শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন

পানিতে ভেসে গেল ৪১ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
আপডেট : শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
পানিতে ভেসে গেল ৪১ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ
ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের ছবি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সাগর উপকূলে ৪১ কোটি টাকায় বেড়িবাঁধ পানির তোড়ে ভেসে যেতে বসেছে। ইতোমধ্যে দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর এ বেড়িবাঁধের ২০টি পয়েন্টে ব্লক ও মাটি সরে গেছে।

নির্মাণের এক বছরের মধ্যেই ভাঙনের কবলে পড়ে নতুন নির্মিত বেড়িবাঁধটি আবার বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ ও সংশ্লিষ্ট দফতরের তদারকির অভাবে বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

তবে আমাবস্যায় জোয়ার বৃদ্ধি ও প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে ব্লকের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় কারণে ব্লকগুলো স্থানচ্যুত হয়ে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরেজমিনে দেখা যায়, সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়কূল এলাকায় তিন স্থানে, জমাদারপাড়া এলাকায় সাত স্থানে ও আকিলপুর এলাকায় ১০ স্থানের ব্লক সরে গেছে। এর মধ্যে জমাদারপাড়া ও আকিলপুরের দুটি ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে বেড়িবাঁধের মাটি সরে যেতে শুরু করেছে।

স্থানীয়রা জানান, বাঁশবাড়িয়া উপকূলে বেড়িবাঁধ বিলীন অবস্থায় ছিল ১২ বছর। তখন বর্ষায় দিনে দুইবার জোয়ারের পানিতে ডুবত দুই ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের বাড়িঘর। ভোগান্তি পোহাতে হতো তাদের। দুই হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হত না। এলাকার পুকুর-জলাশয় ডুবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতেন স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন : স্কুল ভবনের পর এবার পদ্মায় বিলীন হলো ইউপি ভবন

আকিলপুর এলাকার বাসিন্দা বশির উদ্দিন বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণের সময় মাটিকে ভালভাবে চাপা হয়নি। তার ওপর বালি দিয়ে ব্লক বসানোর সময় প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। যে ব্লকের নিচে বসানো জিও চটটিও নিন্মমানের। কিন্তু সেদিন তাকে পাত্তাই দেয়নি। বরং তিনি ইঞ্জিনিয়ারের থেকে বেশি বুঝেন কি না এমন প্রশ্ন তুলেছেন। বছর যেতে না যেতে ভাঙনের শুরু।

জমাদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আকরাম আলী বলেন, আগের ১২ বছরের যন্ত্রণা তারা এখনো ভুলতে পারেননি। ব্লক সরে যাওয়া দেখে আগের আতঙ্ক চেপে ধরছে তাকে। দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, প্রায় ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হয়। নির্মিত বেড়িবাঁধটির দৈর্ঘ্য দুই হাজার ১৫০ মিটার ও প্রস্থ ৪ দশমিক ৩ মিটার।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, বেড়িবাঁধে বসানো ব্লকগুলো খুবই নিন্মমানের। ব্লকগুলো বানানোর সময় নিন্মমানের জিনিস দেখে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পাউবোর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান বলেন, গেল অমাবস্যায় জোয়ারের পানি এত বেশি হয়েছে যে বেড়িবাঁধের ওপরের অংশ ছুঁয়েছে। সে সঙ্গে প্রচণ্ড ঢেউয়ে একাধিক স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনিছ হায়দার খান বলেন, ব্লক সরে যাওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যদি সম্ভব হয় আপদকালীন সময়ের জন্য জিও ব্যাগ দিয়ে আপাতত ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে মেরামতেরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: