নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিরাপত্তা বেষ্টনী ডিঙিয়ে পাসপোর্ট-টিকিট ছাড়াই এক শিশুর বিমানে উঠে যাওয়ার ঘটনায় দায়িত্বরত ১০ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, এই ঘটনায় যাদের গাফিলতি ছিল গতকালই প্রত্যেককে সাসপেন্ড (প্রত্যাহার) করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১০ জনকে চিহ্নিত করে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা ইমিগ্রেশন পুলিশ, এভসেক, কুয়েত এয়ারওয়েজ এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে পুরো ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবে।
এর আগে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে ফ্লাইটে পাসপোর্ট-বোর্ডিং পাস না নিয়েই কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে সিটে বসে যায় জোনায়েদ মোল্লা নামের শিশুটি। বিমান উড্ডয়নের প্রস্তুতি নেওয়ার আগ মুহূর্তে জানা যায় শিশুটি ফ্লাইটের যাত্রী নয়। এমনকি তার পাসপোর্ট কিংবা বোর্ডিং পাসও নেই। এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় সৃষ্টি হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
এমন ভূতুড়ে কেবিন ক্রু এবং যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে শিশুটিকে ফ্লাইট থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তবে পাসপোর্ট-বোর্ডিং পাস ছাড়া একজন শিশু কীভাবে উড়োজাহাজে উঠে গেল- এ ঘটনায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানা যায়, রাত ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট (কেইউ-২৮৪) উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন ১২ বছরের ছেলে শিশুটি প্লেনের ভেতরে হাঁটাচলা করছিল। কেবিন ক্রু শিশুটিকে সিটে বসার পরামর্শ দেন। তখন শিশুটি একটি সিটে বসে পড়ে। এক পর্যায়ে শিশুটি যেই সিটে বসেছিল পাশের সিটের যাত্রী শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে বসতে বলে। কিন্তু শিশুটি তার বাবা-মায়ের বিষয়ে কোনোকিছু বলতে পারেনি।
এ সময় পাশের সিটের যাত্রী বিষয়টি কেবিন ক্রুর নজরে আনলে কেবিন ক্রু তাকে বাবা-মার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। শিশুটি উত্তর দিতে পারেনি। তখন কেবিন ক্রুরা যাত্রী সংখ্যা গণনা করলে একজন যাত্রী বেশি পাওয়া যায়। পরে প্লেনের দরজা খুলে শিশুটিকে বিমানবন্দরের এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
যাত্রীদের অভিযোগ, বিমানবন্দরে কর্মরত প্রত্যেক কর্মী ডিউটি পাস ব্যবহার করে চলাফেরা করে। বাকি যারা যাত্রী তারা পাসপোর্ট এবং বোর্ডিং পাস দিয়ে চলাফেরা করেন। এছাড়া বিমানবন্দরে ঢুকে ইমিগ্রেশনসহ প্রায় ৮-১০টি ধাপ পেরিয়ে বিমানে চড়তে হয়। কোনো ধাপেও শিশুটিকে না আটকানোর বিষয়টি নিরাপত্তাহীনতার লক্ষণ।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনকল ও এসএমএসে চেষ্টা করেও বিমানবন্দরের মুখপাত্রের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া শিশুটি কোথা থেকে এসেছে, বিমানবন্দরে কীভাবে প্রবেশ করেছে, সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু জানা যায়নি।