বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ন্যূনতম সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি টু থার্ড মেজোরোটি নিয়ে সংসদে যাবে : রুমিন ফারহানা রেকর্ড গড়ে ৭ বছর পর জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট হারল বাংলাদেশ একদিনের ব্যবধানে কমলো সোনার দাম কাশ্মীর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার মেয়ের জন্য দুবাইয়ে বাড়ি কিনলেন অভিষেক-ঐশ্বরিয়া! গণতন্ত্রের লড়াকুরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে : রিজভী টেস্ট চলাকালে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে বিসিবি কর্মকর্তার মৃত্যু সৎ মায়ের মামলায় মেহের আফরোজ শাওনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা সচিবলায় বসে সুবিধা নিচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসররা : মির্জা আব্বাস

বাংলাদেশের জার্সিতে অনেক বছর খেলার প্রত্যাশা হামজার

স্পোর্টস ডেস্ক
আপডেট : বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫
বাংলাদেশের জার্সিতে অনেক বছর খেলার প্রত্যাশা হামজার

স্পোর্টস ডেস্ক : 

আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখনও শুরু হয়নি। কেবল প্রাথমিক স্কোয়াডে জায়গা মিলেছে। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হবে হামজা চৌধুরীর। তার আগে শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডার বলেছেন, লাল-সবুজ জার্সিতে অনেক দিন খেলবেন তিনি।

এর আগে শেকড়ের টানে বাংলাদেশে ঘুরতে এলেও এবার ভিন্ন পরিচয়ে বাংলাদেশে এসেছেন ইংল্যান্ড প্রবাসী ফুটবলার হামজা। তার আগমনে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মনে আশার জোয়ার বইছে। কারণ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা একজন এখন প্রতিনিধিত্ব করবেন বাংলাদেশের। তাদের উন্মাদনার পারদ আরও উঁচুতে ওঠানোর ব্যবস্থা হামজাই এবার করে দিয়েছেন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা জানিয়ে দিয়ে।

বুধবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন হামজা। তার পাশে সেসময় ছিলেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। তিনি দেশের কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থককে আশ্বস্ত করে বলেন, আমরা একটি মহান জাতি। আমরা যা চাই তা অর্জন করতে পারি, আমাদের কেবল কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং সেই স্তরে যাওয়ার প্রক্রিয়াটিকে সম্মান করতে হবে। আমাদের কোনো তাড়াহুড়ো নেই। আমাদের হাতে অনেক সময় আছে, ইনশাআল্লাহ। আমি আরও কয়েক বছর বাংলাদেশের হয়ে খেলব।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটি থেকে বর্তমানে ধারে চ্যাম্পিয়নশিপের (দ্বিতীয় স্তর) ক্লাব শেফিল্ডে খেলছেন হামজা। এখন পর্যন্ত মাঠে নেমেছেন সাতটি ম্যাচে। নিজেকে নিয়ে কোনো বিশেষ প্রত্যাশা রাখছেন না তিনি।

বরং কাবরেরা ইতোমধ্যে যে দলটি তৈরি করেছেন, সেটার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হতে চাইছেন হামজা, আমি খুবই আশাবাদী এবং আমি খুবই রোমাঞ্চিত। আমি ও কোচ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা করে যাচ্ছি। তিনি আমাকে বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েছেন। এই দলের কৌশলগত দক্ষতা এবং তারা যেভাবে আক্রমণাত্মক দল তৈরি করছে, সেসব দেখে আমি ভীষণ অবাক। আমি আশাবাদী, দলে বাড়তি কিছু যোগ করতে পারব।

‘আমি হয়তো ভিন্ন ধরনের ফুটবল খেলি। তবে জামালের মতো আরও অনেকেই আছে যাদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই অভিজ্ঞতা আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাদের কাছে শেখার আছে আমার। আশা করি আমরা সফল হব। ’

লেস্টারের একাডেমিতে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হামজা জিতেছেন এফএ কাপের শিরোপা। প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি খেলেছেন ইউরোপিয়ান ক্লাব প্রতিযোগিতা উয়েফা ইউরোপা লিগ ও উয়েফা কনফারেন্স লিগে। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে সাতটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাও আছে তার।

সতীর্থদের কাছ থেকেও শেখার প্রত্যাশা রেখেছেন হামজা, আমি অন্য একটি লিগ থেকে এসেছি। আমি ভিন্ন ঘরানার ফুটবল খেলি। অধিনায়ক জামালসহ এখানকার খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক ফুটবলে আমার চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ এবং অভিজ্ঞতার মূল্য অনেক। তাই আমি তাদের কাছ থেকেও শিখতে এসেছি। ইনশাআল্লাহ, আমরা সফল হতে পারব এবং আমরা ধাপে ধাপে এগোতে চাই।

ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলেছেন হামজা। সম্ভাবনা ছিল জাতীয় দলের হয়ে খেলারও। যদি ইংল্যান্ড দলে ডাক পেতেন এবং বাংলাদেশের হয়ে খেলার সুযোগ থাকতো, তবে দুটোর মধ্যে কোনটা বেছে নিতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে হামজা বলেন, ‘আমি পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত (বাংলাদেশের হয়ে খেলার) নিয়েছি। ইংল্যান্ডের হয়ে কখনো ডাক পাইনি। ওই সুযোগ তাই আমার আসেনি। সুতরাং সিদ্ধান্তও নিতে হয়নি। তবে সুযোগ আসলে অবশ্যই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করতাম। বাংলাদেশে খেলতে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা উৎসাহিত করেছে। আমার কাছে আমার পরিবার সবার আগে। ’

‘কয়েক বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছিল। সর্বশেষ নতুন (বাফুফে) প্রেসিডেন্ট তাবিথ আওয়াল আলোচনা শুরু করেন। পরিকল্পনা জানান। কোচের সঙ্গ কথা হয়। আমার মনে হয়েছে, এই দলটা সাফল্য পেতে চায়। আমারও পরিবার নিয়ে এখানে আসতে খুব ভালো লাগে। কোচ ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পর আত্মবিশ্বাস পাই। ’

হাভিয়ের কাবরেরার ট্যাকটিকস নিয়েও আত্মবিশ্বাসী হামজা। আলাপকালে কোচের ভাবনা জেনে নিয়েছেন তিনি। ভারত ম্যাচের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা যায়নি বলে প্রস্তুতির কমতি নিয়ে কথা উঠছে। তবে ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলারের বিশ্বাস, দল প্রস্তুতি নিয়েছে যথাযথ।

“খুবই আত্মবিশ্বাসী (কোচের কৌশল নিয়ে)। খুব, খুব আত্মবিশ্বাসী। আগেও যেটা বললাম, দল কী করে, এর অনেক ভিডিও ক্লিপ তিনি আমাকে দেখিয়েছেন। তার ভাবনার কথা বলেছেন। আমি এর অংশ হয়ে দলকে সাহায্য করতে উন্মুখ।”

“(প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলা নিয়ে) আমি মনে করি, কোচ ও সভাপতিই সবচেয়ে ভালো জানেন। তাদের সিদ্ধান্তগুলো হয় দলের সবচেয়ে ভালোর জন্যই। আপনি যেমন বললেন, উন্মাদনা ছিল। পর্দার আড়ালে দল কঠোর পরিশ্রম করছে। তাই এটা হয়তো ভালো হয়েছে যে, আমি স্পটলাইট ওদের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছি। তারা কতটা পরিশ্রম করছে এবং কতটা ভালো করছে সেটা ২৫ তারিখেই আপনারা দেখবেন।”

ছোট দলের হয়ে সাফল্যের দেখা আগেও পেয়েছেন হামজা। লেস্টার সিটির হয়ে এফএ কাপ জিতেছেন। দলটিকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ের রূপকথা লিখতেও দেখেছেন। বৈশ্বিক ফুটবলে বাংলাদেশও পেছনের বেঞ্চের ছাত্র। হামজার বিশ্বাস, লেস্টার সিটির মতো বাংলাদেশও আগামীতে মাথা তুলে দাঁড়াবে।

“হ্যাঁ, অনেকটাই (লেস্টার সিটি ও বাংলাদেশের মিল)। অবশ্যই, যখন সময় আসবে, আমি আমার অভিজ্ঞতা এবং গল্প ভাগাভাগি করব। যেটা বলছিলাম, লেস্টারের গল্প অন্যরকম গল্প। তবে একটা জাতি হিসেবে আমরাও দারুণ, আমাদেরও সম্ভাবনা আছে, আমরাও কিছু অর্জন করতে পারি, এজন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করতে হবে। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশের হয়ে অনেক বছর খেলব আমি। অবশ্যই এই গল্পে অনেক মিল রয়েছে।”

হামজার সামনে সুযোগ ছিল ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার জন্য অপেক্ষা করার। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশকে। এই সিদ্ধান্তের পেছনের গল্পটাও তিনি বললেন সংবাদ সম্মেলনে।

“হ্যাঁ, আমি সব সময়ই বাংলাদেশের হয়ে খেলার কথা ভেবেছি। এ নিয়ে আমি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে (ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পেলেও বাংলাদেশের হয়ে খেলতাম কি না) এই সিদ্ধান্ত আমার নিতে হয়নি। আমার যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এলো, তখন পরিবারের সঙ্গে কথা বললাম, তারা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারাই বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য আমাকে এখানে টেনে নিয়ে এলো (হাসি)।”

“অনেকগুলো বিষয় ছিল যে কারণে আমি এই অপশন বেছে নিয়েছি। যখন নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন, পরিকল্পনা জানালেন। আমি কোচের সঙ্গে কথা বললাম। দেখলাম এখানে একটি ভালো পদ্ধতি আছে। দেখলাম খুব ভালো একটি অর্গাইজেশন নিয়ে একটা দল সফল হতে চায়। আমি জানতাম, আমার জন্যও পরিবার নিয়ে এখানে এসে খেলা আরামদায়ক। তাই আমি জাতীয় দলের সঙ্গে এই অভিযানে যোগ দিয়েছি। কোচ ও সভাপতি আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন।”

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া