নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দেশ ও স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাস নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে শপথ’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমানের ভয়েস সরকারের হাতে এসেছে। তিনি বলছেন কারফিউ ভঙ্গ করো, না হলে পদ ছাড়ো। বিএনপির আরেক নেতা বলেছেন, ‘তোমরা আন্দোলনে ঢুকে যাও, নৈরাজ্য সৃষ্টি করো। এভাবে কোনো রাজনৈতিক দল দেশের ক্ষতি করতে পারে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে অভিযোগ করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের ওপর এই হামলা তারেক রহমানের নির্দেশে হয়েছে। গতকাল একজন স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে ছাত্রলীগ মারলে ৫ হাজার টাকা, পুলিশ মারলে ১০ হাজার টাকা। সামাজিক মাধ্যমে দেখেছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী কীভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন তাদের তরুণ নেতাকর্মীদের যে, এখানে ঢুকে পড়ো এবং তারেক রহমান নির্দেশ দিচ্ছে যে কারফিউ ভাঙো না হয় পদত্যাগ করো, সেই অডিও রেকর্ড সরকারের কাছে আছে।
ড. হাছান বলেন, গত বছরের ২৮ অক্টোবর যারা ঢাকায় অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যে জড়িত ছিল তাদের বড় বড় পদ দেওয়া হয়েছে। এবারও বলে দেওয়া হয়েছিল যারা এ ধরনের কাজ করবে, অগ্নিসংযোগ করবে, মানুষ মারবে, পুলিশ মারবে, ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে তাদেরকে বড় বড় পদ দেওয়া হবে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল? এটি একটি দেশবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন।
তিনি বলেন, কোটা নিয়ে যে সমস্যা সেটি সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমেই সমাধান হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা যা চেয়েছে তার চেয়ে বেশি পেয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা ৫ শতাংশ থাকলেও আমার ধারণা এক থেকে দেড় শতাংশ পূরণ হবে, তাহলে বাকিটা মেধায় যাবে। আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার কোটা থাকলেও সবাইকে মেধার ভিত্তিতে শেষ ধাপে যেতে হয়।
মৃত্যু নিয়ে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে, সেই প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন।
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে ভাঙচুর প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, দুর্যোগের সময়ে মানুষ যে মন্ত্রণালয়ে ছুটে যায়, সেই ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। ঢাকাবাসীর গর্ব, দেশবাসীর গর্ব মেট্রোরেল জ্বালিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি, সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে সমাধান হবে। আমরা শেষ পর্যন্ত দেখেছি সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমেই সমাধান হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যা চেয়েছিল, তার থেকে বেশিই পেয়েছে। কোটা থাকলেও সবাইকে মেধার মাধ্যমে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। সাধারণ ছাত্রছাত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে। যদি শিক্ষার্থীরা একটু ধৈর্য ধরতো, তাহলে বিএনপি-জামায়াত এই সুযোগটা পেত না।
তিনি আরও বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা আন্দোলনকারীদের রক্ষা করেছে। লক্ষ্য করে দেখুন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ মারা যায়নি, সব বাইরে হয়েছে। অর্থাৎ, এর সঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবির কোনো শিক্ষার্থী জড়িত নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়েছেন কেউ হয়রানির শিকার হবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ছাত্রনেতাদেরও খোঁজ নেওয়া দরকার তাদের মধ্যে দেশবিরোধী অপশক্তি জঙ্গিগোষ্ঠীর কোনো এজেন্ট ঢুকেছে কিনা? আন্দোলনের নামে এক হাজারের বেশি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লা পরিষ্কার করার গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি রাষ্ট্রদূতদের ধ্বংসযজ্ঞ দেখানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূত নিজে বলেছেন— ইটস শেইম। তার আইডি হ্যাক করা হয়েছে, বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের আইডি হ্যাক করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার কোটা পুনর্বহাল করেনি। ২০১৮ আমাদের সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছিল। সে অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে আপিল করেছিল। হাইকোর্ট ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপনকে বাতিল করে রায় দেয়। এটি হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত, সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। সরকার সাথে সাথে আপিল বিভাগে গেলে হাইকোর্টের রায়কে স্থগিত করে দেওয়া হয় এবং ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন বহাল হয়। সরকার পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, যেটি আমাদের সংবিধান ও আইন মতে যদি কোনো বিষয় সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকে সরকারের পক্ষে নির্বাহী ক্ষমতায় কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। সরকারের পক্ষ থেকে সেটি আমরা বারবার বলেছি।
প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেছেন,‘শিক্ষার্থীরা হতাশ হবেননা’। কিন্তু দেখলাম প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আধা ঘণ্টা পরেই শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কিন্তু, পরে উচ্চ আদালতের রায়ে সমস্যার সমাধান হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যা চেয়েছিল; তার চেয়ে বেশি পেয়েছে। রায়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রাখা হলেও বাস্তবে তারা এক-দুই শতাংশের বেশি পাবে না। তাহলে বাকিটাও মেধাতে যাবে। কোটা থাকলেও সবাইকে মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষার শেষ ধাপে যেতে হয়। শেষ ধাপে যেতে পারে মাত্র দুই শতাংশ শিক্ষার্থী। তারপরেই তাদের ক্ষেত্রে কোটা প্রয়োগ হয়। কিন্তু কোটার বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে। কিন্তু, এরপরেও পত্র-পত্রিকায় নানা ধরনের বিবৃতি ও আহবান দেখি।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী এই নির্মমতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অনেক সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীও যে ঘটনার স্বীকার হয়নি তা নয়। সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিচার আওতায় আনা হবে- এই প্রতিশ্রুতি শেখ হাসিনা দেশের জনগণকে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিমের সভাপতিতে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মো.মহিববুর রহমান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক,জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।