নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঈদের মার্কেট ধরতে আজ থেকে চৌকি বসিয়ে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা শুরু করেছেন রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। এর আগে সেখানে বালি ফেলে ও ইট বিছিয়ে বিক্রির উপযোগী ব্যবস্থা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
বুধবার (১২ এপ্রিল) বেলা সোয়া ১টার দিকে চৌকি বসিয়ে অস্থায়ীভাবে বেচাবিক্রির উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
খোলা আকাশের নিচে রোদ উপেক্ষা করে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে দোকান বসিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মূলত ঈদকে সামনে রেখে তড়িঘড়ি করে ব্যবসায়ীদের বসার জায়গা করে দেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসির তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৩ হাজার ৮৪৫ জন। তবে আজ প্রায় ৭০০ জন ব্যবসায়ী চৌকি বসিয়ে বঙ্গবাজারে বসেছেন। যদিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা অনুযায়ী সবাই অস্থায়ীভাবে চৌকি বসিয়ে এখানে ব্যবসা করতে পারবেন।
অন্যদিকে বঙ্গবাজারের ১.৭৯ একর জায়গাজুড়ে প্রায় ২.৫ লাখ ইট বিছানো হয়েছে এবং প্রায় ১৫০ গাড়ি বালি ফেলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর আগে অগ্নিকাণ্ডস্থলে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অগ্নিকাণ্ডস্থল থেকে ১০৬০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
আরা যারা চৌকিতে বসেছেন, তাদের কেউ প্যান্ট, কেউবা শার্ট, পাঞ্জাবি, শিশুদের পোশাক কেউবা শাড়ি বিক্রি করছেন। তীব্র গরমের কারণে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ীরা।
এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশের অংশ এখনও আর্বজনা সরানোর কাজ চলছে। আর্বজনা সরিয়ে বালু ফেলেই ইট বিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা চৌকি বসিয়ে জায়গা নিশ্চিত করছেন। এ ছাড়া উত্তর পাশের মার্কেট এখনও ভাঙার কাজ চলছে।
সিয়াম ফ্যাশনের মালিক আবুল হোসেন মজিদ বলেন, আমাদের দোকান মার্কেটের মধ্যে থাকায় একটা মালামালও বাঁচাতে পারিনি। এখন চৌকি পেতে জায়গা দখল করে কী করবো? আমার কাছে কোনও টাকাও নেই যে কিছু মালামাল কিনে এখানে বসবো।
ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, এই মার্কেটে আমার দুটি দোকান ছিল। এখন কিছুই নেই। এখনও পার্টিদের কাছে ২৫ লাখের বেশি টাকা পাবো। কিন্তু তারাও সেটা দিচ্ছে না। এ অবস্থায় কীভাবে ব্যবসা করবো?
বাবুল মিয়া নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আজকেই মালামাল নিয়ে আসতে পারবো না। তবে মাহজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। কাল মাল তুলবো। কিন্তু আজকে চৌকি বসিয়ে জায়গা নিশ্চিত করছি। যাতে পরে ঝামেলায় পড়তে না হয়।
বঙ্গবাজারে এমন এক চৌকি নিয়ে ব্যবসা করতে বসেছেন আব্দুস সোবহান নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আজ থেকে আমরা এখানে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করার জন্য বসার সুযোগ পেয়েছি। যারা যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা অর্থাৎ আমরা ঈদ সামনে রেখে কিছুটা ব্যবসার আশা দেখছি। তবে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগরাই পাইকারি ব্যবসায়ী। তাই এই চৌকিতে এভাবে খোলা আকাশের নিচে এভাবে আমাদের ব্যবসা হবে না।
চৌকি বসিয়ে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা শুরু করা এখানকার আরেক ব্যবসী মনিরুল ইসলাম বলেন, খোলা আকাশের নিচে এমন রোদে আমরা বিক্রি করার আশায় না হয় বসলাম। কিন্তু এই রোদে, তীব্র তাপে কাস্টমার তো আমাদের দোকানে আসবে না। তাই ব্যবসাটা হওয়া কঠিন এখানে। তবুও যেহেতু সামনে ঈদ তাই আমরা বুক ভরা আশা নিয়ে বসেছি এখানে। যা শেষ হওয়ার তার সব শেষ হয়ে গেছে আমাদের এই আগুনে।
এদিকে বঙ্গবাজারে চৌকি বসিয়ে ব্যবসা কার্যক্রমের উদ্বোধনে এসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আগুনে হাজারো ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আগুন পুরোপুরি নেভাতে তিনদিন সময় লেগেছে। পরে সেখান থেকে কয়েক হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করেছি। পুরো জায়গাটা খালি করেছি। ঈদকে সামনে রেখে আমরা বলেছিলাম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যাতে এখানে ব্যবসা শুরু করতে পারি। সেটি আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। সবার সহযোগিতায় আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছি। এরই মধ্যে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করেছি।
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় দেশের সবাই এগিয়ে এসেছেন জানিয়ে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, যারা সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন তাদের আন্তরিক ধনয়বাদ। এর মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, বাঙালি সহায়তা করতে জানে।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, এখন আমরা স্ব স্ব জায়গায় দোকান বসিয়ে দিচ্ছি। সেভাবে সবকিছু তৈরি করে দিচ্ছি। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। যদিও ঈদের আগে এটা সামান্য। ঈদের পরে ব্যবসায়ীদের জন্য আরও কিভাবে কী করা যায়, তা নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ মার্কেট সমিতির সবাইকে নিয়ে বৈঠক করবো। আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বঙ্গবাজার সহায়তা তহবিলে অনুদান দেবো।
প্রসঙ্গত, গত ৪ এপ্রিল ভোরে আগুন লাগে দেশের অন্যতম প্রধান কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজারে। এর প্রায় ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে তার আগেই পুড়ে যায় সব দোকান। আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে আশপাশের মার্কেটগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।