টানা আট দিন ফেরি চলাচল বন্ধ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরি ঘাট। নৌরুটে নাব্য সংকটের কারণে ঘাটে ফেরি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার হাজার হাজার যাত্রীরা অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ফেরি না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোট ও লঞ্চ দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
ঘাটে পারের অপেক্ষায় রয়েছে দুই শতাধিক ট্রাক ও পিকআপ। বৃহস্পতিবার সকালে চালকরা জানান, শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ী উভয়ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো অর্থের অভাবে বিকল্প রুট পাটুরিয়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে পারছেন না।
চালকরা জানান, গন্তব্যে পণ্য পৌঁছাতে পারলে যে ভাড়া পাওয়া যাবে তার বেশিরভাগই খরচ হয়ে গেছে এবারের ট্রিপে। এবার লাভের চাইতে লোকসান গুনতে হবে। ঘাট এলাকায় খাবারের অনেক দাম। খুব কষ্টে কোনোরকম আধা পেট খেয়ে কোনো রকম দিন পার করছেন তারা।
এদিকে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে নাব্য সংকট নিরসনে ড্রেজিং করে কাটা পলিমাটিগুলো আশেপাশে ফেলে দেওয়ায় কোনো উপকারই হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। গত তিন মাস ধরে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজারগুলো পলি কেটে তা ফেলছে পদ্মার চরের ধারে ও চ্যানেলের আশেপাশেই।
ফলে ড্রেজিং করে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। উল্টো কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবারও পলি জমে নাব্য সংকট দেখা দিচ্ছে। গত জুন থেকে শুরু হওয়া কাজ তিন মাস পর্যবেক্ষণের পর ড্রেজিং কার্যক্রম নিয়ে এমন অভিযোগ তুলেছেন শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে চলাচলরত ফেরির একাধিক চালক ও বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।
তাদের মতে, চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোর ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং কাজ যেভাবে করে, তা দেখে মনে হয়, সঠিকভাবেই করছে তারা। তাদের ড্রেজিংয়ে কাটা পলিমাটি পদ্মা চরের মাঝখানে ফেলার কারণে সেগুলো নদীর পানিতে মিশতে সুযোগ পায় না। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজারগুলো পলিমাটি ফেলার কাজ সর্ম্পূর্ণ উল্টো। তারা যেখানে ড্রেজিং করছে তার পাশেই পলিমাটি ফেলছে, যা প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছেও প্রশ্নবিদ্ধ।
আরও পড়ুন : এক হাজার করে টাকা দেব শিক্ষার্থীদের : প্রধানমন্ত্রী
তবে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, নদী খননের পর পলিমাটি ফেলার জায়গা নেই, তাই নদীর পাড়েই পলিমাটিগুলো ফেলতে হচ্ছে। আর এতে কোনো সমস্যা নেই।
বিআইডব্লিউটিসির এজিএম শফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে নৌ-চ্যানেলে ৯টি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করছে বিআইডব্লিউটিএ। তার মতে, ড্রেজিং করে পলিমাটিগুলো দূরে ফেলা হলে ভালো হয়। কিন্তু তারা তা না করে পাশেই ফেলে দেয়। তিনি জানান, নাব্য সংকটের কারণে গত রোববার দ্বিতীয় দফায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে লৌহজং টার্নিং চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র একাধিক প্রকৌশলী (ড্রেজিং বিভাগ) জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজে অধিগ্রহণ করা জায়গায় চীনা প্রতিষ্ঠান ড্রেজিংয়ের পলিমাটি ফেলছে। সেখানে তাদের পলিমাটি ফেলতে দেওয়া হয় না। আর মাটি ফেলতে বিআইডব্লিউটিএ’র নিজস্ব উঁচু কোনো জায়গাও নেই। নৌযান চলাচলের বৃহত্তর স্বার্থে প্রতি বছরই চরের পাশেই পলি ফেলতে হয়।
বিআইডব্লিউটিসির এজিএম শফিকুল ইসলাম জানান, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে নাব্যতা সংকট নিরসন করতে গেলে জুন থকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার ঘনমিটার পলি অপসারণ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এতে খরচ হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। কিন্তু সরকারের বিপুল পরিমাণের টাকা খরচ হলেও কোনো উপকারই হয়নি। স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা পলিমাটি বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে আবারও নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় ড্রেজিং কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বিআইডব্লিউটিএ নির্দিষ্ট সময়ে দুই কিলোমিটার পথ খনন করলেও পদ্মা সেতুর ২৫ ও ২৬ নম্বর পিলারের কাছাকাছি পাঁচশ মিটারজুড়ে পলি পড়ে নতুন করে সংকট বেড়েছে। জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ২৫ ও ২৬ নম্বর পিলারের সামনে পলি জমে কোথাও কোথাও দুই বা আড়াই ফুট পানির গভীরতা। এলাকাটি সেতু কর্তৃপক্ষের খনন করার কথা থাকলেও দ্রুত পথ সচল করার জন্য তাদের সঙ্গে খনন কাজ করছে ড্রেজিং বিভাগ। আর সাত নটিক্যাল মাইল বেগের প্রবল স্রোতসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়েই চলছে খননের কাজ।
ড্রেজিং বিভাগ জানিয়য়েছে, বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে প্রচুর পলি আসায় নৌ পথটি সচল রাখতে এ বছর ৩২ লাখ ঘনফুট পলি, নদী থেকে অপসারণ করতে হবে। সে লক্ষ্যে জুন থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে নদী খননের কাজ। তবে দুর্যোগকালীন সময়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাশের চরের পথটি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। ঘাটে পারের অপেক্ষায় রয়েছে অর্ধশতাধিক ট্রাক ও পিকআপ। তারা স্বেচ্ছায় ঘাটে অবস্থান করছে। সবাইকে এ নৌরুট এড়িয়ে চলার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ফেরি চালু হবে কিনা বা কবে ফেরি চালু হবে এ বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।