অবশেষে বানের পানিতে তলিয়ে গেছে সরাইল-অরূয়াইল সড়ক। বৃহস্পতিবার থেকে ওই সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গত বুধবার থেকে পানির কারণে সড়কে ফেসে যাচ্ছিল যানবাহন।
বন্যা কেড়ে নিয়েছে সরাইলের ভাটি এলাকা খ্যাত তিন ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষের স্বপ্ন। এখন পানির স্রোতে সড়কটি হাওরে বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে স্বপ্নের এ সড়ক টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
সরজমিন দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে চুন্টা এলাকা থেকেই সড়কটির কিছু জায়গা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
আর ভূঁইশ্বর বাজার থেকে কালিশিমুল পর্যন্ত এক দেড় কিলোমিটার সড়কের উপর প্রায় আধা ফুট পানি। সড়কের উপরে পানির স্রোতের কারণে হাওর ও সড়ক চেনা দায়।
বাড়িঘরের সীমানা আন্দাজ করে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরবাইকসহ অন্যান্য যানবাহন গত বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে ঝুঁকি নিয়ে। রাতে পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল ভোর থেকে আর যানবাহন চলতে পারছে না।
স্থানীয়রা জানায়, বানের পানির তোড়ে এখন সড়কের পাশের বাড়িঘরও পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে। কারণ সড়কটি শুধু চলাচলের উপকারের পরেও ভাটি এলাকার মানুষের বাড়িঘর বন্যার ভাঙন থেকে রক্ষা করতো।
গত ১০ বছর ধরে চুন্টার লোপাড়া থেকে শুরু করে পাকশিমুল পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দারা সড়কটির কারণে ছিলেন মায়ের পেটে। বন্যার সময় রাত জেগে গরু ছাগল ও ঘরের মালামাল পাহারা দিতে হতো না। ডাকাতের কোনো ভয়ও ছিল না। পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে তো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন আফাল আসলে সড়ক ভেঙে হাওরের পানির সঙ্গে মিশে যাবে। সড়কের মাটি, ব্লক কোনো কিছুই ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
সড়কের পাশে বসবাসকারী সহস্রাধিক পরিবারের দুঃখ কষ্ট বেড়ে যাবে। ১০ বছর আগের চিত্রে ফিরে যাবে অরূয়াইল পাকশিমুলের মানুষ। সরাইল উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, সড়কের বর্তমান অবস্থা আমাদের জানা আছে। আমাদের কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি।
বৃহস্পতিবার জেলা অফিস থেকে লোকজন এসে পরিদর্শন করে গেছেন। আমরা আজ সেখানে বস্তা ফেলার ব্যবস্থা করবো। ২০১০ সালে হাওরবেষ্টিত অরূয়াইল-পাকশিমুল ও চুন্টা ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের সরাইল-অরূয়াইল সড়কটি নির্মিত হয়েছে।
সরাইল হাসপতালের মোড় থেকে সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটারেরও বেশি। নির্মাণের পর একাধিকবার সংস্কার কাজও হয়েছে। কাজে অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় অনিয়মের প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
সর্বশেষ সড়কটির ১২ কিলোমিটার জায়গায় ৩ জন ঠিকাদার ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে সংস্কার কাজ করেছেন। এ কাজেও ছিল অনিয়মের অভিযোগ।
নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও গত জুনে তড়িগড়ি করে ঠিকাদাররা তাদের অধিকাংশ বিলই উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। সড়কটি সংস্কারের পর শ্বাস ফেলতে পারেনি। এর আগেই বানের পানির নিচে চলে যেতে হলো। সড়কটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন শঙ্কিত ওই এলাকার বাসিন্দারা।