শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:২০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

ডিটিসিএ-এর কাজের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ সেতুমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০
ডিটিসিএ-এর কাজের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ সেতুমন্ত্রীর
ফাইল ছবি

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) কাজের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, শুধু সমীক্ষা আর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্যে ঘুরপাক খায়। যে কাজই দেয়া হয়, শুধু সমীক্ষা আর সমীক্ষা। কাজ হতে দেখি না। র‌্যাপিড পাস আর ক্লিয়ারিং হাউজের কাজের দ্বিতীয় পর্যায়েও একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

 

মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) ডিটিসিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থিত সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন তিনি।

 

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, বলতে গেলে এ নগরীতে ফুটপাত নেই। পথচারীরা হাঁটার জন্য যে ফুটপাত, সেটা বেদখলে। ঢাকা সিটি কলেজ হতে সাতমসজিদ রোড হয়ে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড় পর্যন্ত পথচারীবান্ধব একটি ফুটপাত নির্মাণের উদ্যোগটি এখনো সমীক্ষা কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ। কবে শেষ হবে সমীক্ষা? কখন প্রকল্প নেয়া হবে? আর কখন কাজ হবে জানি না। ডিটিসিএ শুধু সমীক্ষা আর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্যে ঘুরপাক খায়। যে কাজই দেয়া হয়, শুধু সমীক্ষা আর সমীক্ষা। কাজ হতে দেখি না।

 

তিনি বলেন, র্যাপিড পাস আর ক্লিয়ারিং হাউজের কাজের দ্বিতীয় পর্যায়ও একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। র‌্যাপিড পাস উদ্বোধন করেছিলাম, কিন্তু কার্যকারিতা দেখছি না। তখন তো বলা হয়েছিল রুটে সবাই এ কার্ড ব্যবহার করবে। তাহলে এখন করছে না কেন? নিশ্চয়ই আপনাদের পরিকল্পনা জনবান্ধব ও যাত্রীবান্ধব ছিল না, যতটা প্রত্যাশা ছিল।

মন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে ডিটিসিএ। শুরুর দিকে এটি ডিটিসিবি বা একটি বোর্ডের আওতায় পরিচালিত হতো। পরবর্তী সময়ে সরকার আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ডিটিসিএ গঠন করে। জনবহুল এবং ক্রমবর্ধমান ঢাকা মহানগরীর যানবাহন ব্যবস্থাপনায় ডিটিসিএর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের জনবল বাড়ানো হয়েছে। আমি প্রথমেই সমন্বয়ের কথা বলতে চাই।

আরও পড়ুন : গণপরিবহনের ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত শিগগিরিই : ওবায়দুল কাদের

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় সড়ক উন্নয়ন ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি প্রকল্প যেন আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আরএসটিপির সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়। কোনো একটি প্রকল্প যদি আরএসটিপির সঙ্গে সমন্বিত না হয়, তাহলে নগরবাসীর উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে।

 

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরীর যানজট ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। দীর্ঘদিন থেকে ডিটিসিএ কাজ করছে রুট রেশনালাইজেশনের জন্য। বাসগুলোকে কোম্পানিতে রূপান্তরের মাধ্যমে পরিচালনা করার প্রথম আলোচনা শুরু হয় মরহুম মেয়র আনিসুল হকের সময়। এরপর দায়িত্ব দেয়া হয় সাঈদ খোকন সাহেবকে। কিন্তু কতদূর এগোল? নগরবাসী তো এখনো কিছু দেখতে পেল না। কয়টি সভা হলো, সেটা বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে উদ্যোগটাকে দৃশ্যমান করা।

কাদের বলেন, বোর্ডসভায় নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের জন্য পরিবহন মাস্টারপ্ল্যান করার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেটাও এখন পর্যন্ত ডিপিইসি সভায় আটকে আছে। চট্টগ্রামের পরিবহন মাস্টারপ্ল্যানও বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই, একটি কাজ শুরু করলেন, কিন্তু শেষ করতে না পারলে এর সফলতা কোথায়? চট্টগ্রাম মেট্রো রেল চালুর বিষয়ে অর্থায়নকারী সংস্থা নির্বাচনে ইআরডির প্রতি আমি আহ্বান জানাচ্ছি। এ কাজ আমাদের দ্রুত এগিয়ে নেয়া দরকার।

 

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ঢাকা মহানগরীতে চলছে মেট্রোরেলের কাজ, শহরের প্রধান সড়কটির একাংশজুড়ে ছোট হয়ে এসেছে। তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ দক্ষতার সঙ্গেই ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করছে। পাশাপাশি চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।

 

ওইদিকে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত চলছে বিআরটির কাজ। এখন যদি এয়ারপোর্ট হতে সদরঘাট পর্যন্ত বিআরটির অন্য অংশের কাজ শুরু হয়, এ শহর অচল হয় পড়বে। শহরের প্রধান আর্টারি সংকুচিত হলে জনভোগান্তি বাড়বে। নির্মাণকালে স্থবির হয়ে পড়বে পুরো করিডোর।

 

তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আপনারা টেবিলে বসে ভাবলে হবে না। বাস্তবায়ন অনুধাবন করতে চারটি প্রকল্প আপনারা বাস্তবায়ন করছেন। আমি প্রতিবেদন দেখলাম। একটির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আরেকটি এক বছর বাড়ানো হয়েছে, তৃতীয়টি ২০১৯ সালে অনুমোদনের পর মাত্র পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, চতুর্থটিতে বলা হয়েছে, আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। সবগুলোয় করোনাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে।

 

মঙ্গলবার হতে গণপরিবহন করোনাকালের জন্য সমন্বয় করা ভাড়ার পরিবর্তে আগের ভাড়ায় ফিরছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জনস্বার্থে এবং যাত্রীদের স্বার্থে আমি সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতা কামনা করছি। গণপরিবহনে ভ্রমণকালে যাত্রীসহ পরিবহনসংশিষ্ট সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। যত আসন তত যাত্রী, অর্থাৎ দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। সাবানের পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে পর্যাপ্ত। এছাড়া ট্রিপের শুরু এবং শেষে পরিবহনকে ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

 

তিনি বলেন, সারা দেশে পরিবহনসংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি জনস্বার্থে এ নিয়ম বা শর্ত মেনে বাস-মিনিবাস চালনার অনুরোধ করছি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে ডিএমপি, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সক্রিয় থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। অনেক পরিবহন নিয়ম মেনে গাড়ি চালায় না। করোনাকালেও অনেকে নিয়ম মেনে চলেছে। কিন্তু কিছু কিছু পরিবহন, যারা সরকারি নির্দেশনা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া