স্পোর্টস ডেস্ক :
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বড় ভরসা কে? নির্দ্বিধায় সবার মুখে নিশ্চয়ই তাওহীদ হৃদয় আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নাম–ই আসার কথা। সে দুজন সোমবার (১০ জুন) টাইগারদের বড় সময় ধরে পথ দেখিয়েছেন। হৃদয়-মাহমুদউল্লাহ’র ৪৪ রানের দুর্দান্ত জুটিতে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ও প্রায় ধরা দিচ্ছিল। কিন্তু না, একেবারে তীরে এসে তরী ডোবাল বাংলাদেশ।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে জয় আছে। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কখনও হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তো টি-টোয়েন্টিতে এর আগে কখনও জয় পায়নি বাংলাদেশ। আগের আটবারের দেখায় হেরেছে সবকটিতে। অবশেষে ইতিহাস গড়ার সুযোগ এসেছিল বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে। হলো না। নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে রুদ্ধশ্বাস এক লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৪ রানে হেরে গেলো বাংলাদেশ।
১১৪ রান তাড়ায় নেমে প্রথম ওভারে কিছুটা চাপে পড়া বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ওভারেই ভালো কিছুর বার্তা দেন তানজিদ হাসান তামিম। টানা দুই বলে কাগিসো রাবাদকে বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। কিন্তু শেষ বলে গিয়ে আউটও হয়ে যান তানজিদ। রাবাদার বলে শট খেলতে গেলে তার ব্যাট ছুয়ে যায় ডি ককের হাতে। ৯ বলে ৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন তানজিদ।
এরপর লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংসের হাল ধরেন ওপেনিংয়ে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু তাদের ২৫ বলে ২০ রানের জুটি ভেঙে যায় পাওয়ার প্লের ঠিক পরের বলে। ১৩ বলে ৯ রান করে কাভারে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন দাস। বল হাতে স্রেফ এক ওভার করা সাকিব আল হাসান বোলিংয়েও ভালো কিছু করতে পারেননি।
এনরিখ নরকিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরের বাউন্সারে পুল করতে যান তিনি। কিন্তু ৪ বলে ৩ রান করে ক্যাচ দেন মিড অফে দাঁড়ানো মার্করামের হাতে। আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত করা তাওহীদ হৃদয় এদিনও ইনিংসের তৃতীয় বলেই ছক্কা হাঁকান।
কিন্তু নরকিয়া পরের ওভারে এসে শান্তর উইকেট তুলে নিলে ফের চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ২৩ বলে ১৪ রান করে বাংলাদেশ অধিনায়কও শিকার হন নরকিয়ার বাউন্সারের। এরপর উইকেটে এসে হৃদয়ের সঙ্গী হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
তিনি কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়া পান। তার বল স্লিপে অল্পের জন্য ধরতে পারেননি ইয়ানসেন। হৃদয়-রিয়াদের জুটিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকে বেশ ভালোভাবে। কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বদলে যায় ম্যাচের মোড়।
১৭তম ওভারে বর্টম্যানের বল রিয়াদের প্যাডে লেগে বল চলে যায় বাউন্ডারির বাইরে। কিন্তু এর আগেই আউট দেন আম্পায়ার। পরে রিভিউ নিয়ে মাহমুদউল্লাহ বাঁচলেও বল ডেড হয়ে যাওয়ায় চার রান পায়নি বাংলাদেশ।
এরপর আরও একবার আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত যায় বাংলাদেশের বিপক্ষে। ১৮তম ওভারে রাবাদার অল্প আবেদনে সাড়া দিয়ে তাওহীদ হৃদয়কে এলবিডব্লিউ আউট দেন আম্পায়ার। কিন্তু পরে রিভিউতে দেখা যায়, আম্পায়ারস কলের শিকার হয়ে ফিরতে হচ্ছে হৃদয়কে। দুই চার ও সমান ছক্কায় ৩৪ বলে ৩৭ রানে আউট হন তিনি।
তার বিদায়ের পর উইকেটে এসে টানা তিনটি ডট বল খেলেন জাকের আলি। ১৮তম ওভারে হৃদয়ের উইকেট নিয়ে স্রেফ ২ রান দেন রাবাদা। শেষ দুই ওভারে ১৮ রান দরকার হয় বাংলাদেশের। ১৯তম ওভারে কোনো বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ ও জাকের।
শেষ ওভারে ১১ রানের সমীকরণ দাঁড়ায়। বল হাতে নেন কেশভ মহারাজ। নিজের প্রথম ৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে ১ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। শেষ ওভারে এসে প্রথম বলেই দেন ওয়াইড।
এরপর দ্বিতীয়টিতে সিঙ্গেলস নিয়ে দেন রিয়াদ। তৃতীয় বলে ফুলটস পেয়েও বাউন্ডারি হাঁকাতে ব্যর্থ হন জাকের। ওই বল থেকে আসে দুই রান। পরের বলে জাকের ৯ বলে ৮ রান করে আউট হয়ে যান ক্যাচ দিয়ে। পঞ্চম বলে স্ট্রাইক পাওয়ার পর ফুলটস পেয়ে যান রিয়াদ। লং অনের উপর দিয়ে তুলে মারেন তিনি।
কিন্তু অল্পের জন্য বাউন্ডারির ঠিক সামনে থেকে দারুণ এক ক্যাচ নেন মার্করাম। শেষ বলে ফুলটস পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশকে ম্যাচটা হারতে হয় স্রেফ ৪ রানে। লেগ বাইতে মাহমুদউল্লাহর না পাওয়া চারের গুরুত্ব আরেকটু বেশিই হয়তো টের পাওয়া গেছে ম্যাচের শেষে!
দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশভ মহারাজ ২৭ রান দিয়ে নেন ৩টি উইকেট। ২টি করে উইকেট কাগিসো রাবাদা আর এনরিখ নরকিয়ার।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়াদের হয়ে ইনিংস শুরু করতে নামেন কুইন্টন ডি কক ও রেজা হেনড্রিকস। গত ম্যাচের মতোই বাংলাদেশের বোলিং ইনিংস আজও ওপেন করেন তানজিম হাসান সাকিব। প্রথম ওভারে কুইন্টন ডি ককের কাছে টানা ছয়-চার হজম করেন তানজিম হাসান সাকিব।
শেষ বলে স্ট্রাইকে আসেন রেজা হেনড্রিক্স। বাংলাদেশি বোলারের মুখোমুখি হয়ে নিজের প্রথম বলেই আউট হন তিনি। তানজিমের এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। দলীয় ১১ রানে প্রথম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকার। নিজের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে আরেকবার দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং অর্ডারে আঘাত করলেন তানজিম হাসান সাকিব।
আগের ওভারে তাকে টানা ছয়-চার মারা কুইন্টন ডি ককের অফস্টাম্প ভাঙেন বাংলাদেশি পেসার। তৃতীয় বলে পুল করতে গিয়ে প্রোটিয়া ব্যাটার বলে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি। ১১ বলে ১৮ রান করেন ডি কক। তাতে প্রোটিয়াদের ১৯ রানে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ।
এরপর প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম ও ট্রিস্টান স্টাবস মিলে শুরু ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে দলীয় ২৩ রানে আরও জোড়া উইকেট হারিয়ে বিশাল চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৮ বলে ৪ রান করা মার্করামকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন আহমেদ। আর স্টাবসকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান তানজিম সাকিব।
তাতে ২৩ রানে চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে প্রোটিয়ারা। সেখান থেকে চাপ সামলিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন হেনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। ৭৯ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। তবে দলীয় ১০২ রানে ক্লাসেনকে আউট করে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন। সাজঘরে যাবার আগে ৪৬ রান করেন তিনি।
এরপর রিশাদের ঘূর্নিতে দ্রুত ফেরেন মিলারও প্যাভিলিয়নে যাবার আগে ২৯ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৩ রান সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
তানজিম সাকিব ৪ ওভারে ১৮ রান খরচায় নেন ৩টি উইকেট। তাসকিন সমান ওভারে ১৯ রানে নেন ২টি। রিশাদ হোসেন ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট।