বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ন্যূনতম সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি টু থার্ড মেজোরোটি নিয়ে সংসদে যাবে : রুমিন ফারহানা রেকর্ড গড়ে ৭ বছর পর জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট হারল বাংলাদেশ একদিনের ব্যবধানে কমলো সোনার দাম কাশ্মীর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার মেয়ের জন্য দুবাইয়ে বাড়ি কিনলেন অভিষেক-ঐশ্বরিয়া! গণতন্ত্রের লড়াকুরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে : রিজভী টেস্ট চলাকালে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে বিসিবি কর্মকর্তার মৃত্যু সৎ মায়ের মামলায় মেহের আফরোজ শাওনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা সচিবলায় বসে সুবিধা নিচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসররা : মির্জা আব্বাস

ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিলে গণতন্ত্রের কবর রচিত হবে : তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫
ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিলে গণতন্ত্রের কবর রচিত হবে : তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিলে গণতন্ত্রের কবর রচিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বুধবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চয়ালি যুক্ত হয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিলে গণতন্ত্রের কবর রচনা হবে। এতে দেশ ইমেজ সংকটে পড়বে।

‘ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিলে গণতন্ত্রের কবর রচিত হবে’ মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎ এবং চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা পরিচয় দিলে, উগ্রবাদী জনগোষ্ঠী এবং পরাজিত অপশক্তি দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে। অপরদিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বে ইমেজ সঙ্কটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চরিত্র সমুন্নত রাখতে চরমপন্থা এবং ধর্মীয় উগ্রবাদী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। পাশাপাশি গণহত্যাকারী পলাতক মাফিয়া চক্রকে যেকোনো মূল্যে বিচারের সম্মুখীন করার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষে শক্তির আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এটাই।

রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের সকলের চিন্তা, ভাবনা হয়তো এক নয়। আমাদের মধ্যে ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তা রয়েছে, ভিন্ন দল-মত-দর্শন রয়েছে। তবে মতে ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু সবাই একসাথে বসেছি। এটাই আমাদের বাংলাদেশ। এইটি আবহমানকালের ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের এক অনন্য প্রতিফলন। তবে দুঃখজনকভাবে গত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসন শোষণে দেশের শুধুমাত্র শিক্ষাব্যবস্থা, রাজনীতি, অর্থনীতি এসব কিছুকেই ধ্বংস করে দেয়নি, বরং বাংলাদেশের আবহমানকালের ধর্মীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকেও ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সামাজিক সম্প্রতি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে নষ্ট করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একটি রাষ্ট্র এবং সমাজের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক সম্প্রীতি ও মূল্যবোধ যদি বিনষ্ট করে দেয়া যায়, তখনই সমাজব্যবস্থা অবক্ষয়গ্রস্থ, ভঙ্গুর, নিষ্ঠু এবং অমানবিক হয়ে ওঠে। ভঙ্গুর রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থা উগ্রবাদ আর চরমপন্থা বিকাশের এক উর্বর ভূমিতে পরিণত। সাম্প্রতিক সময় হঠাৎ করে অতীতের মতন দেশে পুনরায়, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। নারীদেরকে নিরাপত্তাহীন রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। সরকার, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি, কিংবা অন্য কোনো কাজে বেশি মনোযোগী থাকার কারণে আমাদের মা, বোন, মেয়েদের নিরাপত্তা সঙ্কটে পড়েছে কিনা এ বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গণতন্ত্র, মানবাধিকার আর জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় জুলাই আগস্টে বীর জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে মাফিয়া সরকার পালিয়েছে। মাফিয়া সরকারের পতনের পর সাত মাস পার হয়েছে। দীর্ঘ দেড় দশক মাফিয়া শাসন শোষণে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ মেরামতের জন্য হয়তো এটা খুব বেশি সময় নয়। তবে আগামী দিনগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম কিংবা কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা জনগণের সামনে আরো স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট হলে জনমনে থাকা সকল সন্দেহের অবসান হতো।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘শুধুমাত্র একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যই মাফিয়া সরকারের পতন ঘটেনি-এ কথা যেমন সত্য, তার চেয়েও আরো চরম সত্য হয়তো একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন না করার জন্যই মাফিয়া সরকারের নির্মম পতন হয়েছিল। সুতরাং একটি নির্বাচনকে শুধুমাত্র কোনো একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়ার বিষয় হিসেবেই বিবেচনা করার অবকাশ নেই। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণ যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার সুযোগ পান। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদ এবং সরকার গঠিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সর্বোপরি, প্রতিটি সফল ও কার্যত নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারের সাথে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারের চুক্তি, নবায়িত রাষ্ট্রের সাথে জনগণের মালিকানা সম্পর্ক গভীরতর হয়। রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে স্বোচ্চার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা, এমনকি দু’একটি রাজনীতিক দলকেও জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে ইদানিং কিছুটা ভিন্ন সুরে কথা বলতে শোনা যায়। আমরা মনে করি জনপ্রত্যাশার প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তোর নামে গৌণ ইস্যুকে মুখ্য করে, অকারণে সময়ক্ষেপনের চেষ্টা হলে, সেটি জনমনে ভুল বার্তা পৌঁছলে, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা এবং সরকারের কার্যক্রমের প্রতি জনগণের আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হলে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠারকরণে যাত্রা পথ বিপদ-সংকুল হয়ে উঠতে পারে। অপরদিকে এ ধরনের পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত পলাতক মাফিয়া চক্রের দোসরদের পুররুদ্ধারের পথকে সুগম করবে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ প্রতিটি রাজনৈতিক দল মনে করে, সংস্কার এবং নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন। সুতরাং সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করার কোনোই প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নীতি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী এবং কার্যকর করার উপায় শুধুমাত্র সংস্কারের উপরে নির্ভর করে। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নীতি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হয় প্রতিদিনের গণতান্ত্রিক চর্চার ওপরে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদরাই রাষ্ট্র এবং সরকার পরিচালনা করেন। জনগণের বিচার বুদ্ধির ওপরে আস্থায়ীনতার প্রয়াস শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে দুর্বল এবং প্রশ্ন বিদ্ধ করবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রে সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট, কিন্তু দেশের রাজনৈতিক নীতি কিংবা রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা দীর্ঘস্থায়ী, দীর্ঘ মেয়াদ। সুতরাং রাজনৈতিক পরিক্রম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী এবং টেকসই কার্যকর রাখতে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন জনগণ এবার নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে প্রস্তুত।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রস্তাবগুলো এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে গেছে। আমি অনুরোধ করবো সেগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তারপর মতামত দিন। যাতে সবাইকে নিয়ে সামনের পথ এগোতে পারি।

তিনি বলেন, আজকে আমরা অত্যন্ত কঠিন সময় অতিক্রম করছি। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশ পেলেও এখনো গণতন্ত্রের দিশা খুঁজে পাচ্ছি না। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশই বাংলাদেশের মূল আকাঙ্ক্ষা।

ঐক্যে জোর দিয়ে ফখরুল বলেন, এ মুহূর্তে ঐক্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো নিরসন করা। বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে দলের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

গণতন্ত্রের পথে যাওয়ার বিকল্প নেই বিএনপি মহাসচিব বলেন, দ্রুত নির্বাচনের কথা পরিষ্কারভাবে বলছি কারণ জনগণের নির্বাচিত সরকার গঠন করা যায়। নির্বাচিত সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে।

বিএনপির ইফতার মাহফিলে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ইফতার মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিকর চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিজেপি মহাসচিব আবদুল মতিন সুদ প্রমুখ অংশ নেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া