তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে কমিশন গঠন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে বলে আসছিলাম বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে শুধু যারা সামনে থেকে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের মাধ্যমেই যে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা নয়। সদ্য স্বাধীন একটি দেশকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, সেই দেশি-বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পটভূমি রচনা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সভার সূচনা দিনের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিরাট একটি ষড়যন্ত্র ছিল, সেই ষড়যন্ত্রের অনেক নট-নটী ছিল, সুতরাং এই হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যদি সেটি আমরা আজ না করি, তাহলে আজ থেকে শতবর্ষ পরে যে ইতিহাস লেখা হবে, সেখানে কুশীলবদের নাম থাকবে না, কারা এই ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদের সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রজন্ম জানতে পারবে না, পৃথিবীর ইতিহাস সেটি জানতে পারবে না।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে: তথ্যমন্ত্রী
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, শত শত বছর পরের ইতিহাসে যাতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের নাম লিপিবদ্ধ থাকে, ইতিহাসকে সত্য জানাতে হয়, সে জন্য এবং ইতিহাসের সত্য উদঘাটনের স্বার্থে এবং ভবিষ্যতের জন্য ঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজনে আমি মনে করি, আপনারা মনে করেন, দেশের মানুষ মনে করে হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনের স্বার্থে একটি কমিশন করা এবং যারা জীবিত আছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা।
এটি না হলে ইতিহাসের কাঠগড়ায় হয়তো আমাদের দাঁড় করানো হতে পারে, সে জন্যই এটি করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধুমাত্র একটি দেশ রচনা করে গেছেন তা নয়। বঙ্গবন্ধুকে আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলি, কারণ বাঙালির হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে তারা একটি জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বঙ্গবন্ধু এই জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
এই জন্যই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধু শুধু এই স্বাধীন রাষ্ট্র রচনা করে গেছেন তা নয়, বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরের মাথায় একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়ে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তাকে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে যে বছর হত্যা করা হয়, সে বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৪ শতাংশ এবং তখন বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, অনেক পরিসংখ্যান মতে সে বছর ১০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন হয়েছিল, বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশ যাতে ভবিষ্যতে মাথা উঁচু করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য বঙ্গবন্ধু অনেক আইন করেছিলেন এবং সে সব আইনের ভিত্তিতেই আমরা পরবর্তীতে সমুদ্রসীমা, স্থলসীমা, তেল-গ্যাস ক্ষেত্রে নিজেদের অধিকারসহ অনেক কিছু অর্জন করেছি।
সভায় বক্তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনকর্ম ও আত্মত্যাগের ওপর আলোকপাত করেন এবং তাঁর হত্যাকারীদের মধ্যে যারা পলাতক রয়েছেন, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা ও হত্যার নেপথ্য কুশীলবদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানান।
ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদের সভাপতিতে ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুর সঞ্চালনায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, ওমর ফারুক, কাজী রফিক, আজিজুল ইসলাম ভ্ইূঁয়া, রফিকুল ইসলাম রতন, সোহেল হায়দার চৌধুরী, আবদুল মজিদ প্রমুখ সভায় বক্তৃতা করেন।