স্পোর্টস ডেস্ক :
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে প্রস্তুতি ঘাটতির কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ ফিল সিমন্স। প্রস্তুতি ঘাটতির বিষয়টি ফুটেও উঠল প্রবলভাবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে পাকিস্তান ‘এ’ দলের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। ম্যাচে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আইসিসির একাডেমি মাঠে ব্যাটি-বোলিং কোনো বিভাগেই প্রত্যাশিত পারফর্ম করতে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। আগে ব্যাটিং করে ৩৮.৪ ওভারে ২০২ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। পরে ৩৪.৫ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েই জয় নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান শাহিন নামধারী পাকিস্তান ‘এ’ দল।
ছোট লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে নেমে পাকিস্তান ‘এ’ দলের ব্যাটিং লাইনআপও প্রথম দিকে কিছুটা চাপে পড়ে। ৩৭ রানের মধ্যে বিদায় নেন পাকিস্তানের ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান ও তিনে নামা ওমাইর বিন ইউসুফ। ২৮ বলে ২৩ রান করে সাহিবজাদা আউট হন নাহিদ রানার বলে। ওমারইকে (১) শুরুতেই থামান মিরাজ।
তৃতীয় উইকেটে আজান আওয়াইস ও মোহাম্মদ হারিস কিছুটা সামাল দেন পরিস্থিতি। এই জুটি ৩২ রানে ভাঙেন তানজিম হাসান। তরুণ আজান ফেরেন ২০ রানে।
পরের জুটিতেই ম্যাচ প্রায় শেষ করে দেয় পাকিস্তান। হারিস ও মুবাসির খানকে আউট করতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো বোলার।
কিছুদিন আগে বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীর হয়ে ম্যাচের পর ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া হারিস এ দিন খেলেন ম্যাচ জেতানো ইনিংস। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৭২ বলে ৭৫ রান করে তিনি ক্রিজ ছেড়ে যান জয়ের খুব কাছে গিয়ে। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৪ বলে ৬৩ করে অপরাজিত থাকেন মুবাসির।
নাহিদ রানাকে দুই ওভারের বেশি বোলিং করাননি অধিনায়ক শান্ত। তাসকিন-মুস্তাফিজরা বোলিং করেন ৫ ওভার করে। নাসুম আহমেদ ছিলেন বেশ খরুচে।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দুর্দান্ত ব্যাটিং করা তানজিদ হাসান তামিম দুইবাইতে এসে ব্যর্থ। বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস ওপেন করতে নেমে ৬ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। আলি রেজার বলে বোল্ড হয়েছেন এই ওপেনার।
তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি শান্ত। তামিমের পথেই হেটেছেন অধিনায়ক। অথচ দ্রুত উইকেট হারানোর পর দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। উল্টো নিজের উইকেট বিলিয়ে দলকে আরো বিপদে ফেলেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। মুবাশ্বির খানকে ফিরতি ক্যাচ দেওয়ার আগে শান্তর ব্যাট থেকে এসেছে ১২ রান।
তামিম-শান্ত ব্যর্থ হলেও আরেক প্রান্তে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন সৌম্য সরকার। সদ্য সমাপ্ত বিপিএল দিয়ে চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন এই ওপেনার। তবে তার মাঠের পারফরম্যান্সে সেটার কোনো ছাপ ছিল না। সৌম্যের ব্যাটে ভর করেই শুরুর পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৬০ রান তোলে বাংলাদেশ।
ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি সৌম্য। কপালের দোষেই সাজঘরে ফিরতে হলো এই টপ অর্ডার ব্যাটারকে! রান আউটে কাটা পড়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৮ বলে ৩৫ রান।
সৌম্যের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন মেহেদি হাসান মিরাজ। চারে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন তিনি। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন তাওহিদ হৃদয়। তবে ১৯ রানের বেশি করতে পারেননি এই মিডল অর্ডার ব্যাটার।
হৃদয়ের বিদায়ের পরই ধস নামে বাংলাদেশের ইনিংসে। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা মিরাজ সাজঘরে ফিরেছেন হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশা নিয়ে। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৩ বলে ৪৪ রান। মিডল অর্ডারে ব্যর্থ মুশফিক-জাকের আলিরা। তাতে দেড়শর আগেই ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
দলের এমন বিপর্যয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন তানজিম সাকিব ও রিশাদ হোসেন। তবে ১৫ বলে ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি রিশাদ। আর সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ২৭ বলে ৩০ রান। তাছাড়া নাসুম আহমেদ করেছেন ১৫ রান। লেজের সারির ব্যাটারদের সম্মিলিত চেষ্টায় কোনোরকমে দুইশ ছুঁয়ে অলআউট হয়েছে টাইগাররা।
পাকিস্তান শাহিনসের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট শিকার করেন উসামা মীর। এ ছাড়াও মুবাসির খান দুটি, আলী রাজা ও সুফিয়ান মুকিম একটি করে উইকেট শিকার করেন।