বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে শুধু জিয়াই যুক্ত ছিল না খালেদারও সায় ছিল: তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে শুধু জিয়াই যুক্ত ছিল না খালেদারও সায় ছিল: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

১৫ই আগস্ট বেগম জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ করে বিএনপি আসলে তার জন্মদিন পালন করেছে, জনগণের চাপে সেটি বলতে লজ্জা লাগছে। এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে শুধু জিয়াই যুক্ত ছিল না, খালেদা জিয়ারও সায় ছিল এবং তাদের দলটিই হচ্ছে খুনিদের দল। তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।

তিনি রোববার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে সার্কিট হাউজ রোডে তথ্য ভবনের মিলনায়তনে ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন। তথ্যসচিব কামরুন নাহার সভায় সভাপতিত্ব করেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখতে পাই এতদিন ১৫ই আগস্ট ভুয়া জন্মদিনের পর তারা সেটি আর পালন না করার ঘোষণা দিলো। আবার গতকাল দেখলাম, ১৫ আগস্ট, যেদিন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হয়েছে, সমগ্র বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনায় মিলাদ হচ্ছে, হত্যাকারীদের নিন্দায় বিক্ষোভ-সমালোচনা হচ্ছে, সেখানে তারা (বিএনপি) বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ মাহফিল করলো।

আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধুকে রক্তাক্ত করা বুলেটই জিয়াউর রহমানকে রক্তাক্ত করেছে: কাদের

এই মিলাদ আপনারা ১৪ তারিখ করলেন না কেন? ১২ তারিখ বা ১৬ তারিখ করলেন না কেন? -প্রশ্ন করে ড. হাছান বলেন, ১৫ই আগস্ট বেগম জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ করে বিএনপি আসলে তার জন্মদিন পালন করেছে, জনগণের চাপে সেটি বলতে লজ্জা লাগছে।

এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে শুধু জিয়াই যুক্ত ছিল না, খালেদা জিয়ারও সায় ছিল এবং তাদের দলটিই হচ্ছে খুনিদের দল।

বেগম জিয়ার জন্মের বিভিন্ন তারিখের ঘটনা যদি ইউরোপের কোনো রাষ্ট্রে হতো, তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রীতো দূরের কথা, সংসদ সদস্য হওয়া বা রাজনীতি করারই অযোগ্য হতেন, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা হতো’ বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।



 

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বেগম জিয়ার পাসপোর্টে একটা জন্ম তারিখ, বিয়ে রেজিস্ট্রারে আরেকটা, ১৯৯১ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবার সময় আরেকটা জন্ম তারিখ, শিক্ষাগত সনদে আরেকটা তারিখ। আর সবশেষে এতো দিন বলা নাই-কওয়া নাই হঠাৎ ১৯৯৫ সালে পত্রিকার পাতায় দেখলাম মান্নান ভূঁইয়া ঘোষণা করলেন বেগম খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেছেন।

তখন থেকে সেই তারিখে তারা কেক কাটেন। একটা মানুষের কয়টা জন্ম তারিখ থাকতে পারে, এরকম ঘটনা বাংলাদেশে আর কোনো মানুষের জীবনে আছে বলে আমার জানা নেই।

তথ্যমন্ত্রী এসময় ১৫ই আগস্ট নির্মম হত্যাকা-ের শহীদ জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রকে হত্যা করার লক্ষ্যে।

সেকারণেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুব দ্রুত পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিনন্দন বার্তা আসে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, সেকারণেই দেখতে পাই, জুলফিকার আলী ভুট্টো আগস্ট মাসের ১১ কিংবা ১২ তারিখ এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, এ অঞ্চলে একটি বড় পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ হত্যাকারীদের সাথে পাকিস্তানিদের যোগাযোগ ছিল।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেসময় এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের উল্লাসিত হওয়া, পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশনের, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের কথা বলা -এই ঘটনাগুলোই বলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রকে হত্যার লক্ষ্যে।

আর এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যে জিয়াউর রহমান ওতোপোতভাবে জড়িত, শুধুমাত্র ক্যাপ্টেন মাজেদের জবানবন্দিতে নয়, কর্নেল ফারুকের বিদেশে টেলিভিশনের সাথে সাক্ষাৎকারসহ তার বহু প্রমাণ আছে-উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় প্রমাণ, এই বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের তিনি বিদেশে মিশনের চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

ক্যাপ্টেন মাজেদের ভাষ্য অনুযায়ী ‘যাদের বিয়ে-সাদী হয় নাই, তাদের বান্ধবীসহ বিদেশে যাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান’। এরপর সংসদে ইনডেমনেটি অধ্যাদেশ পাস করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিয়ে বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিল জিয়াউর রহমান।

সুতরাং যারা এই পটভূমি রচনা করেছে তাদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন, আর পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডকে সাধুবাদ জানিয়ে এবং যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তাদেরকে সম্ভাষণ জানিয়ে যারা পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখেছিল, শিরোনাম বানিয়ে ছিল, তাদেরও মুখোশ উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন, বলেন তথ্যমন্ত্রী।

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন আজ থেকে শতবর্ষ পর সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সেজন্য ইতিহাসের কাছে আমাদের দায়মুক্তির জন্য এগুলো জানা প্রয়োজন উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, সেজন্যই আজকে দাবি উঠেছে একটি কমিশন গঠন করে যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের কুশীলব ছিল, তাদের মুখোশটি জাতির সামনে উন্মোচন করা।

তাহলে পাঁচশত বছর প্রজন্ম জানবে যে প্রকৃতপক্ষে একটি সদ্য স্বাধীন জাতিকে হত্যা করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল।

তথ্যসচিব কামরুন নাহার, প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার, অতিরিক্ত সচিব জাহানারা পারভীন, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম গোলাম কিবরিয়া সভায় বক্তব্য রাখেন।

‘স্বাধীনতা কী করে আমাদের হলো’ প্রামাণ্যচিত্রটি এসময় মিলনায়তনের চারটি পর্দায় প্রদর্শনের সময় একটি ভাবগম্ভীর আবহ তৈরি হয়। অনুষ্ঠান শেষে তথ্য ভবনের দ্বাদশ তলায় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের বঙ্গবন্ধু প্রদর্শনী গ্যালারি ও জাদুঘর এবং নিচতলায় সংস্থার প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের নামফলক উন্মোচন করেন তথ্যমন্ত্রী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া