নিজস্ব প্রতিবেদক :
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল (টার্মিনাল-৩) যে দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে তা আগেই ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। তবে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকার কারণে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ছাড়া কারোই ভেতরে যাওয়ার অনুমতি নেই।
নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে পুরোদমে। এরই ধারাবাহিকতায় টার্মিনালের অভ্যন্তরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অক্টোবরে সফট ওপেনিংকে (আংশিক উদ্বোধন) কেন্দ্র করে মোট কাজের প্রায় ৬৫ শতাংশ এরই মধ্যে গুছিয়ে এনেছে প্রকল্পের অর্থায়নকারী জাপানি সংস্থা জাইকা। এর ফলে ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে তৃতীয় টার্মিনালটি।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) নিজেদের ফেসবুক পেজে দৃষ্টিনন্দন এই থার্ড টার্মিনালের নতুন ছবি প্রকাশ করল অন্যতম দাতা সংস্থা জাইকা বাংলাদেশ। প্রকাশিত ছবিগুলোর শিরোনামে ইংরেজিতে তারা যা লিখেছে, সেটির বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, উড়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩।
জাইকা বাংলাদেশের ভেরিফাইড পেইজ থেকে তিনটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ছবিতে টার্মিনালের অপরূপ সুন্দর সিলিং ও পিলার দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছেন।
এদিকে, এই পোস্ট ঘিরে ইতোমধ্যেই উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরী হয়েছে জনমনে। পোস্টে শেখ নাজিব আহমেদ নামের একজন লিখেছেন ‘সুন্দর নকশা’। ডিএম নাইম নামে আরেকজন লিখেছেন ‘অনেক সুন্দর’।
শনিবার (১৭ মার্চ) ৩য় টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কন্ট্রোলরুম, সিগন্যাল স্টেশন, ইমিগ্রেশনের মত গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রকল্পে জড়িত শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মব্যস্ততাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আবুধাবির ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। নতুন নতুন প্রযুক্তি ও সম্ভাবনা উন্মোচনের মাধ্যমে নির্মাণে আধুনিকতা নিয়ে এসেছে স্যামসাং সিঅ্যান্ডটির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন গ্রুপ।
এছাড়াও টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াঞ্জুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, ৩য় টার্মিনালের প্রায় ৬৪-৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অক্টোবরে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে সফট ওপেনিং হবে। এক বছরেই শেষ হবে সম্পূর্ণ কাজগুলো। টার্মিনাল-১ ও ২ চালু থাকা অবস্থায় ধীরে-ধীরে চালু হবে টার্মিনাল-৩।
তিনি আরও বলেন, ভেতরে তো আপনারা গিয়েছেন। ভেতরে আন্তর্জাতিক স্থপতিরা কাজ করেছেন। চমৎকার কাজ হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। দেখেন, এটা আমাদের দেশের সম্পত্তি। যেটা ঋণ আছে, সেটা জনগণের টাকায় শোধ হবে। সো, এটা আমাদের জনগণের এবং সরকারের থেকে করা। এটার গুরুত্ব, বাংলাদেশের এভিয়েশন সেক্টরে যে উন্নতি হচ্ছে, আমাদের দেশ যে উন্নতি হচ্ছে, কানেক্টিভিটি ফ্লাইট বাড়ছে, এটা তারই প্রমাণ। ভবিষ্যতে ইন-শা-আল্লাহ আমাদের দেশে একটা ‘হাব’ হবে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। একদিকে যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, অন্যদিকে আমরা আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যাতে যাত্রীরা আরও সমৃদ্ধ সেবা পায়। এটাই এখন আমাদের সবার মূলমন্ত্র।
থার্ড টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন অক্টোবরেই হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, অক্টোবরে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে এবং সেই লক্ষ্যেই কাজ আগাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) বৈঠকে প্রথমে ১৩ হাজার ৬১০ দশমিক ৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে একটি পৃথক আমদানি-রপ্তানি কার্গো হাউস স্থাপন ও নতুন ভিভিআইপি টার্মিনাল প্রকল্প কাজের কিছু অংশ বর্ধিত করায় মোট প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করা হয়।
পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) করা হয়েছে। তবে এ টার্মিনালের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন হবে মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিং। দুই লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া।
এরপর, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এর ব্যয়ে সরকারি কোষাগার থেকে যাবে ৫ হাজার কোটি টাকা। আর বাদ-বাকি অর্থ দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। প্রকল্পটি পরিচালনা করছে এডিসি। থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসাং।