Dhaka বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকার বস্তিবাসী-রিকশাওয়ালা-দিনমজুর সবাই ফ্ল্যাটে থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকার বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিচ্ছি। যে বস্তিতে যেরকম ভাড়া সেরকম ভাড়াই দেবে। কিন্তু তারা ফ্ল্যাটে থাকবে। শুধু বড়লোকেরাই ফ্ল্যাটে থাকবে সেটা হতে পারে না, আমাদের রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিন মজুররাও ফ্ল্যাটে থাকবে।

শনিবার (২৫ মে) সকালে রাজধানীর বঙ্গবাজারে ১০ তলা বঙ্গবাজার পাইকারি মার্কেটসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, স্বল্প ভাড়া, কেউ যদি প্রতিদিন ভাড়া দিতে চায়, সেই ব্যবস্থা আছে। কেউ যদি সাত দিনের ভাড়া দিতে চায়, সে ব্যবস্থা আছে। কেউ মাসের ভাড়া দিতে চাইলে সে ব্যবস্থাও হবে। আমরা ইতিমধ্যে ৩০০ পরিবার তুলেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় কোনো কাঁচা বস্তি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকবে না। সুন্দর পরিবেশে সবাই বসবাস করবে। সেই ব্যবস্থা করে দেবো। এই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। মানুষের কল্যাণে কাজ করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করি।

সরকারপ্রধান বলেন, চারটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এই এলাকার বিশেষ করে পুরান ঢাকার মানুষ উপকৃত হবে এবং তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে। এই প্রকল্পগুলো নতুনভাবে বাঁচার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।

তিনি বলেন, বর্ধিত ঢাকার জনগণ যেন যথাযথ সেবা পেতে পারে সেজন্য নগরীকে তিনি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এই দুটি অংশে ভাগ করেন। যেগুলো ইউনিয়ন ছিল সেগুলোকেও সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নিয়ে এসে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকানাবিহীন পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণে তাঁর সরকার আবাসিক ফ্ল্যাট ও সম্মানজনক পদবীর ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরের পূর্ব-পশ্চিমে রাস্তাই ছিল না। তাঁর সরকার সেসব রাস্তা, ওভারপাস, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, বাঁধের ওপর রাস্তা, বুড়িগঙ্গা বেড়িবাঁধ করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।

তিনি বলেন, আন্তঃজেলা যোগাযোগ সহজ করতে আমরা ঢাকায় একটি রিং-রোড নির্মাণ করতে চাই।

সরকারপ্রধান বলেন, ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগার এখান থেকে সরিয়ে কেরানীগঞ্জ নেওয়া হয়েছে। পুরাতন কেন্দ্রিয় কারগারে যেখানে জাতির পিতা দীর্ঘদিন বিভিন্ন সময় বন্দি ছিছেন, যেখানে জাতীয় চারনেতাকে হত্যা করা হয়েছে এবং ফাঁসির মঞ্চ যেখানে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর হাজার হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার সৈনিক, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি দিয়েছিল। আর ব্রিটিশ আমল থেকেই অনেক দেশপ্রেমিককে সেখানে ফাাঁসি দেওয়া হয় সেই জায়াগাটিসহ সকল স্থানের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে স্কুল এবং পার্ক করে সৌন্দর্যবর্ধন এবং বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ঠিক একইভাবেই এই এলাকার মানুষ যাতে ভালভাবে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থাও করেছি।’

শেখ হাসিনা বঙ্গবাজার পুনর্নিমাণের পর ব্যবসা চালু রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, এরআগে তিনি মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবাজার বাজারের ব্যবসায়ীদের অনুদান দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকার সঙ্গে তার একটা আলাদা নাড়ির টান রয়েছে। কাজেই এই অঞ্চলের মানুষরা ভালো থাকুক সেটাই তার লক্ষ্য।

অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হন। তার পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় এসে প্রথমেই তারা ৮/৩ রজনীবোস লেনের একটি বাড়িতে ওঠেন। এরপর বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হলে মিন্টু রোডে চলে আসেন। ৯২ এর ‘ক’ ধারায় জরুরি আইন জারি করা হলে ১৪ দিনের নোটিশে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। ৭৯ নম্বর নাজিরা বাজারে অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ফুপুর বাড়িতে তারা দীর্ঘদিন ছিলেন। মাঝে বন্যা হলে আরমানিটোলার বাঘওয়ালা বাড়িতেও (স্থানীয়রা বলতো) ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার জন্ম ঢাকার মিটফোর্ড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আর ছোট ভাই শেখ রাসেলের জন্ম ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে।

সরকার প্রধান বলেন, মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের শুরুটা যেন চানখারপুল থেকে হতে পারে, সরকারে আসার পর তিনিই তার ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়া আজ যে প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো, সেগুলো বাস্তবায়ন হলেও এলাকার মানুষই লাভবান হবে। তারা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে, চলতে পারবে।

তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বলেন, এটি একটি প্রাইমারি স্কুল ছিল। পরে উচ্চমাধ্যমিক স্কুল এবং সেখান থেকে কলেজ হয়। আর এখন বিশ্ববিদ্যালয়। এতটুকু জায়গা, বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ছিটানো হোস্টেল। এগুলো সব একত্রিত করে একটি ভাললো ক্যাম্পাস এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত করে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আবাসস্থল নির্মাণ করে শিক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তার সরকার। ইতোমধ্যে জায়গা ও নকশা করা হয়ে গেছে। সেকাজও শিগগির শুরু হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সেভাবে নতুন ক্যাম্পাস আমরা করে দেবো— যাতে একটা সুস্থ পরিবেশে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে।

সরকারপ্রধান বলেন, ইতোমধ্যে তার সরকার ঢাকার মানুষের যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছে। এক সময় বিদ্যুত থাকতো না, পানিও থাকতো না। আপনাদের মনে আছে, সেই বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে মানুষের আন্দোলনে বিএনপি’র এক নেতা (স্থানীয় এমপি) জনগণের ধাওয়াও খেয়েছিল। কিন্তু তার সরকার ঢাকাবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন করেছে। সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং মানুষের বিদুতের ব্যাহারও বেড়েছে। তিনি এই সময় নিজ নিজ পানির ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার রাখাসহ বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে মশার উপদ্রব থেকে বাাঁচার জন্য পানি জমে থাকা জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পানির ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি এই সময় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও সবার সহযোগিতা চান। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে নিদিষ্টি জায়গায় ফেলার এবং সিটি করপোরেশনকেও তিনি দ্রুত এগুলো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এই সময় তিনি আসন্ন কোরবানির ঈদে যেখানে সেখানে পশু কোরবানি না দেওয়ার জন্যও নগরবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে শুধু সিটি করপোরেশনে নয়, সমগ্র বাংলাদেশেই তার নির্দেশ রয়েছে— প্রত্যেক জায়গায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ব্যবস্থা গড়ে তোলার।

তার সরকার ঢাকা শহরের জলাধারগুলো উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে যত্রতত্র পুকুর-খাল, জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা তৈরি না করার জন্য নগর পরিকল্পনাবিদদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। অতীতের সরকারগুলো পুকুর, খাল-বিল ভরাট করে স্থাপনা বা বক্স কালভার্ট নির্মাণ করায় খাল-বিল-পুকুরে ভরা ঢাকা শহরের বাতাসও এখন ভারী হয়ে উঠেছে, পানি সরার কোনও জায়গা থাকছে না।

তিনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং মাদক থেকে সবাইকে দূরে থাকার এবং সিটি করপোরেশনের পার্কগুলো যেন মাদক সেবনে ব্যবহার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যও সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সরকারে এসে ভারতের সেভেন সিস্টারে (সাত রাজ্য) শান্তি প্রতিষ্ঠায় উলফাসহ বিচ্ছি ন্নতাবাদী গ্রুপের কাছে বাংলাদেশ থেকে অস্ত্র চোরাচালানের রুট বন্ধ করেছি।

টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর এই বাংলাদেশে অস্ত্র চোরাকারবারির যে রুট সেটা আমরা বন্ধ করেছি। ভারতে উলফা থেকে শুরু করে যেখানে যেখানে যারা অস্ত্র সাপ্লাই দিতো সেগুলো আমরা বন্ধ করেছি, তাদেরও যাতে শান্তি আসে। তাদের ওই সেভেন সিস্টারেও যেন শান্তি আসে, সেই ব্যবস্থাটা কিন্তু আওয়ামী লীগ করেছে; এটা সব থেকে বড় কাজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে ছিটমহল সেটাও বিনিময় করে সারা বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বিশাল সমুদ্রসীমা আমরা জয় করেছি। যারা আগে ক্ষমতায় ছিল তারা (বিএনপি) তো এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগই নেয়নি। জানতোই না।

বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা আসছিল লুটপাট করতে, দুর্নীতি করতে, অস্ত্র চোরাকারবারি করতে, সে কাজেই ব্যস্ত ছিল, আর মানুষ খুন করতে।

তিনি বলেন, এই দেশটাকে তারা কোথায় নিয়ে গিয়েছিল, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, অস্ত্র চোরাকারবারি; ওই তারেক জিয়া তো অস্ত্র চোরাকারবার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ওখানে বসে (লন্ডনে) এখন নানাভাবে ওই অগ্নিসন্ত্রাস দিয়ে মানুষ মারা, মানুষ খুন করা, আগুন দিয়ে মানুষকে পড়ানো এসব কাজ করে বেড়ায়।

টানা তিন মেয়াদী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রেখে আমরা এগিয়ে যাব।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এতে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম।

 

আবহাওয়া

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ৮ কর কর্মকর্তা বরখাস্ত

ঢাকার বস্তিবাসী-রিকশাওয়ালা-দিনমজুর সবাই ফ্ল্যাটে থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৩:৩৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকার বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিচ্ছি। যে বস্তিতে যেরকম ভাড়া সেরকম ভাড়াই দেবে। কিন্তু তারা ফ্ল্যাটে থাকবে। শুধু বড়লোকেরাই ফ্ল্যাটে থাকবে সেটা হতে পারে না, আমাদের রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিন মজুররাও ফ্ল্যাটে থাকবে।

শনিবার (২৫ মে) সকালে রাজধানীর বঙ্গবাজারে ১০ তলা বঙ্গবাজার পাইকারি মার্কেটসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, স্বল্প ভাড়া, কেউ যদি প্রতিদিন ভাড়া দিতে চায়, সেই ব্যবস্থা আছে। কেউ যদি সাত দিনের ভাড়া দিতে চায়, সে ব্যবস্থা আছে। কেউ মাসের ভাড়া দিতে চাইলে সে ব্যবস্থাও হবে। আমরা ইতিমধ্যে ৩০০ পরিবার তুলেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় কোনো কাঁচা বস্তি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকবে না। সুন্দর পরিবেশে সবাই বসবাস করবে। সেই ব্যবস্থা করে দেবো। এই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। মানুষের কল্যাণে কাজ করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করি।

সরকারপ্রধান বলেন, চারটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এই এলাকার বিশেষ করে পুরান ঢাকার মানুষ উপকৃত হবে এবং তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে। এই প্রকল্পগুলো নতুনভাবে বাঁচার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।

তিনি বলেন, বর্ধিত ঢাকার জনগণ যেন যথাযথ সেবা পেতে পারে সেজন্য নগরীকে তিনি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এই দুটি অংশে ভাগ করেন। যেগুলো ইউনিয়ন ছিল সেগুলোকেও সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নিয়ে এসে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকানাবিহীন পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণে তাঁর সরকার আবাসিক ফ্ল্যাট ও সম্মানজনক পদবীর ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরের পূর্ব-পশ্চিমে রাস্তাই ছিল না। তাঁর সরকার সেসব রাস্তা, ওভারপাস, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, বাঁধের ওপর রাস্তা, বুড়িগঙ্গা বেড়িবাঁধ করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।

তিনি বলেন, আন্তঃজেলা যোগাযোগ সহজ করতে আমরা ঢাকায় একটি রিং-রোড নির্মাণ করতে চাই।

সরকারপ্রধান বলেন, ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগার এখান থেকে সরিয়ে কেরানীগঞ্জ নেওয়া হয়েছে। পুরাতন কেন্দ্রিয় কারগারে যেখানে জাতির পিতা দীর্ঘদিন বিভিন্ন সময় বন্দি ছিছেন, যেখানে জাতীয় চারনেতাকে হত্যা করা হয়েছে এবং ফাঁসির মঞ্চ যেখানে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর হাজার হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার সৈনিক, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি দিয়েছিল। আর ব্রিটিশ আমল থেকেই অনেক দেশপ্রেমিককে সেখানে ফাাঁসি দেওয়া হয় সেই জায়াগাটিসহ সকল স্থানের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে স্কুল এবং পার্ক করে সৌন্দর্যবর্ধন এবং বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ঠিক একইভাবেই এই এলাকার মানুষ যাতে ভালভাবে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থাও করেছি।’

শেখ হাসিনা বঙ্গবাজার পুনর্নিমাণের পর ব্যবসা চালু রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, এরআগে তিনি মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবাজার বাজারের ব্যবসায়ীদের অনুদান দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকার সঙ্গে তার একটা আলাদা নাড়ির টান রয়েছে। কাজেই এই অঞ্চলের মানুষরা ভালো থাকুক সেটাই তার লক্ষ্য।

অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হন। তার পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় এসে প্রথমেই তারা ৮/৩ রজনীবোস লেনের একটি বাড়িতে ওঠেন। এরপর বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হলে মিন্টু রোডে চলে আসেন। ৯২ এর ‘ক’ ধারায় জরুরি আইন জারি করা হলে ১৪ দিনের নোটিশে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। ৭৯ নম্বর নাজিরা বাজারে অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ফুপুর বাড়িতে তারা দীর্ঘদিন ছিলেন। মাঝে বন্যা হলে আরমানিটোলার বাঘওয়ালা বাড়িতেও (স্থানীয়রা বলতো) ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার জন্ম ঢাকার মিটফোর্ড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আর ছোট ভাই শেখ রাসেলের জন্ম ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে।

সরকার প্রধান বলেন, মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের শুরুটা যেন চানখারপুল থেকে হতে পারে, সরকারে আসার পর তিনিই তার ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়া আজ যে প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো, সেগুলো বাস্তবায়ন হলেও এলাকার মানুষই লাভবান হবে। তারা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে, চলতে পারবে।

তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বলেন, এটি একটি প্রাইমারি স্কুল ছিল। পরে উচ্চমাধ্যমিক স্কুল এবং সেখান থেকে কলেজ হয়। আর এখন বিশ্ববিদ্যালয়। এতটুকু জায়গা, বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ছিটানো হোস্টেল। এগুলো সব একত্রিত করে একটি ভাললো ক্যাম্পাস এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত করে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আবাসস্থল নির্মাণ করে শিক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তার সরকার। ইতোমধ্যে জায়গা ও নকশা করা হয়ে গেছে। সেকাজও শিগগির শুরু হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সেভাবে নতুন ক্যাম্পাস আমরা করে দেবো— যাতে একটা সুস্থ পরিবেশে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে।

সরকারপ্রধান বলেন, ইতোমধ্যে তার সরকার ঢাকার মানুষের যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছে। এক সময় বিদ্যুত থাকতো না, পানিও থাকতো না। আপনাদের মনে আছে, সেই বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে মানুষের আন্দোলনে বিএনপি’র এক নেতা (স্থানীয় এমপি) জনগণের ধাওয়াও খেয়েছিল। কিন্তু তার সরকার ঢাকাবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন করেছে। সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং মানুষের বিদুতের ব্যাহারও বেড়েছে। তিনি এই সময় নিজ নিজ পানির ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার রাখাসহ বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে মশার উপদ্রব থেকে বাাঁচার জন্য পানি জমে থাকা জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পানির ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি এই সময় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও সবার সহযোগিতা চান। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে নিদিষ্টি জায়গায় ফেলার এবং সিটি করপোরেশনকেও তিনি দ্রুত এগুলো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এই সময় তিনি আসন্ন কোরবানির ঈদে যেখানে সেখানে পশু কোরবানি না দেওয়ার জন্যও নগরবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে শুধু সিটি করপোরেশনে নয়, সমগ্র বাংলাদেশেই তার নির্দেশ রয়েছে— প্রত্যেক জায়গায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ব্যবস্থা গড়ে তোলার।

তার সরকার ঢাকা শহরের জলাধারগুলো উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে যত্রতত্র পুকুর-খাল, জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা তৈরি না করার জন্য নগর পরিকল্পনাবিদদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। অতীতের সরকারগুলো পুকুর, খাল-বিল ভরাট করে স্থাপনা বা বক্স কালভার্ট নির্মাণ করায় খাল-বিল-পুকুরে ভরা ঢাকা শহরের বাতাসও এখন ভারী হয়ে উঠেছে, পানি সরার কোনও জায়গা থাকছে না।

তিনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং মাদক থেকে সবাইকে দূরে থাকার এবং সিটি করপোরেশনের পার্কগুলো যেন মাদক সেবনে ব্যবহার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যও সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সরকারে এসে ভারতের সেভেন সিস্টারে (সাত রাজ্য) শান্তি প্রতিষ্ঠায় উলফাসহ বিচ্ছি ন্নতাবাদী গ্রুপের কাছে বাংলাদেশ থেকে অস্ত্র চোরাচালানের রুট বন্ধ করেছি।

টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর এই বাংলাদেশে অস্ত্র চোরাকারবারির যে রুট সেটা আমরা বন্ধ করেছি। ভারতে উলফা থেকে শুরু করে যেখানে যেখানে যারা অস্ত্র সাপ্লাই দিতো সেগুলো আমরা বন্ধ করেছি, তাদেরও যাতে শান্তি আসে। তাদের ওই সেভেন সিস্টারেও যেন শান্তি আসে, সেই ব্যবস্থাটা কিন্তু আওয়ামী লীগ করেছে; এটা সব থেকে বড় কাজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে ছিটমহল সেটাও বিনিময় করে সারা বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বিশাল সমুদ্রসীমা আমরা জয় করেছি। যারা আগে ক্ষমতায় ছিল তারা (বিএনপি) তো এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগই নেয়নি। জানতোই না।

বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা আসছিল লুটপাট করতে, দুর্নীতি করতে, অস্ত্র চোরাকারবারি করতে, সে কাজেই ব্যস্ত ছিল, আর মানুষ খুন করতে।

তিনি বলেন, এই দেশটাকে তারা কোথায় নিয়ে গিয়েছিল, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, অস্ত্র চোরাকারবারি; ওই তারেক জিয়া তো অস্ত্র চোরাকারবার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ওখানে বসে (লন্ডনে) এখন নানাভাবে ওই অগ্নিসন্ত্রাস দিয়ে মানুষ মারা, মানুষ খুন করা, আগুন দিয়ে মানুষকে পড়ানো এসব কাজ করে বেড়ায়।

টানা তিন মেয়াদী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রেখে আমরা এগিয়ে যাব।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এতে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম।