তুরস্ক, ইরান ও পাকিস্তান এই তিন দেশের সংযোগকারী একটি রেললাইন পুনরায় চালুর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। রেললাইনটি তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহর থেকে শুরু করে ইরানের রাজধানী তেহরানকে সংযুক্ত করে তা একেবারে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছবে। পরবর্তী সময়ে তা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
আইটিআই ট্রান্সন্যাশনাল রেলপথটি নিয়ে তিন দেশের সরকার নতুন বছরেই আলোচনা এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। খবর নিক্কেই এশিয়া।
ইকোনমিক কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (ইকো) আওতায় ২০০৯ সালে এ তিন দেশের পক্ষ থেকে একটি কনটেইনার ট্রেন উদ্বোধন করা হয়েছিল। কিন্তু তখন সেটি শুধু পরীক্ষামূলক পর্যায়েই ছিল এবং তা আর পূর্ণমাত্রায় চালু হয়নি।
তবে তিন দেশই পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি ওই রেলপথ কাজে লাগিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করার বিষয়টিও সবসময় বিবেচনায় রেখেছে। ১৯৮৫ সালে ইরান, পাকিস্তান ও তুরস্ক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট ইকোর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১০।
ইকোর অন্য সাত সদস্য হচ্ছে আজারবাইজান, আফগানিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান। চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে তিন দেশের মধ্যকার এ রেললাইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে।
তিন দেশের মধ্যে যে রেললাইনটি রয়েছে, তা ৬ হাজার ৫৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ; যা পৃথিবীর মোট পরিধির এক-ষষ্ঠাংশ। রেলপথের ১ হাজার ৯৫০ কিলোমিটার পড়বে তুরস্কে।
এছাড়া ইরান ও পাকিস্তানে পড়বে যথাক্রমে ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার ও ১ হাজার ৯৯০ কিলোমিটার। তুরস্ক থেকে পাকিস্তানের রাজধানী পর্যন্ত যেতে যেখানে সমুদ্রপথে ২১ দিন সময় লাগে, সেখানে রেলপথে ১০ দিন সময় লাগবে।
পরবর্তীকালে পাকিস্তান থেকে রেললাইনটি উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত করা সম্ভব হবে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন : যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট বন্ধ করল টার্কিশ এয়ারলাইনস
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকিস্তানের এক সরকারি কর্মকর্তা নিক্কেইকে বলেন, আইটিআই রেলপথটি পাকিস্তানের এমএল-১ রেললাইনের মাধ্যমে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের স্বায়ত্তশাসিত উইঘুর অঞ্চলকে সম্পৃক্ত করবে। ৬৮০ কোটি ডলারে নির্মিতব্য এমএল-১ প্রকল্পটি চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপিইসি) সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আইটিআই প্রকল্পটি চীন নেতৃত্বাধীন বিআরআইয়ের বর্ধিত একটি অংশ। চীনের বিআরআইয়ের সঙ্গে তেহরানকে যুক্ত করা হলে তেহরানের জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়ানো অনেক সহজ হবে। এটি হবে ইরানের জন্য বিকল্প বাণিজ্য পথ। এই নতুন রেলপথে যুক্ত হলে ইরানের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তাছাড়া বাণিজ্য অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনৈতিক দিক থেকেও এমন ঘটনার একটা আলাদা তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করতে ইরানকে রোখা একেবারেই অসম্ভব।
এশিয়া রিসার্চ সেন্টারের পশ্চিম এশিয়াবিষয়ক গবেষক লুকাস প্রাইসভস্কি বলেন, আইটিআই রেলপথের মতো অবকাঠামো প্রকল্পগুলো ইরানের অর্থনীতি চাঙ্গায় ভূমিকা রাখবে।
এদিকে পাকিস্তানের জন্য বিনিয়োগ প্রাপ্তিতে হয়তো কিছুটা সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। গত সপ্তাহে এমএল-১ প্রকল্পের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামাবাদের কাছে অতিরিক্ত গ্যারান্টি দাবি করেছে বেইজিং। বিশালাকার ওই রেলওয়ে প্রকল্প চীন কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তান হয়তো বিআরআই কাঠামোর বাইরে থেকে ঋণ নেবে। চীনের কাছ থেকে পাকিস্তান রাজনৈতিক সহায়তা পেলেও আইটিআই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা না পাওয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে।