পাথরঘাটার জেলে মনির। বেতাগী উপজেলার ঝোপখালী গ্রামের মো. মিরন, শানু হাওলাদার, কাঠালিয়া উপজেলার নদীতীরবর্তী জেলে আহমদ আলী এবং বাকেরগঞ্জের নেয়ামতির কালিচরণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা ধরেন ইলিশ, কিন্তু খান পাঙ্গাশ। অভাব তাদের ইলিশ খেতে দেয় না।
বরগুনার পাথরঘাটার হরিণঘাটায় বিষখালী মিলেছে বঙ্গোপসাগরে। আবার ধানসিড়ি, সুগন্ধা নদী ও গাবখান চ্যানেল যেখানে মিলেছে, সেখানে উৎপত্তি বিষখালীর। এর দুই তীরে বরিশাল, ঝালকাঠি ও বরগুনার আটটি উপজেলা। মোট ১১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীটির। তবে বিষখালীকে বেশি পেয়েছে বরগুনা। বিষখালী সেই গুটিকয় জলাধারের একটি, যার মধ্য দিয়ে স্বাদু পানিতে ডিম ছাড়তে বের হয় মা ইলিশ। এ কারণে সারা বছরই নদীটিতে কমবেশি ইলিশ মেলে।
নদীর তীর ধরে হাজার হাজার জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীর বাস। তবে তাঁরা ভালো নেই। কারণ অনেক। আঠারো শতকে কম্পানির আমলে যখন প্রথম এখানে জেলেপল্লী গড়ে ওঠে, তখন সংখ্যাটি ছিল এখনকার তুলনায় অনেক কম।
বরগুনাকে ইলিশের জেলাও বলা হয়। এখানকার পাথরঘাটায় রয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) পরিচালিত দেশের বৃহত্তম মৎস্য বন্দর ও পাইকারি বাজার। কোটি কোটি টাকার মাছ এখানে কেনাবেচা হয়। অনেক রকম মাছই বিক্রি হয় বাজারে, তবে ইলিশই প্রধান আকর্ষণ। মানুষ জানে, মাছের রাজা ইলিশ।
তবে স্বাদের রাজা যে বিষখালীর ইলিশ, তা বেশি লোকের বুঝি জানা নেই। বরগুনার জেলা প্রশাসন গতবারই (২ অক্টোবর) প্রথম ইলিশ উৎসব করেছিল। এবারও হচ্ছে। দেশের তো বটেই, বিদেশ থেকেও ক্রেতা, বিক্রেতা, জেলে, ব্যবসায়ী বা দর্শনার্থী যোগ দেয় এই উৎসবে।
আরও পড়ুন : ১১ দিনে ৫০৩ মেট্রিক টন ইলিশ গেল ভারতে
বিষখালীর ইলিশ কিনতে ক্রেতারা কেজিতে সাড়ে তিন শ টাকা বেশি গুনতেও রাজি থাকেন (সাগরের ইলিশের তুলনায়)। স্বাদের কারণেই বিষখালীর ইলিশের দাম চড়া থাকে। এই মাছ হয় হৃষ্টপুষ্ট। গায়ে তেল বেশি। চওড়া বেশি। রান্নায় ঘ্রাণ মোহিত করে প্রতিবেশীকে। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বিষখালীর ইলিশ খুবই স্বাদের মাছ। আমি অনেক খেয়েছি।
মোটমাট এক লাখ টাকা দাদন (বাস্তবে গ্রহীতার জন্য ধার আর দাতার জন্য বিনিয়োগ) নিয়েছেন মনির। পাথরঘাটা শহরের এক আড়তদারের কাছ থেকে। প্রথমে নিয়েছিলেন ২৫ হাজার টাকা। খরচ করেছেন মাছ ধরার জাল কিনতে ও মেরামত করতে। পরের বছর এর সঙ্গে আরো ২৫ হাজার যোগ হয়। পরের বছর আরো ৫০ হাজার।
মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত নৌকার মেরামত ও জাল কিনতে খরচ হয়েছে সেই টাকা। আড়তদার টাকা পরিশোধে চাপ দেয় না। মাছ পেলে কিনে নেয় পাইকারি দরে। দাদনের কারণে চুক্তিবদ্ধ জেলে আড়তেই মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হয়। অসুখবিসুখ বা জরুরি টাকার দরকার পড়লে আড়তদারই ৫-১০ হাজার টাকা ধার দেয়।
প্রতিবারের মাছের দামের সঙ্গে ওই বাড়তি টাকা সহনীয় হারে উসুল করা হয়। বিক্রয়কালে এক মণ মাছ সমান ৪২ কেজি। এটাকে বলা হয় পাকা মাপ। মনির বলেন, দাদনের গোলকধাঁধা থেকে বের হতে অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু এ পেশায় থাকলে এটাই নিয়তি।