নিজস্ব প্রতিবেদক :
করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণকে দেশের ব্যাংকিং খাতের বড় দুই সমস্যা বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নৈতিকতার অনুশীলন প্রয়োগ করতে হবে।
বুধবার (২৪ মে) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ সময় তিনি ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে উন্নীত করার কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, সফলভাবে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন করেছি। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প অর্জনের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস লেনদেন নিশ্চিত করা।
আব্দুর রউফ তালুকদার আরও বলেন, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। এরমধ্যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং বাংলা কিউআর অন্যতম। এখন এবিবির উদ্যোগে নতুন করে যুক্ত হলো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন। ব্যাংকিং নীতিমালা বাস্তবায়ন ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের শক্তিশালী ভূমিকা খেলাপি ঋণ সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে।
ব্যাংকিং খাতে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব ডেবিট কার্ড চালু করতে যাচ্ছে। আমরা নিজস্ব ডেবিট কার্ড চালু করার খুব কাছেই চলে এসেছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে ভিসা, মাস্টার কার্ডের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের ব্যাংকগুলোতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লেনদেন করতে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে। এতে প্রতি বছর দেশ থেকে মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে তারা লভ্যাংশ হিসেবে। বাংলাদেশের নিজস্ব ডেবিট কার্ড চালু হলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা কমে যাবে।
বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংকই কোর ব্যাংকিং সল্যুশন সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্বারপ্রান্তে চলে আসায় ব্যাংকিং খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়বে, বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ ও অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাব ব্যাংক খাতের জন্য বড় সমস্যা। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, ব্যাংকিং কার্যক্রমে নৈতিকতার চর্চা, ব্যাংককর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সুশাসন এই সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বর্তমান অর্থনীতির সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ। একই সঙ্গে করপোরেট সুশাসন নিশ্চিতেরও বিকল্প নেই।
গভর্নর বলেন, দেশের ব্যাংক খাতের অস্বস্তির বিষয় খেলাপি ঋণ। এটা কমাতে ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় যাঁরা আছেন, তাঁদের বিশেষ করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। শীর্ষ কর্তারা শক্তভাবে পদক্ষেপ নিলে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের সমস্যা কমে আসবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘দূরদর্শী নীতিমালা’ প্রণয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আরও বলেন, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানো ও করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এটা করতে হলে আলাদা করে পরিকল্পনা করতে হবে এবং কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের ডিজিটাল রূপান্তরের যে চেষ্টা চলছে, তার জন্য শক্তিশালী ঝুঁকি মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে, যাতে রূপান্তরের এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের বিকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়।
তবে এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন, এ কথা উল্লেখ করে গভর্নর আব্দুর রউফ বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে ব্যাংকের ব্যবসার বৈচিত্র্য বাড়বে। এটি দেশকে নগদ টাকার লেনদেনবিহীন স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখবে। এই যাত্রায় দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান গভর্নর।
দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংকগুলো যে কৌশল গ্রহণ করতে পারে তা বিশ্লেষণ করে মূল্যবান পর্যবেক্ষণ দেওয়া এ সামিটের লক্ষ্য। এতে আর্থিক সেবাখাতকে প্রভাবিত করে এমন বিদ্যমান নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো নিয়ে গবেষণায় জোর দেওয়া হবে। এ শিল্পের স্টকহোল্ডার, ইকোসিস্টেম এনাবেলার্স ও নীতি নির্ধারকদের এগিয়ে যাওয়ার পথে সুপারিশ দিয়ে এ সম্মেলন সহযোগিতা এবং একীভূত লক্ষ্য অর্জনে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে বৃদ্ধি করেছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এবিবি’র চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, একটি সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি একটি টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইকোসিস্টেম তৈরি করতে পারে, যা সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের জন্য উপকারী হবে।
সম্মেলন নিয়ে এবিবি’র চেয়ার সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, এবিবি ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সামিট বাংলাদেশে ডিজিটাল আর্থিক সেবার প্রবৃদ্ধিকে তরান্বিত করা প্রধান গতিধারাগুলো সম্পর্কে মূল্যবান পর্যবেক্ষণ দেবে।