তিনি একজন ভিক্ষুক। ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ভিক্ষা করে জমানো টাকা তিনি করোনা তহবিলে দান করেছিলেন। তার সেই মহানুভবতায় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার এমন মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাজিমদ্দিনকে জমিসহ পাকা বাড়ি উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
গত এপ্রিলের এঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় শেরপুর জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসন খাস জমি বন্দোবস্তসহ সেই পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছেন। রবিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে নতুন ঘরের চাবি নাজিম উদ্দিনের নিকট হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে দারুণ উচ্ছাসিত নাজিমুদ্দিন ও তার পরিবার। তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামন করেছেন। সেইসাথে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি দেখা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন : প্রতারণায় সিরাজগঞ্জের শাকিলের কাছে রিজেন্টের সাহেদও ফেল
করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে কর্মহীন মানুষের সহায়তায় গঠিত ইউএনওর ত্রাণ তহবিলে ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে আলোচনায় আসেন নাজিম উদ্দিন। নিজের ভাঙা ঘর মেরামতের জন্য ভিক্ষা করে দুই বছর ধরে জমিয়েছিলেন টাকাগুলো।
গত এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহের এঘটনাটি নজর কেড়েছিলো প্রধানমন্ত্রীর। দরিদ্র হলেও মহান এই দাতা ভিক্ষুককে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরকারি জমিতে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই বাড়িটিই রোববার জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব নাজিম উদ্দিনের নিকট হস্তান্তর করেন।
ঘরের চাবি তুলে দেওয়ার সময় জেলা প্রশাসক তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তোফায়েল আহমেদ, ঝিনাইগাতীর ইউএনও রুবেল মাহমুদ, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ওয়ারেজ নাইম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু এবং প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিন কক্ষের বিশাল পাকা বাড়ি। উপরে টিনের চাল। সাথে পাকা রান্নাঘর এবং আলাদা পাকা বাথরুম। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তার বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। সব মিলিয়ে একটি পরিপাটি আবাসস্থল প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন নাজিমউদ্দিন।
এ ছাড়া ১৫ শতক খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। বাড়ির পাশেই গান্ধীগাঁও বাজারে পাকা দোকান ঘর করে দেওয়া হয়েছে। যাতে নাজিম উদ্দিনকে আর ভিক্ষাবৃত্তি করতে না হয়। সেই দোকান ঘরটিও এদিন হস্তান্তর করা হয়।
নাজিম উদ্দিনের ঘটনাটি দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে তার জন্য সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, নাজিম উদ্দিন সাধারণ ভিক্ষুক হয়েও অসাধারণ কাজ করেছেন। তিনি করোনা তহবিলে নিজের ঘর মেরামতের জমানো অর্থ দান করে যে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে আমরা আজ জমিসহ নতুন বাড়ি তার নিকট হস্তান্তর করলাম। তার আয়ের জন্য একটি দোকানও করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান একটি ইজিবাইকও দিয়েছেন।
আশাকরি তিনি এখন থেকে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও শেরপুরবাসী কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।