নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের উপজেলা নির্বাচনের কেন্দ্রগুলো খা খা করছে, কোনো ভোটার সেখানে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কোনো ভোটার সেখানে যায়নি।
বুধবার (৮ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা’ আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজ দেশে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। টেলিভিশনে দেখাচ্ছে কেন্দ্রগুলো খা খা করছে। কোনো ভোটার সেখানে যায়নি। কেন এই অবস্থা হলো? কেন আজ দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে না? কেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বিলুপ্ত হলো? কেন দেশে আইনের শাসন নাই, মৌলিক অধিকার নাই? যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ডা. জাফরুল্লাহ ও আমরা যুদ্ধ করেছিলাম কোথায় গেলো সেই সামাজিক মূল্যবোধ, মানবিক মর্যাদার মূল্য, সবার জন্য সুবিচার? বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের কারণে এসব বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই আজ আবার দরকার ডা. জাফরুল্লাহ মতো ব্যক্তিদের।
হাফিজ বলেন, বাঙালিরা ১৯৩৭ সাল থেকে ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচিত করে এসেছে। আজকে দেশে গণতন্ত্র নির্বাসনে ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আজকে দেশে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে, টেলিভিশনগুলোতে দেখাচ্ছে। কেন্দ্রগুলো খাঁ খাঁ করছে, কোনো ভোটার সেখানে যায় নাই। কেন এই অবস্থা হলো? কেন মানুষ ভোট দিতে পারে না? কেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বিলুপ্ত হলো? কেন দেশে আইনের শাসন নাই? কেন মানুষের মৌলিক অধিকার নাই। কারণ ভোট ব্যবস্থাকে ওরা ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজ বাংলাদেশে সমস্ত প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। গুম-খুন-দুর্নীতির কারণে আমরা একটা নিচ জাতিতে পরিণত হয়েছি। আজ সবাই আছে হালুয়া-রুটির চিন্তায় আর রাজনৈতিক দলগুলো আছে ক্ষমতার চিন্তায়। কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে আর কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়। একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। আমাদের সেই যুদ্ধ কি ব্যর্থ হয়ে গেলো?
ফিলিস্তিনের গাজা ইসরায়েলি বাহিনী নৃশংস বর্বর হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, কোথায় আজ আমাদের ছাত্র সমাজ, কোথায় আমাদের তরুণরা, কোথাও কোনো প্রতিবাদ তো দেখি না। খোদ আমেরিকাতে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আর আমরা মুসলমান বলে দাবি করি- আমাদের মধ্যে কোনো প্রতিবাদ দেখি না। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের সব প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গুম, খুন ও দুর্নীতির ফলে একটা নির্জীব জাতিতে পরিণত হয়েছি। এখন আর একাত্তরের মতো অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দেখা যায় না।
তিনি আরও বলেন, আজ ছাত্রদের সামনে, তরুণ যুবকদের সামনে কোনো রোল মডেল নেই। হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পরে একজন উপন্যাসিক, একজন ভালো কবি, সাহিত্যিকের নাম বলতে পারবেন না। নাই। বাংলাদেশে একটা মন্দা সমাজ চলছে, নষ্ট সমাজ বিরাজ করছে, রাজনৈতিক অঙ্গন তো অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। আজ দেশ ও সাধারণ মানুষের চিন্তা ছাত্র সমাজের মধ্যে নেই, যুবকদের মধ্যে নেই। সবাই আছে হালুয়া-রুটির লোভে আর রাজনৈতিক দলগুলো আছে শুধু ক্ষমতার চিন্তায়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমাদের স্মরণীয়-বরণীয় একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন বিচিত্র ব্যক্তি। তিনি কোনো দল করতেন না। তার স্পষ্টভাষী ব্যক্তি আমার চোখে তেমন একটা পড়েনি। যেটিকে তিনি ন্যায্য মনে করতেন সেটিকে তিনি নিঃসংকোচে উচ্চারণ করতেন। তার কথা যখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেতো তখন আমরা বিএনপির সবাই হাততালি দিতাম। আবার যখন তার কথা যখন বিএনপির বিরুদ্ধে যেতো তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খুব উল্লাসিত হতো। যখন যা বলার প্রয়োজন তিনি তখন সেটা নির্ভয়ে নিঃসংকোচে বলেছেন। তার চোখের সামনে ছিল দেশ। তিনি দেশের স্বার্থে কথা বলেছেন। জনগণকে লক্ষ্য করেই তিনি বক্তব্য রাখতেন।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের সমাজ আজ একটি বন্ধ্যা সমাজ, নষ্ট হয়ে গেছে। রাজনৈতিক অঙ্গন তো অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। রাজনীতিবিদরা কখনো ডা. জাফরুল্লাহকে পছন্দ করতেন না। তারা স্পষ্টবাদী লোক কখনো পছন্দ করতেন না। তারা সবাই নিবেদিত ক্রীতদাস পছন্দ করেন।
হাফিজ বলেন, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন একজন গণতন্ত্রমনা মানুষ। গণতন্ত্রের স্বার্থে তিনি দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবসময় ন্যায্য কথা বলেছেন। যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তিনি সবকিছু ফেলে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছিলেন সেই গণতন্ত্র আজ দেশ থেকে নির্বাসিত। বাঙালিরা ১৯৩৭ সাল থেকে ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করে এসেছেন। কিন্তু আজ দেশের গণতন্ত্র নির্বাসনে, ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফজলুর রহমান, সাবেক সাংসদ রুমিন ফারহানা, সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, নাসির উল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মিণী শিরিন হক ও ছেলে বারিশ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।