নিজস্ব প্রতিবেদক :
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প দায়িত্বশীল ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। শিল্পের উন্নয়নে আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের এই উন্নয়ন যেন টেকসই হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সার্কুলারিটি এবং উন্নয়নের জন্য সকলের মধ্যে সহযোগিতাই মূল চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ আয়োজিত ‘২য় বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনমি সামিট’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উন্নয়নের জন্য পরিবেশ ধ্বংস করতে চাই না। কারণ আমাদের একটাই পৃথিবী। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এ ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে এবং সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
পাটমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে তৈরি পোশাকের (আরএমজি) দ্বিতীয় বড় উৎপাদক হিসেবে বাংলাদেশের সার্কুলার ইকোনমিতে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আরএমজি বর্জ্য উৎপাদনেও বাংলাদেশ দ্বিতীয়। সার্কুলার ইকোনমির চাবিকাঠি হলো— বর্জ্য হ্রাস, পুনর্ব্যবহার ও রিসাইকেল। এর লক্ষ্য সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে অধিক উপযোগিতা তৈরি করা। এতে উৎপাদক ও ক্রেতা উভয়ই লাভজনক হতে পারে। সেক্ষেত্রে শিল্পোত্তর বর্জ্যের সব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রমাণ করে দেশের অর্থনৈতিক ও শিল্প বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, এ দেশের পোশাক উদ্যোক্তারা সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে যেভাবে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সার্কুলার ফ্যাশন প্রসারের জন্য ব্র্যান্ড এবং উৎপাদনকারীদের মধ্যে সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তৈরি পোশাক শিল্পের অংশীদার। সকল ব্র্যান্ডকে অনুরোধ করছি, অনুগ্রহ করে আপনারা দাম একটু বাড়ান, অন্যথায় আমরা টিকে থাকতে পারব না।
তিনি বলেন, দেশে আমরা প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করেছি। আমাদের কারখানাগুলোতে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখছি। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা টেকসই অনুশীলন করছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ২০০টিরও বেশি সনদপ্রাপ্ত সবুজ পোশাককারখানা রয়েছে এবং আরও ৫০০ কারখানা সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। উপকরণের ব্যবহার কমিয়ে এবং পুনর্ব্যবহারে আরও গরুত্বারোপের মাধ্যমে বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনমির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সার্কুলারিটি সম্পর্কে আরও জ্ঞান এবং প্রযুক্তির জন্য আমাদের উন্নত দেশগুলির সহায়তা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যান জানোস্কি বলেন, বাংলাদেশের আরও উচ্চাভিলাষী সংস্কার নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। যদিও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রায়শই বিভিন্ন সেক্টরে অগ্রগামী হিসাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠান, সরকার এবং অনান্য স্টেকহোল্ডারগণ সার্কুলার ইকোনমি বাস্তবায়নের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তারা যেমন দিকনির্দেশনা দিতে পারেন, তেমনি উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের ব্যাপারেও ভূমিকা রাখেন।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ২০১৬ সালে আমি প্রথমবারের মতো শিল্প বর্জ্যের শতকরা হারের ওপর একটি গবেষণা করতে চেয়েছিলাম এবং বাংলাদেশে সেটি বের করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। কিন্তু এখন সবাই জানে বাংলাদেশে বর্জ্যের শতকরা হার কত। আর এ বিষয়টি আমাকে অনেক গর্বিত করে তোলে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এতদূর এগিয়েছে যে, আপনি এখন দেখতে পাচ্ছেন আমরা দিন দিন আরও উন্নতি করছি।
দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ফ্যাশন শিল্পের নেতৃবৃন্দ, শিল্প উদ্যোক্তা, সার্কুলারিটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধি এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।