শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন

টিপু সুলতানের বংশধর নোরা স্থান পাচ্ছেন বৃটিশ মুদ্রায়

যোগাযোগ ডেস্ক
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০
টিপু সুলতানের বংশধর নোরা স্থান পাচ্ছেন বৃটিশ মুদ্রায়
নোরা ইনায়েত খান

বৃটিশ মুদ্রায় স্থান পাচ্ছেন বৃটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসনকর্তা, শের-ই-মহীশূর টিপু সুলতানের বংশধর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বৃটিশ গুপ্তচর নোরা ইনায়েত খান।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী জেহরা জাইদার ‘জাতিগত সংখ্যালঘু ব্যক্তিদের বৃটেনের মুদ্রায় স্থান দেয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছেন বৃটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সোনাক। তিনি বলেছেন, নানা জাতির মানুষের বসবাসে সমৃদ্ধ বৈচিত্র্যময় বৃটেনের কালো, এশীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু (বিএএমই) প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইতিহাস ‘সার্ভিস টু দ্যা নেশন’ শিরোনামে বৃটেনের মুদ্রায় স্থান দেয়ার জন্য কিছু প্রস্তাব কার্যকর করার উদ্দেশ্যে রয়েল মিন্টে (বৃটিশ কয়েন ও মুদ্রা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান) পরিকল্পনা জমা দেয়া হয়েছে।

এ খবর দিয়েছে ডেইলি টেলিগ্রাফ ও টাইমস অফ ইন্ডিয়া।

স্পাই প্রিন্সেস নামে খ্যাত নোরা ইনায়েত খান ওরফে নূর-উন-নিসা ইনায়েত খান ওরফে নোরা বেকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একজন বৃটিশ গুপ্তচর ছিলেন। যিনি স্পেশাল অপারেশন এক্সিকিউটিভ (এসওই) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনিই প্রথম মহিলা বেতার অপারেটর যাকে বৃটেন থেকে ফ্রান্সকে সহযোগিতার জন্য পাঠানো হয়েছিল। পরে একপর্যায়ে তাকে বন্দি করা হয় এবং জার্মানির দাচাউ নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ১৯৪৪ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয়।তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর।

আরও পড়ুন : ভারত সরকার দিল ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ

মৃত্যুর পাঁচ বছর পর বৃটেনের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘জর্জ ক্রস’ প্রদান করা হয়েছিল নূর ইনায়েতকে। লন্ডনের গর্ডন স্কোয়ারে তার একটি আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। নূর ইনায়েতকে শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ ব্লুমসবুরির ৪নং টেবিটন স্ট্রিটে তার বাড়ির সামনে ‘ব্লু প্লাক’ (বিশেষ ব্যক্তিত্বের বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করা) বসানো হবে। যুক্তরাজ্যে তিনিই হবেন প্রথম ভারতীয় নারী যার বাড়ির সামনে ‘ব্লু প্লাক’ বসানো হবে।

এছাড়া তাকে ফ্রান্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্মাননা ‘ক্রোয়া দ্য গ্যার’ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। বৃটেনের ডাকটিকিটেও রয়েছে এই নারী গুপ্তচরের ছবি।

বৃটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সোনাককে দেয়া চিঠিতে কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী জেহরা জাইদা উল্লেখ করেছেন, এই প্রস্তাবনা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে, বিশেষত এখন মহামারির কারণে গোটা জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ। আমাদের স্বাস্থ্য ও সেবাখাত গুলিতে জাতিগত সংখ্যালঘু ব্যক্তিদের বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি দিচ্ছে।

চিঠিতে তিনি বলেন, আমি আশা করবো বৃটেন কালো, এশীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু (বিএএমই) সমপ্রদায়ের অবদানকে মূল্যায়ন করার সুযোগটি হাতছাড়া করবে না। বৃটেনে এই সমপ্রদায়ের মানুষের অবদান অনস্বীকার্য। চিঠিতে অর্থমন্ত্রী ঋষি সোনাককে তাদের ক্যাম্পেইনে সমর্থন করার জন্য অনুরোধ জানান জেহরা জাইদা।?
যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি মন্ত্রী জন গ্লেন টেলিগ্রাফ’কে বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী ঋষি সোনাক এই সময়োচিত প্রস্তাব সমর্থন করতে আগ্রহী। চিঠির বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এবং যথাযথভাবে জবাব দিবেন। ট্রেজারি মন্ত্রী বলেন, আমরা অবশ্যই এ ব্যাপারে ইতিবাচক হতে আগ্রহী।

কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী জেহরা জাইদার ক্যাম্পেইনে সহযোগিতা করছেন স্পাই প্রিন্সেস: দ্য লাইফ অফ নূর ইনায়াত খান বইয়ের লেখক শ্রাবণী বসু, কনজারভেটিভ পার্টির এমপি টম তুজেনডাট এবং গ্রিন পার্টির এমপি ক্যারোলিন লুকাসের মতো রাজনীতিবিদ।

নূর ইনায়াত খান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার শ্রাবণী বসু বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে নূর ইনায়াত খানের গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, নূর ছিলেন এক অসাধারণ যুদ্ধের নায়িকা, একটি আইকন।
নোরা ইনায়েত খান ১৯১৪ সালের ১লা জানুয়ারি রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করলেও তার শৈশবকাল লন্ডনেই কেটেছে। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছু আগে নূরের পরিবার লন্ডনের উদ্দেশ্যে রাশিয়া ত্যাগ করে। ১৯২০ সালে তার পরিবার ফ্রান্সে চলে যায় এবং সেখানেই নূর শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাতের পরে জার্মানি যখন ফ্রান্স আক্রমণ করে তখন নূরের পরিবার সমুদ্রপথে পালিয়ে বৃটেনে প্রবেশ করে। নূর ইনায়েত খানকে রেডিও অপারেটর হিসেবে প্যারিসে কাজ করার জন্য ১৯৪২ সালে অভিজাত স্পেশাল অপারেশন এক্সিকিউটিভ (এসওই) নিয়োগ দেয়া হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনিই প্রথম মহিলা গুপ্তচর যাকে ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছিল। ১৯৪৪ সালের অক্টোবরে ফ্রান্সে নিজের ফ্ল্যাটে গ্রেপ্তার হন নূর। সেখান থেকে তাকে জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাকে বিপজ্জনক বন্দি হিসেবে চিহ্নিত করে নির্জন কারাগারে রাখা হয়।

অবশেষে নূরকে দাচাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয় এবং সেখানে ১৯৪৪ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে জার্মান গেস্টাপো তাকে গুলি করে হত্যা করেছিল।

নূরের বাবা ইনায়েত খান একজন অভিজাত ভারতীয় মুসলিম পরিবার থেকে এসেছিলেন। তিনি সংগীতশিল্পী এবং সুফিবাদের শিক্ষক হিসাবে ইউরোপে থাকতেন। নূরের মা ছিলেন মহীশূর রাজ্যের আঠারো শতকের শাসক টিপু সুলতানের মামার বংশধর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: