বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন

ডিজাইনে ‘ত্রুটি’ : উদ্বোধনে পদ্মা সেতুতে রেল চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০
ডিজাইনে ‘ত্রুটি’ : উদ্বোধনে পদ্মা সেতুতে রেল চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা
পদ্মা সেতুতে রেল লাইনের কাজ চলছে

পদ্মাসেতুর রেললাইন ডিজাইনে মারাত্মক ‘ত্রুটি’ দেখা দিয়েছে। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের ডিজাইনের ভুলে সেতু দিয়ে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। সেতুর দুই প্রান্তে রাস্তার ওপর দিয়ে টানা হচ্ছে রেললাইন। কিন্তু লাইনের উচ্চতা এত কম যে নিচের হেডরুম দিয়ে বেশি উচ্চতার যানবাহন সেতুতে ওঠানামা করতে পারবে না।

বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ায় রেললাইনের কাজে আপত্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। কোনো বাধা-বিপত্তি না এলে আগামী বছরের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এরই মধ্যে পদ্মাসেতুর রেললাইন ডিজাইনে মারাত্মক ‘ত্রুটি’ দেখা দেয়ায় নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে ডিজাইন ক্রটির কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রেললাইনের কাজ। সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পের শুরুতে রেলওয়েকে ডিজাইন দেওয়ার পরও তারা মারাত্মক এই ভুল করেছে। এর দায় সেতু কর্তৃপক্ষ নেবে না। রেল মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রকল্পটি নিয়ে দু’দফা বৈঠক করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিতে রাজি হননি রেল মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা।

সেতু কর্তৃপক্ষ সচিব মো. বেলায়েত হোসেন সোমাবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। এখন রেলওয়েকে তাদের ডিজাইন সংশোধন করতে হবে।

মূল পদ্মাসেতুর ভেতরে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজ করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। তবে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেতুর দুই পাড়ের রেল লাইন নিয়ে, যা ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত এবং পদ্মাসেতুর ওই পারে জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি পদ্মা রেল লিংক প্রকল্প নামে পরিচিত, যার কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ।

আরও পড়ুন : হানিফ ফ্লাইওভারের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিক হয়নি : মেয়র তাপস

পদ্মাসেতু সূত্র জানায়, পদ্মাসেতুতে ওঠার এক প্রান্ত মাওয়া এবং অন্য প্রান্ত জাজিরায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। দুই পাশের কিছু অংশে রেললাইন ওপর দিয়ে গেছে। এসব জায়গায় হেডরুম যে উচ্চতায় দেওয়ার কথা, সেটি দেয়নি রেলওয়ে। এ অবস্থায় সেতুতে ওঠানামা করতে পারবে না বড় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলো।

বিষয়টি নিয়ে রেলসংযোগ প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দি এ. চৌধুরী বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পরে সরাসরি তার অফিস কক্ষে গিয়েও ওই প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে রেলসচিবের বক্তব্য নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আপত্তি দিয়েছি। হরিজন্টাল ও ভার্টিক্যাল- দু’টো দিকেই রেলওয়ের কাজে আপত্তি দেওয়া হয়েছে। দেশের সড়কপথের হেডরুম স্ট্যান্ডার্ড হলো-হরিজন্টাল ১৫ মিটার, ভার্টিক্যাল ৫ দশমিক ৭ মিটার, যা এখানে মানা হয়নি।
এ অবস্থায় ভবিষ্যতে গাড়ি চলতে সমস্যা হলে তার দায় কে নেবে? প্রশ্ন রাখেন প্রকল্প পরিচালক।

দেশে মহাসড়কগুলোতে নিয়ম অনুযায়ী হেডরুম উচ্চতা রাখতে হয় সবনিম্ন ৫ দশমিক ৭ মিটার। কিন্তু পদ্মা রেললিংক প্রকল্পে মাত্র ৪ দশমিক ৮ মিটার উচ্চতা দেওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। অর্থাৎ পদ্মাসেতুর উভয় প্রান্তের হেডরুম উচ্চতা প্রায় এক মিটার কম। এই উচ্চতায় রেললাইন গেলে নিচে সড়কপথে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান আটকে যাবে। এমনকি এর জন্য দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে আসা কোনো কনটেইনার ট্রাক এই উচ্চতায় পদ্মাসেতুতে উঠতে পারবে না।

জানা গেছে, রেললিংক প্রকল্প নিয়ে গত সপ্তাহে পর্যালোচনা বৈঠক হয় রেলওয়েতে। সেই বৈঠকে পদ্মাসেতু চালুর দিন রেল চালু নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানান রেললিংক প্রকল্প পরিচালক গোলাম এ ফকরুদ্দিন। এমনিতেই শুরু থেকে পিছিয়ে রয়েছে পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প। এখন নতুন করে এই সমস্যা দেখা দেওয়ায় প্রকল্প আরও পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া