শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রিপোর্টারের নাম
আপডেট : রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩
প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রাজশাহী প্রতিনিধি : 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপের গাফিলতির অভিযোগ তুলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারকে ঘিরে রেখেছেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১২ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা পৌনে ১১টার পর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি প্যারিস রোডে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।

সেখান তাঁরা এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘এসো ভাই, এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘পুলিশের হামলা কেন, সন্ত্রাসীদের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘টোকাইদের কালো হাত, ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের একপর্যায়ে প্যারিস রোডে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার উপস্থিত হন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের শান্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানালে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ-মিছিল করলে উপাচার্য সম্মুখ আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের সাবাশ বাংলাদেশ মাঠে আসার আহ্বান জানান। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গতকাল সংঘর্ষের ঘটনাস্থল বিনোদপুর গেটে গিয়ে আলোচনায় বসতে বলেন। এতে উপাচার্য সম্মত না হলে তাকে ভেতরে রেখে শিক্ষার্থীরা চারদিক থেকে ঘিরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এসয় বিক্ষোভকারীরা ‘হৈ হৈ রই ভিসি, প্রক্টর গেল কই’, ‘জ্বালোরে-জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘আমার ভাইয়ের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই‘, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’, ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভ থেকে প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকটি দাবি সামনে এনেছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সদস্যদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিক করা, আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের শতশত ভাই আহত মেডিকেল ভর্তি আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। প্রশাসনের ঘুমন্ত চেহারা আমরা অনেক দেখেছি। গতকালের ঘটনায় আমরা প্রশাসনের কাউকেই পাশে পাইনি।

প্রশাসনিক ভবনে তালা, ফের বিক্ষোভে উত্তাল রাবি

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স ও হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ খান বলেন, গতকালের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিল। তাদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো না মানলে আন্দোলন চলবেই।

এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় ১২ ও ১৩ মার্চ সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার (১১ মার্চ) রাতে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে চালক শরিফুল ও তার সহযোগী রিপনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় ওই শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিনোদপুর বাজারে বাস থেকে নামার সময় তাদের আবারও কথা কাটাকাটি হয়। এসময় বিনোদপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী বাসচালকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাতাহাতি হয় তার।

খবর পেয়ে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। এসময় ব্যবসায়ীরা তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। ধাওয়া দিয়ে তাকে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতেই বড় হয়ে যায় ঘটনাটি।

খবর পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল থেকে বের হয়ে বিনোদপুর গেটের পাশে অবস্থান নেন। আর ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেন রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে আহত হন অনেক শিক্ষার্থী। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আহত হন অন্তত ১০ জন।

এদিকে, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর এলাকায় দোকানে ও পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি সাত প্লাটুন বিজিবি কাজ করছে। তবে রাত ১০টার পর ফের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়ে পড়েন। এসময় তারা বিক্ষোভ করেন।

গতকাল ঘটনার পর আজ সকালে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: