্রমণ করা যাত্রীরা জানিয়েছে, ফ্লাইটে ওঠার আগে যাত্রীদের মাস্ক, গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়। তবে ফ্লাইটে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না।

১৬ জুলাই দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী সপরিবারে আমেরিকা যান কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে। তিনি বলেন, ‘কাতার এয়ারওয়েজের স্বাস্থ্যবিধির পদক্ষেপগুলো নিয়ে বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম। কিন্তু ফ্লাইটে ভ্রমণ করে আশাহত হয়েছি। তারা যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধিগুলো অনুসরণ করছে বলে আমার মনে হয়নি।’

২০ জুলাই কাতার এয়ারওয়েরজের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছি যাত্রীদের আসন ব্যবস্থা দেখে। একজন যাত্রীর পাশে কোনও ফাঁকা না রেখে আরেক যাত্রীকে বসানো হয়েছে। পুরো উড়োজাহাজটি যাত্রীতে পূর্ণ ছিল।’

বেবিচকের স্বাস্থ্যবিধিতে বলা হয়েছে, ফ্লাইটে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে উড়োজাহাজের ধারণ ক্ষমতার ২৫ শতাংশ সিট খালি রাখতে হবে। একই পরিবারের সদস্য না হলে এক যাত্রীর পর একটি আসন ফাঁকা রাখতে হবে।

উড়োজাহাজের সামনে অথবা পেছনের এক সারি আসন খালি রাখতে হবে, যদি ফ্লাইটে কোনও সাসপেক্ট যাত্রী পাওয়া যায় তাকে আলাদা রাখার জন্য। প্রতিটি ফ্লাইটের আগে উড়োজাহাজে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যাত্রীদের মাস্ক দিতে হবে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাত্রীদের বিমানবন্দরে চেক-ইনের সময় কাউন্টারে এয়ারলাইন্স কর্মীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, ডিস্পোজেবল ক্যাপ পরতে হবে।

কাউন্টারের পাশে যাত্রীদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। কেবিন ক্রুদের এন ৯৫ মাস্ক, চশমা, রাবারের হ্যান্ড গ্লাভস ও ফেসিয়াল মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধিতে। এমনকি ফ্লাইটে দুজন কেবিন ক্রু একসঙ্গে যাত্রীদের খাবার পরিবেশন করতে পারবেন না বলেও নির্দেশনা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হজরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ উল-আহসান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিমানবন্দরে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়। আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে নিয়মিত বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইটে পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। এরপরও কোনও এয়ারলাইন্স যদি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করে, তাদের সতর্ক করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশে কাতার এয়ারওয়েজের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা কাতারে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: