টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি :
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলেছে। তবে এটি চালু হলেও ট্রেনের পূর্ণগতি ফিরতে সময় লাগবে আরও দুইমাস।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে ট্রেনটি টাঙ্গাইল ভূঞাপুর অংশের পূর্বপাড় থেকে ছেড়ে সিরাজগঞ্জের পশ্চিম অংশে যায়।
রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, একটি ইঞ্জিন ও তিন বগি নিয়ে ট্রেনটি সকাল ৯ টা ৪২ মিনিটে ভূঞাপুর অংশের পূর্বপাড় থেকে ছেড়ে সিরাজগঞ্জের পশ্চিম অংশে যায়। ট্রেনটি ১০টা ৪১ মিনিটে পূর্বপাড়ে ফিরে আসে। সিরাজগঞ্জ প্রান্ত থেকে অপর একটি ট্রেন একটি ইঞ্জিন ও তিন বগি নিয়ে সকাল ১০ টা ২০ মিনিটে পূর্ব প্রান্তে আসে ও ১০ টা ২৯ মিনিটে পশ্চিম প্রান্তের দিকে যাত্রা শুরু করে। প্রথমে ১০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করলেও পরে ৪০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন দুটি চলাচল করে। সেতুটির কাজ প্রায় পুরোপুরি শেষ হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করা হবে জানুয়ারিতে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ট্রেন চলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান।
তিনি জানান, আজ পরীক্ষামূলকভাবে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু দিয়ে ট্রেন চলেছে। সেতুটির কাজ পুরোপুরি শেষ। আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হবে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যায়ে।
এ সেতু দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী জানুয়ারিতে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
তবে এটি চালু হলেও ট্রেনের পূর্ণ গতি পেতে সময় লাগবে আরও দুই মাস।
এর আগে সোমবার (২৫ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, সেতুটির কাজ শেষ হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করা হবে আগামী জানুয়ারিতে। তবে পরীক্ষামূলকভাবে মঙ্গলবার দুপুরে রেলওয়ে সেতু দিয়ে ট্রেন চালানো হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর ব্যয় তখন ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ দশমিক ৭ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকায়। যার ১২ হাজার ১৪৯ দশমিক ২ কোটি টাকা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত সময় ছিল জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। কিন্তু প্রথম সংশোধনে এ সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৪ করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের আগস্টে ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।