নিজস্ব প্রতিবেদক :
ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে এবার ভাইকে হত্যার অভিযোগ আনলেন তাঁর ছোট বোন শাযরেহ হক।
শুক্রবার (২২ মার্চ) গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
তাতে আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীম জানিয়েছেন।
ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে মামলার অভিযোগে বলেছেন, তাঁর বড় বোন সিমিন রহমানসহ আসামিরা তাঁর বড় ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে বিষ প্রয়োগ/শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন, সিমিন রহমানের ছেলে ও ট্রান্সকম লিমিটেডের হেড অব ট্রান্সফরেশন যারাইফ আয়াত হোসেন, করপোরেট অ্যাফেয়ারসের (আইন) নির্বাহী পরিচালক মো. ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া (৬০), করপোরেট ফাইনান্সের পরিচালক মো. কামরুল হাসান (৬১), করপোরেট অ্যাফেয়ার্সের ম্যানেজার সেলিনা সুলতানা (৪৫), করপোরেট অ্যাফেয়ার্সের ম্যানেজার কেএইচ মো. শাহাদত হোসেন (৫০), এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের ম্যানেজার (মেডিক্যাল অ্যাফেয়ার্স) ডা. মুরাদ (৫০), মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডা. মো. মুজাহিদুল ইসলাম (৫৫), মো. জাহিদ হোসেন (৫৫), রফিক (৫৫) ও মিরাজুল (৪০)।
আরশাদ ওয়ালিউর রহমান গত বছরের ১৬ জুন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান।
এর আগে কোম্পানির সম্পত্তি ও শেয়ার-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বড় বোন ও গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান মা শাহনাজ রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন শাযরেহ। তাতে আরও অনেককে আসামি করা হয়।
ওই মামলায় বিশ্বাসভঙ্গ, জালিয়াতি ও দলিল জালের মাধ্যমে শাযরেহ ও তার প্রয়াত ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে ১০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পারিবারিক সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ করা হয়।
পুলিশ ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এরই মধ্যে মামলার আসামি ট্রান্সকম গ্রুপের পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
তাঁরা হলেন প্রতিষ্ঠানের আইন উপদেষ্টা ফখরুজ্জামান ভুইয়া, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) কামরুল হাসান, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) আব্দুল্লাহ আল মামুন, ম্যানেজার আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিক এবং সহকোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক।
মামলার এজাহারে শাযরেহ হক বলেন, মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী তিনিসহ তাঁর মৃত বড় ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমান (৫৭) এবং মামলার এক নম্বর আসামি সিমিন রহমান তাঁর পিতার সকল স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির ওয়ারিশ। লতিফুর রহমানের স্থাবর সম্পত্তিসহ তাঁর প্রতিষ্ঠা করা ট্রান্সকম গ্রুপের শেয়ার এবং পজিশন নিজেদের অনুকূলে হস্তগত করাসহ তাঁকে (শাযরেহ) এবং তাঁর বড় ভাইকে (আরশাদ) সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করে সম্পত্তি আত্মসাৎ করেন সিমিন রহমান ও তাঁর ছেলে যারাইফ আয়াত হোসেন।
তাঁদের জাল জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত বছরের ৮ জুন আরশাদ ওয়ালিউর রহমান পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি প্রদান করেন। এতে সিমিন রহমান আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের ওপর ক্ষিপ্ত হন। তখন তিনি জীবনের নিরাপত্তার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এর ৮ দিন পর গত ১৬ জুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আরশাদ। আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশান-২ এর নিজের বাসার শয়ন কক্ষে মৃত ও চিৎ অবস্থায় দেখতে পান। যদিও তাঁর শরীরে কোনো জটিলতা রোগ ছিল না।
মামলার এজাহারে শাযরেহ হক আরও বলেন, ঘটনাস্থলে সকল আসামিকে তিনি দেখতে পান। কিন্ত তাঁর মারা যাওয়ার কথা বা অসুস্থতার কথা কেউই জানাননি। পরে দ্রুত তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে মৃত্যুর সনদপত্র নেওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করেন এবং সেদিন বিকেলেই দাফন করেন।
শাযরেহ হক মামলায় উল্লেখ করেছেন, হাসপাতালে চিকিৎসকেরা সিমিন রহমানের উদ্দ্যেশে বলেছেন, উনি অনেক আগেই মারা গেছেন। কেন তাঁকে এত পরে হাসপাতালে আনা হলো? তখন পারিবারিক চিকিৎসক ডা. মুরাদ হাসপাতাল প্রশাসনকে বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ রিপোর্ট করার প্রয়োজন নেই।
শাযরেহ হক আরও উল্লেখ করেছেন, তিনি মনে করেন ১১ জন আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিগণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে তাঁদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির ওয়ারিশ থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে তাঁর বড় ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে বিষ প্রয়োগ বা শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে, যা আসামিদের আচরণে প্রকাশ পেয়েছে।