নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দলের নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রথম সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন জুঁই ফুলের গান গেয়ে লাভ নেই। আমাদের এখন কঠিন সময়। তাই ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর’, ওইরকম ইশতেহার করুন। দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঘোষিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে তিনি বলেন, কে কাকে নিষেধাজ্ঞা দিলো সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগ ভাবে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, পর্যবেক্ষক কারা আসবে না আসবে সেটা ভাবার বিষয় নয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের জনগণের জন্য শেখ হাসিনা আল্লাহর রহমতের দান। আমরা গত বছরের নির্বাচন ইশতেহার করেছি। ইশতেহার পড়ে কয়জন? বুলেট পয়েন্টে করুন ইশতেহার। কোনো দরকার নেই বিশাল একটা পুস্তক রচনা করার, এ ধরনের ইশতেহার কেউ পড়বে না। মানুষের সময়ও নেই। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সব জায়গায় আছে। আমাদের সময়ের সঙ্গে বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলতে হবে। সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতায় থাকতে হলে এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে।
তিনি বলেন, জো বাইডেন বলেছেন আমি আবারও ক্ষমতা থাকতে চাই, কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে আমেরিকার গণতন্ত্র নষ্ট হবে। আমেরিকার গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। আমার বয়স কোনো ব্যাপার না, গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য আমি আবারও ক্ষমতা থাকতে চাই। আমিও (ওবায়দুল কাদের) একইভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। এই স্পিরিটটা আমাদের রাখতে হবে। অ্যাকশন মুখে কর্মকাণ্ড করতে হবে। এখানে জুঁই ফুলে গান গেয়ে লাভ নেই। আমার সামনে এই ২৩ নম্বরে গ্রেনেডে বিস্ফোরণ, তার সামনে দাঁড়িয়ে আমি জুঁই ফুলের গান গাইবো? আমাকেও অ্যাকশনে যেতে হবে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর, ওইরকম ইশতেহার তৈরি করুন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা অতি আমরা কঠিন সময় অতিক্রম করতে পারবো, কারণ আমাদের দলের অধিনায়ক সাহসী। তার অসীম সাহসের জন্য আমরা দুর্লভ সাগর পাড়ি দিতে পারবো।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব তো বলেই দিয়েছেন আর মাত্র কয়টা দিন, আপনারা কোথায় যাবেন? মির্জা আব্বাস বলেন তারা নাকি চাঁদ রাত দেখতে পান। তারা নাকি আমাদেরকে তাঁড়িয়ে দেবেন, আর কয়েকটা দিন পরেই নাকি আমাদেরকে চলে যেতে হবে। আমি গতকাল টঙ্গীতে বলেছি- আমরা এই অক্টোবরও আছি, আগামী অক্টোবরেও থাকবো। জনগণ আমাদের চায়। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী সংকটে শক্তহাতে হাল ধরে আছেন, কেন তাকে ছেড়ে দিতে হবে? তার বিকল্প ভাবেন। শেখ হাসিনার বিকল্প আছে কি? সেটি ভাবতে হবে, সেই আলোকে ইশতেহার সাজাতে হবে।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা ছোট না বড় হবে এ সব এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। তিনি চাইলে সেটাকে ছোটও করতে পারেন, আবার বড়ও করতে পারেন। পৃথিবীর অন্যান্য সব গণতান্ত্রিক দেশের মত নির্বাচনকালীন সরকার রুটিন ওয়ার্ক করবে, মেজর কোনো পলিসি ডিসিশনে অংশ নেবে না। এটা হল নিয়ম, এ নিয়ম মেনে আমরাও চলব।
নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় আমাদের দেশেও সেভাবে হবে। কে এলো, কে এলো না, এটা আমাদের বিষয় না। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। আমরা কারো উপর চাপিয়ে দিচ্ছি না। কে আসবে, কে আসবে না এটা তাদের ব্যাপার। কে কাকে নিষেধাজ্ঞা দিল সেটাও আমাদের কোনো বিষয় না। নিষেধাজ্ঞা আমাদের বিষয় না, কারণ আমরা তো ইলেকশন করব। নির্বাচনের বাধা যারা দেবে তারাই তো নিষেধাজ্ঞায় পড়বে।
যারা বাধা দেবে তাদের গিয়ে ধরুন, তাদেরকে হুমকি দেন। একেক দিন একেক হুমকি আসে, কি আজব ব্যাপার? ইউক্রেন যুদ্ধে সারা পৃথিবীটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে, সুদান দুই ভাগ হয়ে যাচ্ছে, ফিলিস্তিনে প্রতিদিন নারী শিশুর রক্ত স্রোত, আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারে কী হচ্ছে? রোহিঙ্গাদের চাপিয়ে দিয়ে মানবতার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করলেন, এখন তো আমাদের সাহায্য কমে যাচ্ছে। আমরা কিভাবে চালাবো তাদেরকে? কিভাবে চলবে তারা? আমরা আমাদের এসব নিয়েই আজকে ভাবছি। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছেন, পারেন না দুষ্টু ছেলে ইসরায়েলকে থামাতে?
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করবো। আমরা যা করবো, পরিপূর্ণভাবেই সংবিধান ফলো করেই করবো। দুনিয়ার অন্যান্য দেশে যেভাবে হয়, সেভাবেই হবে। কে এলো কে এলো না, এটা আমাদের দেখার বিষয় না। কে নিষেধাজ্ঞা দিলো, সেটাও আমাদের হেডেক না। আমরা তো নির্বাচন করবো, নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য নয়, যারা বাধা দেবে, তাদের নিষেধাজ্ঞা দেন।
ইশতেহার নিয়ে তিনি বলেন, ইশতেহার পড়ে কজন? সেটা খেয়াল রেখে করতে হবে। বুলেট পয়েন্ট দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আনতে হবে। ঢাউস কিতাব বা বিশাল বই পড়ার সময় কারও নেই। সময়ের সঙ্গে বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে।
কাদের বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে শেখ হাসিনাকে ফের ক্ষমতায় আনতে হবে। বিএনপি এলে গণতন্ত্র থাকবে না। অ্যাকশনমুখী ইশতেহার লাগবে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর স্টাইলে ইশতেহার করেন। ক্লাইমেট চেঞ্জের বিষয়ে সামনে রাখতে হবে। ২০২৬ এবং ২০৪০ সাল মাথায় রাখতে হবে। ডিজিটাল হয়ে গেছে, এখন মাথায় স্মার্ট বাংলাদেশ। কীভাবে সর্বত্র স্মার্ট করা যায়, সেটা ভাবতে হবে।
শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে কাদের বলেন, ৭৭ বছর বয়সেও তার গতি দেখলে মনে হয়, গতিতে তিনি সত্যিকারার্থে অ্যারাবিয়ান হর্স। শেখ হাসিনা আল্লাহর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বাক ড. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ড. সেলিম মাহমুদ, ড. বজলুল হক খন্দকার, অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. শামসুল আলম, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, শেখর দত্ত, ড. মাকসুদ কামাল, ড. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক খায়রুল হোসেন, সাজ্জাদুল হাসান, তারানা হালিম, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ।
Like this:
Like Loading...